Breaking News
Home / Breaking News / বাংলারমুখ অনলাইন সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার পলাশের স্কুল জীবন আমার শিক্ষক, আমার অহঙ্কার

বাংলারমুখ অনলাইন সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার পলাশের স্কুল জীবন আমার শিক্ষক, আমার অহঙ্কার

বিশেষ প্রতিনিধি:

ঘটনাঃ০১

পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ছি। সেন্টার পরীক্ষা শেষ। বৃত্তি পরীক্ষার আর ২ দিন বাকী। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদির স্যার, থার্ডস্যার হাবিব স্যারসহ স্কুলের শিক্ষকগণ আমাদের বাসায় আসলেন। জানলাম হেডস্যার বাকী ২ দিন দিন-রাত আমার সাথে লেগে থাকবেন। শুধু লেগে থাকা নয়, আঠারমত লেগেছিলেন। থু থু ফেলতে গেলেও স্যারের অনুমতি লাগত। বলাবাহুল্য এখানে টাকার কোনো লেনদেন ছিল না।

ঘটনাঃ০২

ষোলঘর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে তখন সপ্তম শ্রেনীতে পড়ি। আমার কোনো গৃহ শিক্ষক নেই। স্কুলের প্রধান শিক্ষক Nayeem Uddin Khan স্যার আমাকে ডেকে বললেন তোমার পড়ালেখায় কোনো অসুবিধা হলে আমার সাহায্য নিও। আমাদের গনিতের শিক্ষক ছিলেন হেলাল স্যার। তিনি প্রচুর প্রাইভেট পড়ান ব্যাচে। একদিন আমাকে দাড় করালেন। তোমার গণিত কার কাছে কর। আমি বললাম আমাকে হেডস্যার দেখিয়ে দেন। উনি ভেবেছিলেন আমি হেড স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ি। এ নিয়ে হেলাল স্যার বিভিন্ন সময় আমার ভুল ধরতে লাগলেন। আমি ক্লাশে ভাল ছাত্রদের একজন। তাই ভুল ধরাটা অন্যদের ভাল লাগেনি। তাই এটা নিয়ে কানাঘুষা শুরু হলো। পড়ে স্যার জানতে পারলেন হেড স্যারের কাছে আমি টাকা দিয়ে প্রাইভেট পড়ি না। আমার কোনোটা বুঝতে সমস্যা হলে স্কুল ছুটির পর স্যারের কাছে যাই। স্যার সেটা দেখিয়ে দেন। স্যারকে কোনোদিন একটাকাও দেইনি। হেলাল স্যার একসময় হার মানলেন। লজ্জায় একসময় তিনি বিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেলেন।

ঘটনাঃ০৩

আমার ভাইয়ের শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছিলাম। কাজির বাজার পার হওয়ার পর দেখলাম আমার সময়ের প্রাইমারী স্কুলের একজন শিক্ষক হেঁটে উল্টোদিক থেকে আসছেন। আমি নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছিলাম। গাড়ি দাঁড় করিয়ে আমি নামলাম। স্যারের পা ছুঁয়ে রাস্তায়-ই সালাম করলাম। স্যারের বয়স হয়েছে। চোখেও সমস্যা হচ্ছে। চিনতে পারলেন না। আমি স্কুলে বরাবরই প্রথম ছিলাম। তাই পরিচয় দিতেই চিনলেন। জানতে চাইলাম কি হয়েছে। হেঁটে কোথায় যাচ্ছেন? উনি বললেন কাছেই একটা স্কুলে বদলী করেছেন জেলা শিক্ষা অফিসার। ঘুষ দিতে পারেন নি। তাই বদলি ঠেকাতে পারেন নি। এখন ১২ কিলোমিটার পথ হেঁটে বাড়িতে যাবেন। তারপর দূপুরের খাবার খাবেন। তখনই ৪ টার বেশী বাজে। তিনি গাড়িতে উঠেন নি। কারন যেটাকা বেতন পান সে টাকা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। গাড়িতে চড়লে সংসারটা চলবে না। আমি হত বিহ্বল হয়ে পড়লাম। গাড়ি ঘুরিয়ে ওনাকে নিয়ে শহরে আসলাম। দু’জন একসাথে রেস্টুরেন্টে খেলাম। দোকান থেকে মিষ্টি কিনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বাসায় গেলাম। এবং তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললাম যখন এক সপ্তাহের মাথায়ই স্যারের বদলিটা কার্যকর হল বাড়ির কাছের স্কুলে।

ঘটনাঃ ০৪

আমার মেয়ে এবার জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। স্কুলের ক্লাসের শেষ দিন। আমি মেয়েকে নিয়ে হেড স্যারের কাছে গেলাম। বললাম পাঁ ছুয়ে কদমবুচি কর। স্যারকে বললাম দোয়া করবেন। ফলাফল যাই হোক যেন ভাল মানুষ হয়। স্যার আমার মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। চোখে টলমল পানি। আবেগ তাড়িত কন্ঠে বললেন এটা আর কেউ করে না। দোয়া চাইতে হয়না। এসব কাজে দোয়া এমনিতেই চলে আসে। তিনি প্রায় প্রতিদিন ফোনো আমার মেয়ের পরীক্ষার খবর নিয়েছেন। এমনকি একদিন কেন্দ্র সচিব আমার মেয়ের কক্ষে গিয়ে জিঙ্গেস করেছেন আমার মেয়ে পরীক্ষা কেমন দিচ্ছে। তিনি এটাও জানালেন মেয়ের স্কুলের হেড স্যার জানতে চেয়েছেন পরীক্ষা কেমন হচ্ছে!

আমি মেয়ের কাছে এটা শোনার পর বললাম দেখেছো! স্যারদের একটু সম্মান করলে কতগুণ ফেরত পাওয়া যায়।

ঘটনাগুলোর অবতারণা করেছি এজন্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েনের কারনে পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। আমরা যদি প্রত্যেকের নিজ নিজ স্থান থেকে এসব উত্তোরনে ভূমিকা না রাখতে পারি তাহলে এক ভয়ঙ্কর অন্ধকার অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

এখন যখন দেখি একজন শিক্ষক ৮ টি ফ্ল্যাটের মালিক এবং তার প্রত্যেকটার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে তিনি ১৬ কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনেছেন। তাহলে প্রশ্ন আসবেই তিনি স্কুলে সময় দেন, নাকি কোচিং এ? আর যখন এসব শিক্ষকগণ তাদের নিজস্ব কোচিং এ না পড়লে বিভিন্ন ভাবে অপমান করেন, তখন নানা সমস্যার সৃষ্টি হবে। আপনারা কোচিং সেনৃটার চালান। কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের সন্তানদের তাতে যেতে বাধ্য করবেন না। তাহলেই আর সমস্যার সৃষ্টি হবে না।

শিক্ষক এবং গার্ডিয়ান মিলে একটা বোধবুদ্ধি সম্পন্ন, মেধাবী শিক্ষার্থী প্রজন্ম গড়ে উঠুক সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

Powered by themekiller.com