Breaking News
Home / Breaking News / চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে নিয়ম-বিধি তোয়াক্কা না করে গাছ কাটার অনুমতি!

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে নিয়ম-বিধি তোয়াক্কা না করে গাছ কাটার অনুমতি!

আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ফরিদগঞ্জ:
ফরিদগঞ্জে নগদ টাকা দিয়ে সরকারী গাছ কাটার অনুমতি মিলে গেছে। টেন্ডার বা স্পট কোটেশন লাগেনি। নিয়ম-বিধি তোয়াক্কা না করে এ কাজ করেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ইউএনও। সরকারি অফিস বন্ধের দিন শুক্রবার হতে শুরু করে রোববার বিকাল পর্যন্ত ওই গাছ কাটা হয়েছে উপজলার পাইকপাড়া (উত্তর) ইউপি’র কামালপুর চৌরাস্তায়। রোববার পৌর এলাকার কাছিয়াড়া গ্রামেও জিসিসি সড়কের গাছ কাটা হয়েছে। যদিও, আগস্ট মাসে মাসিক সমন্বয় সভায় গাছকাটা বন্ধের প্রস্তাব দিয়ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।

সরেজমিন জানা গেছে, রূপসা-চাদ্রা জিসিসি সড়কের কামালপুর গ্রামের চৌরাস্তা। সেখানে এলজিইডি’র জিসিসি সড়কে সৃজিত তিনটি রেইন ট্রি (গাছ) শুক্রবার সকালে কাটা শুরু হয়। গাছ কাটছিলেন পার্শ্ববর্তী পারুল বেগম (৩৫)। জানতে চাইলে তিনি একটি অনুমতিপত্র দেখিয়ে বলেন, নগদ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে গাছ কিনে নিয়েছেন। তাতে, ইউএনও তাছলিমুন নেছা ও উপজলা প্রকৌশলী আবরার আহম্মদ এর স্বাক্ষর রয়েছে (তারিখ: ৩০-০৮-২০২৩)। তিনি টাকা জমার কোনো রশিদ দেখাতে পারেননি। বলেছেন, নগদ টাকা দিয়েছি সিও জহিরের হাতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরেস্টার মো. কাওছার মুঠোফোনে বলেছেন, কামালপুর চৌরাস্তায় গাছ কাটার বিষয় আমি জানি না। কমিটিতে নামমাত্র আছি, আমার কাছ থেকে মতামত নেওয়া হয়নি। স্টিমেইট ওরা কিভাবে করেছে জানি না। জানতে চাইলে তিনি বলেন, জীবন্ত গাছের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও বনবিভাগের অনুমতি বিহীন গাছ কাটার বিধান নেই। মরে গিয়ে ঝুঁকির সৃষ্টি করছে- এমন গাছের ক্ষেত্রে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ও কমিটির সভা আয়োজন ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইউএনও অনুমতি দিতে পারেন। তিনি বলেন, কমিটিতে আমিও একজন সদস্য।

উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহম্মদ বলেছেন, পারুল বেগমের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইউএনও অনুমতি দিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাছগুলো মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাই জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগে না। গাছগুলো জীবন্ত, ঝুঁকিপূর্ণ ছিল না, স্পট কোটেশনে কারা অংশ নিয়েছেন, তাদের নাম ঠিকানাসহ বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে উচ্চ স্বরে বলেন, এতো কথার জবাব দিতে পারবো না। আপনি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন, তারপর দেখা যাবে।

প্রকৌশল অধিদপ্তরের সি.ও জহির উদ্দিন দাবী করেছেন, ৩০-এ আগস্ট স্পট কোটেশন হয়েছে তার অফিস কক্ষে! কারা অংশ নিয়েছে। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পারুল, নেছার ও সাইফুল। তাদের ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি বলন, ঠিকানা নাই। ইউএনও, প্রকৌশলী ও ফরেস্টার ছিল কি না- এমন প্রশ্নে তিনি রাগান্বিত স্বরে বলন, এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। যদিও, এলাকায় খোঁজ নিয়ে নেছার ও সাইফুল নামের কারও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গাছ ক্রেতা পারুল বগম (৩৫), বিল্লাল বপারী (৩৪), আবুল কালাম (৬০)সহ প্রমুখ এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্যমতে গাছ জীবন্ত ছিল। মরে যাওয়া ও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল না। জানতে চাইলে পারুল বেগম বলেছেন, নেছার ও সাইফুল নামের কাউক চিনি না। আমার সাথে আমার ভাসুর পুত্র বিল্লাল, ভাগিনা বধু ছাড়া অপর কেউ ছিল না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, মূলত গাছগুলোর কয়েকটি ডাল ভবনের ছাদের উপর চলে গেছে। তাই, মোটা অংকের টাকার বিনিময় প্রবাসীর স্ত্রী গাছ কাটার ব্যবস্থা করেছেন বলে শুনেছি। জানতে চাইলে পারুল বেগম বলেন, ২০ হাজার টাকার বাইরে আমি টাকা দেইনি।

এ ছাড়া, রোববার দুপুরে কামালপুর চৌরাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, কমিউনিটি সুপারভাইজার মনির এর উপস্থিতিতে তিনটি গাছ ছাড়াও অপর একটি গাছ কাটছিলেন কাঠুরিয়াগণ। গণমাধ্যম কর্মীদের দেখে কাঠুরিয়াদের নেমে আসতে বলা হয়। মনির দাবী করেন, কয়েকটি ডাল কাটা হচ্ছিল। যদিও, বিভিন্ন ডালে মোটা রসি লাগানো ছিল, তিনজন কাঠুরিয়া গাছের বিভিন্ন ডালে ছিলেন ও কয়েকটি ডাল কেটেছেন।

নির্বাহী অফিসার তাছলিমুন নেছার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয় আপনি একটি অভিযাগ দেন। আমি একজন সংবাদকর্মী হয়ে অভিযোগ দেবো কেনো- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গাছ কাটার কথা বলছেন আপনি, অভিযোগও আপনাকেই দিতে হবে!

এদিকে, রোববার ফরিদগঞ্জ-ব্রহ্মপাড়া জিসিসি সড়কের ৬-৭ ফিটের মধ্যে থাকা পৌর এলাকার কাছিয়াড়া গ্রামে অপর একটি জীবন্ত গাছ কেটে নিচ্ছিলেন স্থানীয় জহির (৪৫)। তিনি একটি কাগজ দেখিয়ে বলেন, ইউএনও ও প্রকৌশলীর স্বাক্ষরিত অনুমতিপত্র আছে, গাছটি আমার। গণমাধ্যম কর্মীর উপস্থিতির পর রহস্য জনকভাবে ওই গাছ কাটা বন্ধ করা হয়।

এদিকে, বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাগণ জানিয়েছেন, চলার পথে সরকারী সড়কের গাছ প্রায়শঃই কাটতে দেখা যায়। অভিজ্ঞ জনরা দাবী করেছেন: সরেজমিন সততার সঙ্গে প্রকাশ্য ও গোপন তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে গাছ কাটার নানা তথ্যচিত্র।

Powered by themekiller.com