Breaking News
Home / Breaking News / কবি ও কলামিস্ট আবৃতিকার আব্দুল্লাহ আল মামুন রিটন এর গল্প “ঘৃণিত চরিত্র “

কবি ও কলামিস্ট আবৃতিকার আব্দুল্লাহ আল মামুন রিটন এর গল্প “ঘৃণিত চরিত্র “

” ঘৃণিত চরিত্র ”
– আব্দুল্লাহ আল মামুন রিটন

বিকেলে ট্রেনিং অফিসের শেষ সেশন শেষ করে বাড়ি ফেরার আগে অফিসের একদম সিঁড়ির কাছের ছোট্ট কফি শোপে ঢুকে সবে মাত্র কফির অর্ডার করেছি এই সময় আমার মোবাইল টা বেজে উঠলো। পকেট থেকে মোবাইল বেড় করতেই নামটা চোখে পড়ল, ইমতু, আমার বন্ধুর একমাত্র মেয়ে। রাজশাহীর একটি মহিলা ম্যাচে থেকে নাম করা একটি কলেজে পড়ছে ও। আমার সাথে ওর বাবার যেমন বন্ধুত্ব, তেমনই ঘনিষ্ঠ ওর পূরো পরিবার। দুই পরিবারের মধ্যে বহুদিন থেকে নিত্য যোগাযোগ। একটা ভালো বন্ধন আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে বহুদিনথেকেই।

– হ্যালো মা ইমতু। বলো কেমন আছো?

– চাচু, তুমি কি রাজশাহীর ট্রিনিং এসেছো আজ?

– হ্যা মা, কেন? কোন সমস্যা? কিছু লাগবে তোমার?

– না চাচু, আমি তোমাদের অফিসের কাছাকাছি এটা মার্কেটে। তুমি কোথায় বলো আমি দেখা করবো।

– ও আচ্ছা, এসো মা, আমি অফিসের নীচের কফি শোপে আছি। এসো কফি খাব এক সাথে।

ইমতু মোবাইল রেখে দিলো। মিনিট দশেক পর ওকে কফি শোপের বাহির থেকে ভিতরে সাথে করে ডেকে নিলাম। কফি অর্ডার দেব কিন্ত ইমতুর চোখ মুখ দেখে খটকা লাগলো।

– কফি খাবে না?

– না চাচু, তুমি খাও।

কথা বলতে বলতে ইমতু ওর মোবাইল ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার অন করে আমার সামনে টেবিলের উপর রাখলো। ” এই ইনবক্সটা আমার চাচু, এবার খুব ভালো করে এস এম এস গুলো দেখ।”

আমি ওর শক্ত হয়ে আসা চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে ওর মোবাইলটা টেনে নিলাম কাছে। এরপর যা দেখলাম সেটা আমার এই জীবনে দেখা সব থেকে লজ্জার ঘটনা। মাথা তুলতে পারছি না। মনে হচ্ছে ঘাড়ের উপর জম বসে আছে। কপাল ঘামতে লাগলো বর্ষার বৃষ্টির মত। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি বাবা তার মেয়ের ছদ্মনামের আইডি চিনতে না পেরে কি সর্বনাশ টা করে ফেলেছে। সুজনের আইডি থেকে তারই মেয়েকে অশ্লীল ইঙ্গিত আর অশ্লীল ছবি সেন্ড করেছে। আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা।

– চাচু, এটা কি আমার বাবা? বাবা বলে ডাকা যায় চাচু?

ওর প্রশ্নটাই আমার মুক্তির পথ যেন খুলে দিলো। হুট করে মাথায় বুদ্ধিটা চেপে বসেছে আমি ভেবে দেখার আগেই। এ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই এই জটিল সমস্যা থেকে উঠে আসার জন্য।

সন্তানের সাথে পিতার লম্বা একটা দুরত্ব আমি স্পষ্ট অনুভব করছি। যেটা দিনকে দিন ঝড়ের আকার ধারণ করবে। পূরো পরিবার জ্বলবে, তছনছ হয়ে যেতে পারে। মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে সুজন, ইমতু, আর তার ইফেক্ট পড়বে ভাবির উপরেও। ওহ গড_____

” ইয়ে মানে মা, ইমতু____”

– কী, বন্ধুর হয়ে এখন ওকালতি করবে চাচু? আমি চিন্তায় করতে পারছিনা আমার বাবা একজন মানসিক ভাবে বিকৃত মানুষ, এরকম বিকৃত যে—–”

– মা’রে,,,, এটা তোর বাবার কাজ না মা। হলে তো অবশ্যই ওকালতি করতাম। এখন নিজের ওকালতি আমি নিজেই কিভাবে করি আর সেটা তোমাকে কিভাবে বিশ্বাস করাই মামনি!

– what? কি বলতে চাইছো চাচ্চু?

– মা ইমতু, তুমি তো জানো তোমার চাচি আমাকে কতোটা ভালোবাসেন এবং সেই সূত্রেই সে আমাকে অন্য মেয়েদের বিষয়ে কতোটা সন্দেহ করে। আমি ফেসবুক চালাতে পারবো না, Whatsap না। তোমার চাচি খুব নজর রাখে, এজন্যই আমি বাধ্য হয়ে কৌশলে তোমার বাবার ছবি ব্যবহার করে এই একাউন্ট খুলেছিলাম যাতে তোমার চাচি কোনদিন কোন ভাবেই ধরতে না পারে এবং আমাকে বিরক্ত না করে। আর এটা যে তোমার একাউন্ট জানতাম না, ছদ্মনাম ব্যবহার করে খুলেছো যে কারণে মিস্টেক হয়েছে মা। চিনতে পারিনি। এটা তোমার বাবা না মা, বিশ্বাস করো,,, এটা আমার পাপ। ক্ষমা করো মা। আমি জোর হাত করে ক্ষমা চাইছি আর তওবা করছি আমি আর কখনোই ফেসবুক ব্যবহার তো দূরে থাক মোবাইল সাবধানে ব্যবহার করবো কোন প্রয়োজন হলে।

ইমতু উঠে দাঁড়াল, ওর চোখ মুখ আরও শক্ত হয়ে গেছে। আমি সাহস পেলাম না মাথা উঁচু করে থাকতে। পা’য়ের নীচ থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছে আমার। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ইমতুর গাল ভর্তি থুতু রেডি, যে কোন সময় ছুড়ে মারবে আমার চোখে মুখে।

– চাচু! এটা কি আমাকে বিশ্বাস করতে বলছো? আমি তোমাকে চিনিনা চাচু!

আমি সত্যিই মাথা তুলতে পারছিনা। ওভাবেই মাথা নিচু করে আবারও বললামঃ

– মা’রে। এক রূমে থেকেও তোমার চাচি আমাকে চিনতে পারেনি। সেদিক থেকে এটা তোমার দোষ না মা। এটা আমার চরিত্রের অন্যতম কৌশল এবং দোষ মা। তবে বিশ্বাস করো, আমি কানে ধরে তোওবা করছি, এর পর আর কোনদিনই তুমি এরকম টা দেখবে না আমার মধ্যে।

ইমু কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাগ টা তুলে নিয়ে নীরবে চলে গেল। যাবার আগে ফেলে যাওয়া ওর দীর্ঘশ্বাস আমাকে জানিয়ে দিল যে আমি সফল হয়েছি। ইমতু গেট ওভার হতেই আমি ঝট করে মোবাইল টা তুলে নিলাম। এখনই সুজনকে ওর ফেসবুক ডিলিট করতে বলতে হবে। ইমতুর ঘটনাটা ওর জানা উচিত এখনই। যাতে ও আগেই তৈরি থাকতে পারে। খুলে বলে রেডি করতে হবে ইতরটাকে।

বহুদিন পর রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমার অফিসের গাড়ির অপেক্ষা করছি এই সময় একটা অটো থেকে ইমতু নামলো। বহুদিন পর ইমতুর সাথে দেখা। ওর সাথে চোখাচোখি হতেই এক গাল থুতু ইমতু মাটিতে ফেলে গজগজ করতে করতে চলে গেলো। ওর চোখে মুখে পৃথিবীর সমস্ত ঘৃণা দেখতে পেলাম। যেই ঘৃণাটা ওর বাবা সুজনের প্রাপ্য ছিল।

লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে এগিয়ে আসা আমার অফিসের গাড়িতে উঠে পড়লাম।

Powered by themekiller.com