Breaking News
Home / Breaking News / বছরের শুরুতে বেড়েছে চালের দাম

বছরের শুরুতে বেড়েছে চালের দাম

ষ্টাফ রির্পোটারঃ
বছরের শুরুতেই ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার। এর আগে গত ছয় মাস স্থিতিশীল ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম। গত কয়েক দিনে হু হু করে চালের দাম বেড়েছে। অথচ এখন আমন ধানের মৌসুম চলছে। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা। এই চালের দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতারাও ক্ষুব্ধ। একই সময়ে প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দামও কেজিতে ২ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। বছরের শুরুতে এসব নিত্যপণ্য কেনার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বেকায়দায় পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধিতে নানা প্রশ্ন তুলেছেন ক্রেতারা। আর এই প্রশ্নের জবাব দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই বাজারে সমানে বাড়ছে চালের দাম। অথচ এভাবে দাম বাড়লেও সরকারের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। তারা মনে করেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই সুযোগ নিয়েছেন মিল মালিকরা। এই সময়ে সরকারের সঠিক মনিটরিং না থাকায় আমন মৌসুমে চালের দাম তারা যে যেভাবে পারছেন, বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকে ধানের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে সরকারিভাবে চাল ক্রয় করায় বাজারে চালের দাম বাড়ছে। এর ফলে গত তিন দিনে কেজিতে মোটা চাল ৪ টাকা, সরু চাল ৩ টাকা ও সুগন্ধি চাল ৫ টাকা বেড়েছে। রাজধানীর বাজারে গতকাল প্রতি কেজি মোটা চাল স্বর্ণা ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, বিআর-২৮ ও লতা ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের সুগন্ধি চাল ১০০ টাকা ও সাধারণ মানের সুগন্ধি চাল ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন আমন (বালাম) ৩৭ থেকে বেড়ে ৪০ টাকা হয়েছে। এদিকে কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ২ কেজির প্রতি প্যাকেটের নতুন মূল্য আটা ৬৮ টাকা ও ময়দা ৯২ টাকা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও আগের নির্ধারিত দরের চেয়ে কেজিতে ২-৩ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। এ হিসাবে আটা-ময়দার দাম কেজিতে প্রায় ৫ টাকা বেড়েছে বলে দাবি করেছেন দোকানিরা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের হাজি রাইস এজেন্সির মালিক মো. মইন উদ্দিন মানিক সমকালকে বলেন, মিল মালিকরা গত কয়েকদিনে সব ধরনের চালের দাম বস্তায় (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন। এ কারণে পাইকারি আড়তে দাম বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সুগন্ধি চালের দাম। প্রতি বস্তায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। তিনি বলেন, এবার উৎপাদন ভালো থাকায় পর্যাপ্ত চালের মজুদ আছে। এতে গত ছয় মাস চালের দাম স্থিতিশীল ছিল। এখন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের নির্ধারণ করা বাড়তি দাম ছাড়া চাল দিচ্ছেন না। অনেক মিলার চালের অর্ডারও নিচ্ছেন না। কিছু মিল মালিক অর্ডার নিলেও দর আগে বলছেন না। নতুন করে দর দিয়ে চাল পাঠাচ্ছেন। এর কারণে গত কয়েকদিনের মধ্যে সব ধরনের চালের দাম বেড়ে গেছে।

এদিকে মিল মালিকরা দাবি করছেন, সরকারি খাদ্যগুদামে আমন মৌসুমের ধান ও চাল ক্রয় করা শুরু হয়েছে। এর কারণে বাজারে চালের দাম বেড়েছে। তাছাড়া এ বছর কৃষক ও এলাকার মহাজন ব্যবসায়ীরা ধান বিক্রি না করায় বাজারে দাম বেড়ে গেছে। তবে চালের দর বাজারে যতটা

বৃদ্ধি পেয়েছে, মিল পর্যায়ে ততটা বাড়েনি। মিলগেটে মিনিকেট চালের দাম বস্তায় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ও অন্য চাল বস্তায় গড়ে ১০০ টাকা বেড়েছে। বাংলাদেশ অটো-মেজর ও হাসকিং রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ও রশীদ এগ্রো ফুডের স্বত্বাধিকারী আবদুর রশিদ সমকালকে বলেন, চালের দাম অনেক দিন বাড়েনি। সরু চালের মৌসুম প্রায় শেষ হয়ে আসছে। এখন আমন মৌসুম হলেও সরকার কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দিতে ধান কিনছে। এতে মিল মালিকদের বাড়তি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। সে কারণে চালের দামও বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত মৌসুমে অতিবর্ষণে ধানের ক্ষতি হওয়ায় উৎপাদনও কিছুটা কম হয়েছে। তাছাড়া শেষ মৌসুমে কৃষক ও মহাজনরা বেশি দামের আশায় ধান ধীরে ধীরে বিক্রি করছেন। এতে বাজারে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, নির্বাচনের আগে বাজারে চালের চাহিদা অনেক বেড়েছিল। এতে মিলগুলোতে চালের মজুদ কিছুটা কমে আসে। এই সময়ে বেশি দামে ধান কিনে উৎপাদন করা চাল এখন বাজারে ছাড়া হচ্ছে। ফলে দাম বেশি পড়ছে। তিনি আশা করেন, কৃষক ও ট্রেডিং ব্যবসায়ীদের হাতে মজুদ ধান ও চাল বাজারে ছাড়লে দাম খুব বেশি বাড়বে না, স্থিতিশীল হবে।

Powered by themekiller.com