বিশেষ প্রতিবেদন : ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী মাদরাসার বার্ষিক ইসলামী জলসায় মাদরাসার মহাপরিচালক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর, শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর একটি বক্তব্য নিয়ে মিডিয়া পাড়া তোলপাড়! নারী সংগঠনগুলোও উঠে পড়ে লেগেছে আল্লামা আহমদ শফীর বিরুদ্ধে!
আল্লামা শাহ আহমদ শফী তাঁর বক্তব্যে বলেছেন-
“মেয়েদেরকে স্কুলে পড়াবেন না, যদিও পড়ান তা হলে ফোর ফাইভ পর্যন্ত পড়াবেন।”
বিভিন্ন মিডিয়া এই বক্তব্যকে ‘মেয়েদের স্কুলে না পড়ার শপথ করালেন আল্লাম শফী’ শিরোনামে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে। ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াতেও এ বিষয়ে টকশো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক চলছে তুমুল। ইতোমধ্যেই আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পক্ষ থেকে বিবৃতি এসেছে। সেখানে তিনি বলেছেন-
“স্কুলে পড়তে নিষেধ করেননি, বরং পরিবেশ যদি মেয়েদের অনুকূলে না হয়, তাহলে স্কুলে পড়াবেন না।”
এখন দেখার বিষয় আল্লামা আহমদ শফীর বক্তব্য নারীবিদ্বেষী নাকি নারীর সম্মান বাঁচানোর বক্তব্য।
বিশ্লেষণ করা যাক-
বর্তমান যে শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে, তাতে কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে না এই শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে যুবক-যুবতী বা শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠন হচ্ছে। মাঝে মাঝেই মিডিয়ার কল্যাণে জানতে পারি স্কুল কলেজ ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীরা মাদক নেশায় আসক্তি হয়ে পড়ছে! ৬-৭ বছরের বাচ্চারা পর্যন্ত আড়ালে আবডালে লুকিয়ে ধূমপান করছে!
আনুকূল্য পরিবেশ না থাকায় যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে মেয়েরা। এমনকি শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী এবং ছাত্র কর্তৃক শিক্ষিকা ধর্ষিত হওয়ার ঘটনাও কম দেখিনি। এসবের বড় স্বাক্ষী তো মিডিয়াই! কিন্তু মিডিয়াই আবার কেন আল্লামা আহমদ শফীর বিরুদ্ধে লেগেছে বোধগম্য নয়। পরিবেশ এতটাই ঘোলাটে যে, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাযর এমন করুণ দশা হয়ে দাঁড়িয়েছে, চরিত্র গঠন তো হচ্ছেই না, এমনকি শিক্ষাটাও ঠিকঠাকভাবে হচ্ছে না! আপনারা জানেন বর্তমানে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়! একটি টিভি রিপোর্টে আপনারা দেখেছেন, সম্ভবত একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা দিবসে কলেজ ভার্সিটির ছাত্ররা একুশ ফেব্রুয়ারি কী দিবস তা বলতে পারেনি। এমনকি বিজয় দিবস স্বাধীনতা দিবসকেও গুলিয়ে ফেলে! জিপি-এ ফাইভ পাওয়া শিক্ষার্থীরা জিপি-এ ফাইভের পূর্ণরূপ জানে না! এগুলো নকলের প্রভাব!
ওলামায়ে কেরাম ও আল্লামা আহমদ শফী ইসলামের সেই সুমহান আদর্শ বুকে ধারণ করে দিনের পর দিন ছুটে বেড়াচ্ছেন দ্বারে দ্বারে। কথা বলছেন নারীদের সম্মান নিয়ে। নারীর ইজ্জত অধিকার নিয়ে ওলামায়ে কেরাম থেকে কেউ বেশি বলে৷ না। ওলামায়ে কেরাম কর্তৃক কোনো নারী যৌন হয়রানীর শিকার হয়নি। যারা আল্লামা আহমদ শফীর বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, জানি না তারা কি নারীর ইজ্জতের পক্ষে নাকি নারীকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে চায় জানি না। তারা নারীর কল্যাণকামী হলে আল্লামা আহমদ শফীর বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে দাবি তোলা উচিৎ ছিল-
“নারীর শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ চাই, নাহয় পরিবেশহীন শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের মেয়েদের পাঠাবো না।”
কথিত ইসলামী চিন্তাবিদরা আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জ্ঞান শিক্ষার কথা বলেছেন এবং তাঁর ওপর প্রথম যে কোরআনের আয়াত নাজিল হয়েছে, সেখানেও জ্ঞানের কথা দিয়েই শুরু হয়েছে- ‘পড়ুন আপনার প্রভুর নামে।’ খুব ভালো করে খেয়াল করুন! জ্ঞান অর্জন আর কোরআন শিক্ষা কখনও এক নয়। কথিত ঐ ইসলামী চিন্তাবিদরা জেনেশুনে কোরআনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
কোরআনে ‘পড়ুন আপনার প্রভুর নামে যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন’ বলা হয়েছে। আর সে শিক্ষা একমাত্র কোরআন শিক্ষা। শিক্ষা শব্দ ব্যবহার করে দীনি তথা কোরআন শিক্ষাকে পাশ কাটিয়ে জাগতিক শিক্ষার সঙ্গে গুলিয়ে ঐ চিন্তাবিদরা কোরআনের অপব্যাখ্যা করেছেন। এদেরকে সুবিধাবাদী বলেই আমি আখ্যা দিতে চাই। হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম যখন নবীজিকে বলেছেন আপনি পড়ুন! তিনবার বলেছেন আপনি পড়ুন! কিন্তু নবীজি পড়েননি। বলেছেন আমি পড়তে জানি না। যখন জিব্রাইল বলেছেন- “পড়ুন আপনার প্রভুর নামে যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন” তখনই নবীজি পড়েছেন। এখান থেকে প্রমাণ হয় আল্লাহর নামের শিক্ষা ব্যতীত অন্য কোন শিক্ষার মূল্যায়ন নেই। আল্লাহ তাআলা অন্য কোনো শিক্ষার কথা বলেননি এবং আল্লাহর শিক্ষা হলো কোরআন শিক্ষা। হ্যাঁ, তবে কেউ জাগতিক শিক্ষা অর্জন করতে চাইলে বাধা নেই। অবশ্য জাগতিক শিক্ষার প্রতিও গুরুত্ব রয়েছে। তার জন্য চাই উপযুক্ত পরিবেশ। আল্লামা আহমদ শফী এটাই বলেছেন।
ইতোপূর্বে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অনেক বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এবং পরবর্তীতে তার ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে। আমি মনে করি হুজুরকে এই বয়সে বক্তব্যে পেশ না করাই উত্তম। হুজুরের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য হওয়া বেশি উপযুক্ত মনে করি। যেহেতু তিনি মাজুর (অক্ষম) বয়সে উপণীত হয়েছেন। ফলে তাঁর বক্তব্যে কিছু মিসটেক হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর এই সুযোগগুলোই ইসলামবিদ্বেষীরা গ্রহণ করার চেষ্টা করে। ইসলামবিদ্বেষীরা যাতে কোনো সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে, সে কারণে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পক্ষ থেকে তার সঙ্গের বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা লিখিত বক্তব্য পাঠ করবেন। তাতে বিদ্বেষ পোষণকারীরা সুযোগ পাবে না।