Breaking News
Home / Breaking News / জন্মোৎসবে ওঁ কার মন্ত্রে মুখোরিত চাঁদপুর অযাচক আশ্রম

জন্মোৎসবে ওঁ কার মন্ত্রে মুখোরিত চাঁদপুর অযাচক আশ্রম

অ‌ভি‌জিত রায় ।। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্যের মধ্যে দিয়ে অখন্ডমন্ডলেশ্বর শ্রী শ্রীমৎ স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের শুভ জন্মোউৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে স্বামী স্বরূপানন্দের পূর্ণ্য জন্ম স্থান চাদঁপুর অযাচক আশ্রমে।
মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) ছিল দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ দিন। এদিন দেশ বিদেশের ভক্ত নর-নারী আর ওঁকার মন্ত্রে মুখোরিত হয়ে উঠে আশ্রম প্রাঙ্গন। এদিন ভোর ৬ টায় আশ্রম প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় উষা কীর্তনাঞ্জলি ও হরিওঁ কীর্তন। সকাল ৮ টায় অনুষ্ঠিত হয় নবীন যুগের নবীনবেদ শ্রী শ্রী অখন্ড সংহিতা পাঠ। স্বামী স্বরূপাণন্দ পরমহংসদেবের শুভ আবির্ভাব দিবস ও যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ সমবেত উপাসনা। আশ্রমের অধ্য কবিরাজ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীর পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত প্রার্থনা সভায় ভক্তবৃন্দ যোগদান করেন। তারা দেশ ও জাতির কল্যান কামনায় শ্রী শ্রীমৎ স্বামী স্বরূপানন্দের রাতুল চরনে প্রার্থনা জানান। অনুষ্ঠানে অখন্ড সংহিতা পাঠ করেন চাঁদপুর অযাচক আশ্রম বোর্ড অব ট্রাস্টের সদস্য সমবায় অফিসার দুলাল চন্দ্র দাস। পরে ট্রাস্টের সদস্য কন্ঠশিল্পী মানিক রায় অখন্ড সংগীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় স্বরূপানন্দ দর্শন শীর্ষক ধর্মীয় আলোচনা সভা।

প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের গবেষনা উন্নয়ন কনসালন্টেন্সি অধ্যাপক ড. প্রশ্রান্ত কুমার ব্যানার্জী। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী বলেন, স্বামী স্বরূপানন্দ একজন সাধকই ছিলেন না তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক, তিনি জগৎ কল্যানে মানুষের কল্যানে অনেক কাজ করে গিয়েছেন। দেখিয়েছেন মানুষকে মুক্তির পথ, স্বাবলম্বী হওয়ার পথ। তিনি চরিত্রবান হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, আহ্বান করেছেন কর্মমুখী হওয়ার। তিনি বলেছেন আমি জানিতে চাহিনা বন্দু তুমি হিন্দু না মুসলমান, খ্রিস্টান না বৌদ্ধ আমি জানিতে চাহি তুমি কতটুকু মানুষ। তিনি প্রকৃত মানুষ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেখানে কোন বিশেষ সম্প্রাদায়কে অন্তর্ভুক্ত করেননি, তিনি মানুষকে ভালোবেসেছেন, এই মহান সাধকের পূর্ণ্য জন্মস্থান চাঁদপুর হওয়ায় প্রকৃত অর্থে চাঁদপুরবাসী অত্যান্ত ভাগ্যবান। এই মহান সাধকের কর্মকান্ড আমাদেরকে লোক কল্যানে ছড়িয়ে দিতে হবে, মানুষকে জানাতে হবে, যদি তা পারি, তাহলেই আমরা সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারব।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও আশ্রমের অধ্য সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী। সভাপ্রধানের বক্তব্য রাখতে গিয়ে আশ্রমের অধ্য সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, চাঁদপুরের মানুষ বাবা মনির জন্মোস্থান উদ্বারে যেভাবে সহযোগীতা করেছেন তা আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না, তারা চেয়েছিল বলেই এ স্থান উদ্বার হয়েছে, এ স্থান এ মন্দির আমার নয়, এ মন্দির স্বামী স্বরূপানন্দের, এ মন্দিরের উন্নয়নে সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন। এ পূর্ণ্য ভূমিতে ধ্যান মন্দির নির্মানে তিনি সকলের আশীর্বাদ কামনা করেন। স্বরূপানন্দ আমাদের শিখিয়েছেন চরিত্র গঠনের কথা। সবাইকে আপন করে নেয়া। এই বাণী আমরা সবাই বিশ্বাস করি। চাঁদপুর অযাচক আশ্রমের জন্য যারা ভূমি দিয়েছেন, অর্থ দিয়েছেন তাদেরকে স্মরণ করি। এই পুন্য ভূমি উদ্ধার করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। মন্দিরের কাজ শুরু করা হয়েছে। কোন অর্থ আমাদের হাতে ছিল না। পুরাতন আদালত পাড়ার এক মুসলিম ব্যক্তি স্বরূপানন্দের পুন্য ভূমিতে মন্দিরকরার জন্য দু’লাখ টাকা দিয়েছেন। তা দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে আরও টাকা দেওয়া হবে। একটি চক্র আলাদাভাবে সংগঠন করতে চেষ্টা করছে। পুরাতন আদালতপাড়া ও গাঙ্গুলী পাড়ায় স্বরূপানন্দের পৈত্রিক সম্পত্তি রয়েছে। স্বরূপানন্দ অখ- ধর্ম প্রচার করেছেন। আমার পরে কেউ নেই দীক্ষা দিবেন বলে। স্বরূপা নন্দ জন্মগ্রহণ করার ৮ বছরের মাথায় একজন ব্যক্তিকে ডাকাতিয়া নদীতে ডুবে যেতে দেখে তাকে উদ্ধার করেছেন। ৮ বছর বয়সে তিনি ওই ব্যক্তিকে দীক্ষা দিয়েছেন। তিনি পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য এসেছিলেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নারায়নগঞ্জ মর্গাম স্কুল এন্ড কলেজের অধ্য অধ্যাপক অশোক তরু সাহা, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডঃ বিনয় ভূষন মজুমদার, সাধারন সম্পাদক অ্যাডঃ রন্জিত রায় চৌধুরী, ফকিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক শিশির কুমার, ঢাকা ঢাকেরশ্বরী মন্দিরের উপদেষ্টা পার্থ সারথী চক্রবর্তী, চাঁদপুর কন্ঠের চীফ রিপোর্টার বিমল চৌধুরী, মুন্সীগঞ্জ হরগংগা কলেজের অধ্যাপক সুশীল সাহা, বাংলাদেশ সম্মিলিত অখন্ড সংগঠনের সাধারন সম্পাদক নিরাপদ স্বর্ণকার, চাঁদপুর সম্মিলিত অখন্ড সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক রাধেশ্যাম কুড়ি, সাধারন সম্পাদক রোটারিয়ান গৌতম সাহা প্রমুখ।

Powered by themekiller.com