মোহাম্মদ সিন্টুঃ
শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি বলেছেন,২৫ শে মার্চ এর কাল রাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং ইতিহাসের জঘন্যতম একটি গণহত্যা শুরু করেছিল। মাত্র ৯ মাসে ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মা বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছিল, একটি দেশকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে একেবারে বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়েছিল, সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মধ্যে ১ কোটি মানুষ প্রাণ রক্ষার জন্য, প্রাণের ভয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। দেশের ভিতরে তিন কোটির বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন এবং পুরো দেশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। কারণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেনাপতিরা ঘোষণা দিয়েছিলেন তাদের শুধু এই বাংলাদেশের পোড়া মাটি চাই, কোন মানুষ চাই না। এবং তারা বাঙালি জাতির পরিচয় ভুলিয়ে দিবেন এই আস্ফালন করেছিলেন। এই যুদ্ধে আপনাদের প্রাণ বাজি রেখে দেশ মৃত্তিকাকে স্বাধীন করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
আপনারা যখন যুদ্ধে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তখন কারো কিন্তু যুদ্ধ করার মত সামরিক প্রশিক্ষণ ছিল না হয়তো কেউ কেউ সামরিক বাহিনীতে ছিলেন। তা খুবই সংখ্যায় কম কিন্তু অধিকাংশই দেশের শান্তি প্রিয় মানুষ, আপনাদের শুধু একটি চাওয়া ছিল দেশ মাকে স্বাধীন করতে। আর আপনারা চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু যখন ডাক দিয়েছেন তার ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তেই হবে। আসলে সবাই ছিলেন তখন বয়সে তরুণ। সবার চোখে একটাই স্বপ্ন ছিল দেশটাকে স্বাধীন করতে হবে। আপনাদের সকলের বাড়িতেই হয়তো বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই বোন ছিল কোন পিছুটান সেদিন আপনাদেরকে দামিয়ে রাখতে পারেনি। কেউ জীবনের মায়া করেননি। শুধু একটি স্বপ্ন ছিল হানাদার বাহিনীর হাত থেকে এই দেশ মাকে রক্ষা করবেন, পুনরুদ্ধার করবেন, কোনদিনও জীবন নিয়ে আর ঘরে ফিরে আসতে পারবেন না এই বোধ নিয়ে আপনারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আপনাদের কারণে আমরা এখন বলতে পারি “আমরা স্বাধীন দেশের মানুষ”। আপনাদের কারণেই আমরা এই দেশটাকে আরো উন্নত করার স্বপ্ন দেখতে পারি। তিনি প্রধান অতিথি হিসাবে এ কথা গুলো বলেন।
গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন” এই আলোচ্য বিষয় নিয়ে রোববার সকাল ১০ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আরো বলেন, এই বাংলাদেশে তাকিয়ে দেখেন আজকে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে বাংলাদেশ চলছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলাম আজকে আবার বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছি। বিএনপি’র তৎকালীন ২০০১ এর পরে যিনি অর্থমন্ত্রী ছিলেন, সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না তাহলে বিদেশ থেকে ভিক্ষা পাওয়া যায় না। বিএনপি চায় আমাদেরকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করে রাখতে, আর আমাদের জাতির পিতা বলেছিলেন ভিক্ষুকের জাতির কোন সম্মান নাই। নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য যেমন আমরা উৎপাদন করতে পারি প্রয়োজনে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিপদে করলে খাদ্যের সহযোগিতা করতে পারি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকের বাংলাদেশ ভিক্ষুকের হাত থেকে, দাতার হাতে পরিণত হয়েছে। আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে কমে ১৪ ভাগে নেমে এসেছে। আবার হতো দরিদ্রের হার, অতি দরিদ্রের হার সেটি নেমে গিয়েছে শতকরা ৭ ভাগে।
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার, পৌর মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটের নির্বাচিত কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. এ. ওয়াদুদ, প্রেসক্লাব সভাপতি এ এইচ এম আহসান উল্লাহ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাশ, পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন,
সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আক্তারের সঞ্চালনায় এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
আলোচনা সভার এক পর্যায়ে প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট এবং নগদ অর্থ তুলে দেন।