Breaking News
Home / Breaking News / কবি ও গল্পকার আব্দুল্লাহ আল মামুন রিটন এর ছোট গল্প “জ্বলন”

কবি ও গল্পকার আব্দুল্লাহ আল মামুন রিটন এর ছোট গল্প “জ্বলন”

” জ্বলন ”
– আব্দুল্লাহ আল মামুন- রিটন

জ্বলন, কাসেম চাচার মেঝ ছেলে। হঠাৎই সেদিন আমার চেম্বারের এসে হাজির। ও চাচাতো ভাই হলেও আমার বন্ধুর মতো। সে দৌড়ে এসেছে অনেক পথ। হাঁফাচ্ছে।

-ও ভাই সর্বনাশ হয়ে গেছে।

ওর কথা শুনে আমিও ভয় পেয়ে এক ঝটকায় চেয়ার থেকে নেমে ওর থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম।

– কী সর্বনাশ হয়েছেরে জ্বলন?
– ভাই ঘুম থেকে উঠে বাহিরে এসে চোখ মেলে যেদিকে দেখছি সেদিকেই খারাপ দেখছি। এমনকি এমনকি এমনকি আমি,,,,,

– এমনকি কিরে জ্বলন? খুলে বল। খুলে বল।
– ভাইডি চারিদিকে ভালো কিছুকেও খারাপ দেখছি, আর খারাপ মনেও হচ্ছে। এমনকি,,,,,,,এমনকি,
– থামলি কেন বলে ফেল?
– ভাইডি এমনকি মানুষ গুলোকেও উলঙ্গ!
– আমি এক উড়াল দিয়ে চিয়ারের পিছনে গিয়ে নিজেকে আড়াল করলাম।
– উলঙ্গ দেখছিস?
– ভাইডি তার থেকেও বেশি। সব মানুষের মনের নোংরা টাও দেখতে পাচ্ছি।

ওর কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে এবার আমাকে টেবিলের নীচে ঢুকতে হলো?
– তার মানে তুই আমরাও——–?

– হ ভাইডি, তোরও, তবে রক্ষে, শুধুমাত্র বাম চোখে এটা দেখছি। বাম চোখ বন্ধ করে শুধু ডান চোখে দেখলে সব ঠিক দেখছি।

আমি টেবিলের নীচে থেকে বললামঃ ভাইডি তুই বাম চোখ বন্ধ কর, আমি তোর কাছে এসে ব্যাবস্থা করছি।

– হ ভাইডি, বন্ধ করছি বাম চোখ। সামনে আয়, বাঁচা আমাকে। আমার একি হলো,,,,, হায় হায়।

– আগে কসম কাট যে সত্যিই তুই বাম চোখ বন্ধ করছিস?
– আরে ভাইডি তোর এত ডর কিসের? তোর আকাম কুকাম তো আমি ভালো থাকতেও জানতাম। ভাইডি টেবিলের নীচ থেকে বেড় হ, রক্ষে কর আমারে।

টেবিলের নীচ থেকে আমি খুব ভয়ে ভয়ে বের হলাম। ড্রয়ার থেকে কজটেপ বের করে ওর বাম চোখ প্রাথমিক ব্যান্ডিজ করলাম।

– এখানে আসার আগে কি তোর অন্যদের সাথে পথে দেখা হয়েছিল? তাদের সব দেখে ফেলেছিস নাকি?

– হ ভাইডি। বাজার হয়ে আসতে নূরুল চাচা, আদুল সাহা দাদা সহ চেয়ারম্যানের সাথেও দেখা হয়েছে। ওদের সব দেখে ফেলেছি। হায় হায় হায় এরাতো কাওকে ছাড়েনি। কাজের বুয়াডারেও,,,,,,,,

ওকে আমি ভয়ে ভয়ে আমার চেম্বারেরেই রাত পর্যন্ত রাখলাম। রাতে কাসেম চাচাকে এবং চাচিকে ডেকে সমস্ত খুলে বলতেই চাচা আমার কথা শুনেই দে দৌড়। আমি পিছন পিছন গিয়ে মাঝপথ থেকে তাকে ফিরিয়ে আনলাম বুঝিয়ে শুনিয়ে। বললাম চাচা জ্বলনের বাম চোখ এখন বন্ধ আছে, সমস্যা নাই। বাড়িতে নিয়ে চলেন। ওর ঘরে ওকে রেখে ডাক্তার দেখাতে হবে আসল ঘটনা জানার জন্য। কথা মতো রাতে বাড়িতে নেওয়া হলো জ্বলনকে। ওর ঘরে ওকে আটকে রাখা হলো। গভীর রাত পর্যন্ত পায়চারি করলাম আমি আর চাচা। শেষ রাতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে চাচার হাউমাউ চিৎকারে ঘুম ভেঙে যেটা জানলাম সেটা আজও রহস্য। রাতেই জানালা ভেঙে জ্বলনটা যে কোথায় হারালো আজ আট বছর তার কোন খোঁজ নেই।

– আব্দুল্লাহ আল মামুন রিটন
নাটোর, বাংলাদেশ, 640

Powered by themekiller.com