Breaking News
Home / Breaking News / দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

. তাবু বিলাসী
বনানী সিনহা
****************************************
আমেরিকা, দেশটির নাম ছোট বেলা থেকেই কম বেশি সবাই শুনতে শুনতে বড় হই। অনেকে একে স্বপ্নের দেশ বলেও ডাকেন।তবে কথাটা কিছুটা সত্য কিছুটা কল্পনা কিছুটা অলীক। সত্য এ কারণেই হতে পারে যে, দেশটা সর্বোচ্চ স্বাধীনতার দেশ ,ধনী আর শক্তিশালী তো বটেই। কল্পনা তাদের কাছেই যারা এদেশে থাকেন না।আর বাকী রইলো অলীক,শব্দটা এ জন্যেই বলেছি যে দেশটা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে মাল্টি ন্যাশনাল দেশ। বিভিন্ন দেশ থেকে সবাই আসে উন্নত জীবন যাপনের আশায়। কিন্তু অনেকের কাছে সেটা দুঃস্বপ্ন কারণ এ দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলাটা এক চ্যালেঞ্জ। তারমধ্যে ভাষাগত সমস্যা অন্যতম।
আর অত্যন্ত সময়নিষ্ঠ কারণ একমিনিট আগে ও পরে কোনটাই গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যটি আবহাওয়া, যেটা কিনা যেকোনো সময়ই পরিবর্তন হতে পারে। এখানে মোটামুটি নয় মাসই ঠান্ডা ,বাকি তিন মাস গরম।

তাই, দীর্ঘ নয় মাস পেরিয়ে যখন গ্রীষ্ম আসে অপরূপ সৌন্দর্য্যের সমাহারে তখন সবার মধ্যে ঘুরাঘুরির ধুম পরে যায়। তবে পঞ্চাশটা স্টেটের মধ্যেও আবহাওয়ার তারতম্য রয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে নিউইয়র্কে আমার বসবাস। বিশেষ করে আমরা যারা বাঙালি তারা যেন বেশিই ঘুরাঘুরি ও জটলা পাকাতে ভালবাসি, সেই সাথে রকমারি খানাপিনা।
যাইহোক, আমাদের সাত সদস্যের একটা সখি গ্রুপ আছে। ইনারা হচ্ছেন- ফারহানা, মন্জু, প্রিয়া, মলি, পল্লবী, কংকন আর অবশ্যই এই বনানী। সবাই ঠিক করলাম পরিবার সহ কয়েক দিনের জন্য ক্যাম্পিং এ যাবো। অবশ্য আমি কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দে ছিলাম, অতঃপর সখি প্রিয়ার চাপাচাপিতে রাজি হয়েই গেলাম। এদিকে সখি ফারহানা মোবাইলে ক্যাম্পিং এ যাওয়ার লিষ্ট পাঠিয়ে দিল, প্রিয়ার সাথেই সেগুলো কেনাকাটা শেষ করলাম। তবে সখি কংকন ও পল্লবী যাচ্ছে না বলে মনটা খারাপ হয়ে গেল।

২৪শে জুন, শুক্রবার বিকালের দিকে গাড়ি ভর্তি তল্পিতল্পা গুছিয়ে রওনা হলাম নিউইয়র্ক সিটির বাইরে তবে ষ্টেটের মধ্যেই।জায়গাটার নাম “ওয়াইল্ড উড স্টেট পার্ক”। যেতে যেতেই প্রকৃতিতে নেমে এলো মিষ্টি সন্ধ্যা।
আমাদের পাঁচ পরিবার প্রধানেরা হলেন ফারুক দাদা,নিপু দাদা,হরি দাদা, নারায়ণ ও অমিত দাদা।
আমরা চারটি পরিবার যথাক্রমে পৌঁছে গেলাম কিন্তু হঠাৎ শুনলাম সখি মলিদের গাড়ি টা এক্সিডেন্ট করেছে। খবর পেতেই আমাদের ক্যাম্পিং এর প্রধান পরিচালক ফারুক দাদা, তিনি তড়িঘড়ি করে পৌঁছে গেলেন হাসপাতালে, যেখানে ওদের নেওয়া হয়েছে। থ্যাংকস গড,ওদের কেউ মারাত্মক কোন ইনজুরড হয়নি। পরিচালক ফারুক দাদা এবার যেন নায়ক শাহরুখ খান হয়ে উঠলেন, তিনি ওদের গাড়ির পুলিশ রিপোর্ট করিয়ে ,হাসপাতাল থেকে ডক্টর দেখিয়ে ক্যাম্পিং এ হাজির করলেন। ওদেরকে পেয়ে আনন্দে কান্নায় সবাই ওদেরকে জড়িয়ে ধরলাম। এরপর সবাই মনোযোগ দিয়ে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনার কথা শুনতে থাকলাম । অনুভুত হলো, পৃথিবীর কোথাও নিরবিচ্ছিন্ন সুখ নেই।

মাঝখানে নায়ক হরিদা, পরিবেশ টাকে স্বাভাবিক করার জন্য এটাসেটা বলে পরিস্থিতিকে এগিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা যথাস্থানে পৌঁছানোর পরপরই নায়ক হরিদা নিজের সহ সবার তাবু টানিয়ে গুরু দায়িত্ব শেষ করার পাশাপাশি নতুন সংসার কিভাবে সুখ শান্তিতে ভরিয়ে তোলা যায় তার ব্যখ্যা বেশ চমৎকার ভাবেই দিতে থাকলেন। একে একে গাড়ির তল্পিতল্পা নতুন ঘরে সাজিয়ে গুছিয়ে নিলাম। তবে এদের সবাই আরও কয়েক বছর ধরেই সংসার সাজিয়ে আসছে শুধু আমি ও আমার বর,নব দম্পত্তি।

আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল সবাই আজ রাতের খাবারের জন্য একটা দুইটা আইটেম বাসা থেকেই করে আনার।একটা বড়সড় টেবিলে সব খাবার রাখা হলো।এরইমধ্যে চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে, তাই সাথে নিয়ে আসা চার্জার লাইটগুলো জ্বালানো হলো। খানিক দূরে দূরেই তাবু টানানো বিশাল এলাকা জুড়ে। অন্ধকারে চার্জার লাইটগুলো ঠিক যেন বাস বাগানের জোনাকিপোকার দল যেন এই পরিবেশকে এক ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে। এ যেন এক নতুন দু’দিনের সৌখিনতার সংসার। সবাই সবার খাবার ভাগাভাগি করে খেয়ে সমাপ্ত হলো ডিনার। বাসনকোসন গুলো সবাই হাতে হাতে গুছিয়ে ফেলাম তবে নায়ক হরিদা একটু বেশিই করেন নায়ক বলে কথা।এরপর কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালানো হলো, আগুনের কুন্ডলীর চার পাশে সবাই বসে জমিয়ে আড্ডা। আগুনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য, থেকে থেকেই কেরাসিন তেল যোগ হচ্ছে। তাতে অগ্নি দেবের সাথে সবারই দ্বিগুণ আনন্দ।

এ বিলাসিতার আগুন কেড়ে নিচ্ছিল ঘুম, ক্লান্তি, অতীতের সব দুঃখ ,তবে কেরাসিন ঢালতেই দাউদাউ আগুনের চিৎকার গলা ফাটিয়ে যেন বলছিলো, “হে তাবু বিলাসীর দল তোমরা শুধু আমাকেই উপভোগ করো না, আমি যে অভুক্ত মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা, সেটাও অনুভব করো “।
হৃদয়ের কোনায় হুহু করে কেঁদে উঠল, এই ভেবে যে গরীবের ক্ষুধার তীব্র কষ্টটাও হয়তো এই বিলাসিতার আগুনের মতোই দাউদাউ করে,যেটা শুধু অভুক্তরাই অনুভব করে।

অকস্মাৎ একদল তরুণীর হাসির শব্দে ফিরে এলাম আড্ডার একজন হয়ে। হরিদা ও নিপুদার একটার পর একটা হাসির কৌতুকের ঢেউ যেন আনন্দের স্নান করাচ্ছিল। অন্যরাও দু একটা করে বলছিল কিন্তু নারায়ণ দা ও অমিত দা যেন নিখাদ শ্রোতা, তবে হাসিতে কারও কার্পণ্য ছিল না।সেই সাথে খানাপিনার তো কমতিই নেই।

মধ্যে রাত অবধি চলতে থাকে এ ফোয়ারা, তবে ইতিমধ্যেই ঘুমিয়ে পরেছে সাথে আসা ছোট সেনারা। আর আগুনের কুন্ডলীও যেন নিস্তেজ হয়ে মাতৃরূপা আঁধারের কোলে গভীর নিদ্রায় মিলিয়ে যেতে চাচ্ছে। ঠিক যেমন এক ক্ষুধার্ত বালক সারাদিন ক্ষুধায় ছটফট করে ক্লান্তিতে তার মায়ের বুকে ঘুমিয়ে পরে।সবাই সবাইকে শুভরাত্রি জানিয়ে ফিরে এলাম শান্তির নীড় তাবুতে। আমার দুই রাজকন্যা ঘুমে বিভোর কারণ ওদেরকে ম্যট্রেসের উপর দেওয়া হয়েছে আর তাছাড়া আমেরিকা ওদের জন্যই স্বপ্নের দেশ। আমি ও আমার অর্ধাঙ্গের তাতে জায়গা হয়নি,প্রথম বারের মতো তাবু বিলাসী আমরা, তাই ম্যাট্রেসটা ভুল করেই ছোট সাইজের কেনা হয়েছিল। তাই ক্যাম্পিংয়ের শক্ত মাটিতে বিছানার জন্য হরিদার কাছ থেকে একটা পাতলা চাদরের মতো ধার করা হয়েছিল।সে যাই হোক, আমি আমার অর্ধাঙ্গের বুকে মাথা রেখে কবিতার কয়েকটি লাইন মনের মধ্যেই লিখতে থাকলাম ,সেগুলি কিছুটা এরকম যে- আমি তোমার জন্য গাছ তলাতেও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি,একটা শুকনো রুটি দুজনে ভাগ করে খাবো, তোমার জন্য পৃথিবীও ছাড়তে পারি,তুমি আমার শুধুই আমার এরকম আরও কিছু কথা আর কি। সত্যি কথা বলতে জঙ্গলের মধ্যে তাবুর এই শক্ত বিছানাতে প্রিয়তম ছিল বলেই খুব বেশি খারাপ লাগছিল না।কখনো এপাশ ওপাশ ,কখনো একটু লাভ রোমান্স ,,কখনো ঘুম বুড়ীকে হাতে পায়ে ধরা,কখনো ঘুম যেন আসে সেজন্য স্রষ্টাকে প্রার্থনা করা,ঘুম ঘুম ভান করা,এভাবেই কেটে গেল তাবুর প্রথম রাত্রি।

সকালের মিষ্টি আভা ও পাখিদের কলকাকলীতে জানান দিল বিছানা ছাড়ার। রাজকন্যাদের গুরু ভার রাজার উপর চাপিয়ে দিয়ে সখি ফারহানা ও প্রিয়ার সাথে ছুটে গেলাম নিকটবর্তী সমুদ্রের তীরে সুর্যোদয় দেখার আশায়। সকালের সমুদ্র পারের অপূর্ব দৃশ্য দেখে মনটা অপার শান্তিতে ভরে গেল। সমুদ্র আমাকে বরাবরই খুব টেনে। কি জানি? পূর্ব জন্মে হয়তো সমুদ্রের নীল রংটা আমিই ছিলাম। হাঁটতে শুরু করলাম সমুদ্রের তীর বেয়ে উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যে। সমুদ্রের ঢেউ গুলো যেন তীরের ঝকঝকে নুড়ি পাথরগুলিকে চুম্বনে চুম্বনে বারবার স্নাত করছিলো। আর প্রতিবারই লজ্জাবতী পাথরেরা ভালো লাগা ভালবাসার পরশে নিজেকে পবিত্র করে নিচ্ছে। সমুদ্রের দিগন্ত ছোঁয়া জলরাশি নীল আকাশের সাথে মধু মিলনে বিভোর। আর আমরা,তাকিয়ে আছি পূর্ব দিকে, দিবসের অধীশ্বর সূর্য দেবের দর্শনের পথে। চারপাশের সবুজ বনানীরা শান্তি শুদ্ধতার গঙ্গা জল ছিটাচ্ছে দিকে দিকে। হঠাৎ, সখি ফারহানা চেচিয়ে বলল “সখি,সখি দাঁড়াও তোমাকে কয়েকটা ছবি তুলে দিই”। প্রস্তাবে ভীষণ খুশি হলাম যদিও কোন মেকআপ বা সাজুগুজু নাই, শেষ পর্যন্ত ছবি গুলো ফেইসবুকে দিতে পারবো কি না,সে সবের তোয়াক্কা না করেই সুবোধ বালকের মতে দাঁড়িয়ে পরলাম, এক বিশাল পাথরের উপর যেন সমুদ্র, তার গুরু দায়িত্ব মনে করেই পাথরটি এগিয়ে রেখেছে তীরে,আর খানিকটা রেখেছে তার বুকেই। যাইহোক, শুধু আমিই নই সখিরাও মন ভরেই ছবি তুলে নিল।

ইতিমধ্যেই বেশ কিছু লোকজন ছড়িয়ে ছাঁটিয়ে সমুদ্রের পারে,কেউ মাছ ধরছে ,কেউ বা সূর্য দেবের প্রতীক্ষায়। তবে নুড়ি পাথর ও উর্মিমালার আনন্দ দেখে মনে হচ্ছিল ক্ষণিকের জন্য ওদের সাথী হয়ে যাই, আর অবগাহনে ধন্য করি নিজেকে। এরই মধ্যে সূর্য দেব তার পূর্ণ তেজ ও আলোক ছটায় রাঙিয়ে দিল দিনটাকে।আর জানান দিল হে প্রতীক্ষিতের দল আমাকে দেখো আর ধন্যবাদ জানাও বিশ্ব স্রষ্টাকে ,আর জেনে রেখো সৃষ্টি থেকেও অনেক অনেক গুণ সুন্দর সর্বশক্তিমান মহান স্রষ্টা।

বেশ কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর ফিরে এলাম আমাদের দু’দিনের বসতবাড়িতে। ততক্ষণে সবাই বিছানা ছেড়েছে আর নায়ক হরিদার সাথে অন্যরাও ভীষণ ব্যস্ত ব্রেকফাস্ট বানাতে। রকমারি খানাপিনার সাথে চা কফিতে শেষ হলো সকালের খাবার। আর বেচারা মোবাইলের ক্যামেরা তো আসার পর থেকেই নিরলসভাবে দায়িত্ব পালনে ত্রুটি রাখছে না, যদিও এটা বলার কিছুই নেই। তবুও, ঐ যে কৃতজ্ঞতা স্বীকার,আর কি। এরপর শুরু হলো, সখি গ্রুপের পাল্লাপাল্লির সাজুগুজু, যেন থামতেই চায় না নিজেকে আকর্ষণীয় করার প্রক্রিয়া। যেন এমন মনে হচ্ছে সবশেষে ক্যাম্পিং এর প্রধান মহাদয় এদেরকে পুরস্কৃত করবেন সুন্দর প্রতিযোগিতায়। সে যাই হোক, এবার সবাই মিলে গুছিয়ে গাছিয়ে বেড়িয়ে পরলাম ঘুরাঘুরির উদ্দেশ্যে।

প্রথমেই স্ট্রবেরি ক্ষেতে এলাম।বিশাল এলাকা জুড়ে বিভিন্ন জাতের ফল ও শস্য। স্ট্রবেরি গার্ডেনের নিয়ম হচ্ছে ,যত পারো খাও তবে যেটা সাথে নেবে ,সেটার মূল্য দিতে হবে। তাই,সেটা বুঝে শুনে ,শুরু হলো সকলের ধুমছে স্ট্রবেরি খাওয়া। তবে আমার ছোট কন্যার (আরাধ্যা) খাওয়ার ভাবে মনে হচ্ছিল যে ও জন্মের পর থেকে কোন কিছুই খায়নি। আর এ দিকে বড় কন্যা ( অস্মিতা ) না খেয়ে শুধু ব্যাগে ভরছিল। ওকে তো বোঝানোই মুশকিল হলো যে এগুলোকে মূল্য দিতে হবে চড়া দামে। ভাবা যায়? ফোর নাইন্টি নাইন পাউন্ড। মানে ফাউভ ডলার। আরে বাবা! তুই তো আমেরিকান কিন্তু তোর মা বাবা তো বাঙালী? আমরা তো এটাকে ডলার মনে করেই, আদর করে টাকাই বলি আর ডলারকে টাকাতে রুপান্তর করেই চলি। এসব ভেবে রাগে আমার হার্টবিট স্বাভাবিকতা অতিক্রম করছিল । বড়টাকে পাত্তা না দিয়ে ওর ব্যাগ থেকে এক এক করে স্ট্রবেরি নিজের ও ওর বাপের মুখে ঢোকাচ্ছিলাম।তবে তাতেও শান্তি নেই কারণ এতে বড় বুদ্ধুটা কান্নাকাটি জুড়ে দিল। আর এদিকে ছোট টার খাওয়ার ভাবভঙ্গি দেখে মেয়েদের বাবা এবার আফসোসের দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো,”তোমার মেয়েদের এ অবস্থা কেন?”। এদিকে মাথার উপর রোদটা যেন খা খা করছে ,সব মিলিয়ে রেগেবেগে কটকট গলায় উত্তর দিলাম ,”এর কারণটা আমার থেকে তোমারই ভালো জানার কথা”।এই বলে,দুই কন্যার গুরু দায়িত্ব তাদের পিতাশ্রীর নিকট দিয়ে সথিদের সাথে ছবি তোলায় মনোনিবেশ করলাম।

শেষমেষ, সবার থেকে আমাদেরই ক্ষেত থেকে বের হওয়ার ব্যস্ততা বেশি। আবার ছুটে চল্লো এই পাঁচটা গাড়ি পরবর্তী মিশনে। অতঃপর,বাচ্চাদের পার্ক সহ এক দামী রেস্তোরাঁয় হাজির হলাম সবাই। ব্যাচারী মোবাইলের ক্যামেরা, এবার যেন বেশিই বেসামাল , সেই সাথে খানাপিনার প্রতিযোগিতা। একেতো পেটে রয়েছে সবারই বিনামূল্যের টসটসে স্ট্রবেরি, সেই সাথে এখানকার আমেরিকার সুস্বাদু খাবারের বাহার।প্রথমে ভেবেছিলাম বেশি হয়তো খেতে পারবো না, তবে এ ধারণা ভুল প্রমাণিত করেই সকলেরই হলো উদরপূর্তি। বাচ্চাদের সাথে রাইডে উঠে সখি মহল বাচ্চাদের কেও হার মানালো।তবে বাচ্চাদের জনক মহল শুধু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিল, এ ভেবে যে, তারা খুব দায়িত্বশীল। হঠাৎ করেই তাবু বিলাসীদের পরিচালক ( ফারুক দাদা ) ও নায়ক হরিদা এক গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ডেকে বসলেন।যদিও তিনারা ভীষণ দায়িত্বশীল তবে আমাদের ছাড়া অচল পয়সা। মিটিং এর মূল বক্তব্য হলো আমাদের পরবর্তী মিশন, খানিক পরেই আমরা ঘন্টা খানিকের মতো ড্রাইভ করে সমুদ্র সৈকতে যাবো। এহেন প্রস্তাবে খুশিতে আমিই মনে হয়, একটু বেশি আত্মাহারা কারণ অনুভূত হলো আমি যেন আমার কাছেই ফেরত যাচ্ছি হয়তো সমুদ্রেকে আরও একটু বেশি নীল রং দিতে।

সমুদ্র বীচে এসে পরলাম পরম কর্তব্যে, ও ক্যাম্পিংকে আরও সন্মানিত করতে, সেই সাথে সকলের সিন্ধান্তকেও। আমেরিকান সি বিচ বলে কথা। পার্কিং লট থেকে বেশ খানিকটা বালুকা পথ হেঁটে নিজেদের ভেজালাম সমুদ্রের অসীম নীল নোনা জলে। তবে আমরা বাঙালিরা ছাড়া যারা এখানে এসেছেন তারা প্রত্যেকেই অর্ধ-উলঙ্গ। কিন্তু কারও রুচি ছিল না ওদের কে দেখার। কারণ আমরা সকলেই যেন এক ঝটকায় সমুদ্রের সুবিশাল তরঙ্গায়িত নীলে বন্ধী হয়ে গেলাম। আর আমি? সমুদ্র কে আর কি রং দিবো? নিজেই রামধনুর সাত রঙ মেখে নিয়ে,কন্যাদ্বয় কে সখি প্রিয়ার কাছে দিয়ে এক মূহুর্তের জন্য রোমাঞ্চের উদ্দেশ্য আমার অর্ধাঙ্গ কে জড়িয়ে ধরলাম,কিন্তু সমুদ্র এতটাই ঈর্ষান্বিত হলো যে বিশাল এক উর্মিমালায় এক ধাক্কায় দুজনকেই তীরের বুকে ছুড়ে মারলো। অমিত ( অর্ধাঙ্গ ) বিষয় টাকে মজার মনে করলেও ,আমি কিন্তু সমুদ্র কে ঠিক বুঝে নিলাম। আর এদিকে সমুদ্রের গর্জন ও ঢেউ এর বারাবাড়ি দেখে ছোট কন্যা ভয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না চড়ালো! নে বাবা! এবার তো হয়েই গেল! তবে অমিত কিন্তু এবার আর দায়িত্বশীল রইলো না, সে চুকিয়ে সমুদ্রের সাথেই রোমাঞ্চ। হয়তো ঔ নিজের অস্তিত্ব খোঁজার চেষ্টা করছিল। আর ব্যাচারী আমি? সমুদ্র ও ভালবাসাকে একসাথেই দেখে দেখে তেষ্টা মেটাচ্ছিলাম। আর ফিরে ফিরে আসছিলাম ছোট ও বড়োর মাতৃত্বের পরশে। সমুদ্রের নোনা জল কাউকেই যেন এতটুকু নোনা করেনি সেদিন, করেছিল মধুময়। যদিও পরিচালক ও নায়ক বরাবরের মতোই নিজেদের দায়িত্বশীল করে রাখলেন তবুও সমুদ্রের সৌন্দর্যে নিজেদেরকেও সমুদ্র বিলাসী করে নিলেন।

অবশেষে, সমুদ্রের দুর্দান্ত ঢেউ গুলোর সাথে আর তাল মেলানো গেল না। সমুদ্রের ক্ষুদ্র অংশ বালুকাদের কে সমুদ্রের আশেপাশেই ফেলে রাখতে শুরু হলো ধোয়ামোছার যুদ্ধ। আর সখি মহলকেও যার যার গাড়িতেই ভেজা কাপড়চোপড় পাল্টাতে ভীষণ বেগ পেতে হলো। কারণ আমরা তো আমেরিকান নয়? বাঙালী লজ্জাবতী লালনা। যাই হোক, প্রত্যেকেই সাথে নিয়ে আসলাম অপার মুগ্ধতা ও স্মৃতির মালা। অতঃপর, আমাদের সন্মানিত পরিবার প্রধানেরা ঠিকঠাক মতোই আবার তাবুতেই উপনীত করলেন। সারাদিনের সুপার ব্যস্ততায় এবার তাবু যেন সত্যিই পরম শান্তির নীড়। যার যার মতো এবার চুকিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার পালা।তবে আমার কন্যাদ্বয়ের এতটুকু ক্লান্তি নেই। মাঝেমধ্যেই মনে হয়, কেন যে সৃষ্টিকর্তা বাচ্চাদেরকে এতো এনার্জিটিক করে? তার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝি না। ঘন্টা খানিক নকল বিশ্রামের অভিনয় শেষে বাধ্য হয়ে উঠেই গেলাম সখি মহলে। এবার আড্ডায় শুধুই সখি মহল, মলির তাবুতে সবাই ছিলাম বলে,পরিবার প্রধানেরা এ তাবুকে “নিষিদ্ধ মহল” বলে আখ্যায়িত করে তারা ব্যডমিন্টন খেলতে শুরু করলেন। বেলা ডুবুডুবু, এমন সময়, তড়িঘড়ি করে পৌঁছে গেলাম নিকটবর্তী বিশাল নদীর তীরে সূর্যাস্ত দেখার আশায়। চারিদিকে দিনের ব্যস্ততার হাত ধরেই এক শান্ত সুনিবিড় পরিবেশে, আকাশ আবির রং ছড়িয়ে দিয়েছে সূর্য দেবের বিদায় জানাতে। সূর্যদেব রাজার মতোই সবার সম্মুখে আবছায়া আলোয় আঁধারের ঘোমটায় নববধূবেশী আর এক সন্ধ্যা রানীকে উপহার দিয়ে ধীরেধীরে দিগন্তের নীলিমায় অসীম জলরাশীর বুকে মিলিয়ে গেলেন। তবে ম্যাডাম ক্যামেরা কিন্তু নিরলস ভাবেই আমাদেরকে সঙ্গ দিতে এতটুকু কার্পণ্য করছেন না। তাকে তো বাহবা দিয়ে শেষ করার কোন উপায়ই নেই। এরমধ্যেই আরও কিছু বন্ধু বান্ধব যোগ হলো আমাদের আজকের মিষ্টি সন্ধ্যাকে আরও স্মরণীয় করতে।

এদের একজন ভীষণ সুন্দর গান করেন,সবাই সূর্যাস্ত দেখে ফেরার পর পরিচালক ফারুক ভাইয়া সাথে পরিচালিকা ফারহানা,সবার জন্যই বিশাল খানাপিনার আয়োজন করে ফেল্লেন। আর তাদের বাড়ীও খানিকটা নিকটবর্তী হওয়ায় সুবিধে হয়েছিল আয়োজন করতে। এগুলোর মধ্যে কয়েক ধরনের চিকেন রেসিপি, বারবিকিউ, ফ্রাইড রাইস, জুস, ফল, ব্রেড উল্লেখযোগ্য। আমাদের এলাকা টা যেন রীতিমতো বিয়ে বাড়িতে পরিনত হলো। রান্নাবান্না, খাওয়াদাওয়া, আদর আপ্যায়ন, গান বাজনার আড্ডায় সবাই একসাথেই মেতে উঠেছি। সেইসাথে মধ্য মনি আগুনের কুন্ডলীটা যেন দ্বিগুণ তেজে মনোরঞ্জন করে যাচ্ছে তাবু বিলাসীদের। আর হাত বদলে কেরসিন তেলের আত্মহুতি।চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে এই কুন্ডলীই যেন তাবু বিলাসীদের একমাত্র ভরসা যদিও কিছু চার্জার লাইট ছিল সেগুলোও ক্ষীণ। এ যেন এক ভিন্ন জগৎ। এসব তাবু বিলাসীরা সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ভীষণ কর্মব্যস্ত থাকেন, আর শনি ও রবিবার যেন প্রত্যেকের কাছে ইন্দ্রপুরির অপ্সরীর রূপ হয়ে আসে, কোন কোন মাসে ,আবার কারও কারও কাছে হয়তো প্রতি সপ্তাহেই।আজ সেরকমই এক পরিবেশ।

শুরু হলো গানের আসর, এখানে কম বেশি সবাই গান গাইছে।একের পর এক গান সেই সাথে সখি মহলের নাচ। বিলাসিতার অগ্নি কুন্ডলী কাউকেই আজ রাতে তন্দ্রালু হতে দিচ্ছে না।চলতে থাকে মধ্যে রাত অবধি আড্ডা সেই সাথে নায়ক হরিদা ও নিপুদার হাসির কৌতুক গুলো যেন আড্ডায় হাসি আনন্দের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিলো বরাবরের মতোই। একটা কৌতুক মনের কোনে হানা দিচ্ছে ,সেটা এরকম যে ,এক স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি ভীষণ নিবেদিত তবে সে একেবারে হাঁপিয়ে ওঠেছে, তাই সে এবার স্রষ্টার কাছে গিয়ে বল্লো, “হে দীন দুনিয়ার মালিক তুমি আমাকে স্ত্রী বানিয়ে দাও, আর আমার স্ত্রীকে স্বামী বানিয়ে দাও,আমি আর পারছি না”।স্রষ্টা জানতে চাইলেন তুমি ভেবে চিন্তে সিন্ধান্ত নিয়েছো তো? স্বামী তড়িঘড়ি করে উত্তর দিল হ্যাঁ প্রভু। এরপর স্রষ্টা বল্লো তথাস্তু। স্বামী স্ত্রী হলো আর স্ত্রী স্বামী। এবার কিছু দিন যেতে না যেতেই আবার স্ত্রী রূপী স্বামী মরিয়া হয়ে স্রষ্টার কাছে এসে কান্নাকাটি জুড়ে দিল,আর বল্লো,”হে দীন দুনিয়ার মালিক তুমি আমাকে আবার স্বামীই বানিয়ে দাও দয়াকরে”।এবার স্রষ্টা বল্লো, কিন্তু তোমাকে দশ মাস দশ দিন অপেক্ষা করতে হবে। চোখের জল মুছতে মুছতে তড়িঘড়ি করে স্বামী জিজ্ঞেস করলো কেন? কেন? স্রষ্টা বল্লো কারণ তুমি গত রাতেই প্রেগন্যান্ট(গর্ভবতী ) হয়ে গেছো।আর তাছাড়া যে আসছে তারতো কোন সমস্যা নেই? ব্যাচারা স্বামীর জন্য আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে। দশ মাস দশ দিন , ভাবা যায়?

ইতিমধ্যেই আজকের সন্ধ্যার অতিথিরা এক এক করে প্রস্থান করেছে ,তারাও তাবু বিলাসী তবে আজের জন্য আমাদের অতিথি হয়ে পরিবেশ টাকে আরও জমজমাট করে দিয়েছিল। মধ্যে রাত পার করেও গোটা সখি মহল নাচানাচি হাসাহাসি করতে করতে ক্লান্তিকে আর হার মানাতে পারেনি। তাই, যে যার তাবুতে ফেরত যেতেই হলো। অনেক আগেই আমার কন্যাদ্বয় এয়ার ম্যাট্রেসে আর তাদের জনক ঘন্টা খানিক আগেই ঘুমের দেশে। আর ব্যাচারী আমি,ঢুলুঢুলু আখি নিয়ে চোরের মতো তাবুর শক্ত বিছানায় অর্ধাঙ্গের পাশে আমার জন্য বরাদ্দ জায়গায় শুয়ে পরলাম। আজ রাতে শরীর টা কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করলেও ক্লান্তি ও চোখ, রুক্ষ মৃত্তিকাকে তোয়াক্কা না করেই ঠিকঠাক ঘুমের রাজ্যে ভাসিয়ে নিয়ে গেল।

আজ রবিবার, চমৎকার ঝকঝকে আর একটি সকাল ,সবাই যেন গতকাল থেকে আজকে অনেকটা দেড়ি করেই জেগে উঠলাম। ক্যাম্পিংয়ের ঘন বনানীর পাখিদের কলকাকলী আর সূর্যদেবের মিষ্টি আভাও যেন তাবু বিলাসীদের ঠিক বুঝতে পারলো। তবে খানিকটা অবাক হলেও বুঝতে পারলাম যে তাবুর দ্বিতীয় রাত্রি ঠিকিই ঘুম হলো আমাদের। অনুভূত হলো এভাবেই বুঝি মানিয়ে নেয় রুক্ষ মৃত্তিকার ঘুমোনিয়ারা। আর তাবু বিলাসীরা আসে প্রতি বছর ধবধবে আগুনের ঘ্রাণ নিতে বিলাসবহুল অট্টালিকা ছেড়ে, ক’দিনের জন্য অর্ধছদ্মবেশী গরীব সেজে। কিন্তু সত্যিকারের গুটিকয়েক তল্পিতল্পার গরীবেরা সারাজীবন দিব্যি পার করে দিচ্ছে তাবুর ঘরে। আমরা যারা তাবু বিলাসী তারা ক’বারই বা ভেবে দেখেছি? গরীবের ক্ষুধার যন্ত্রণার আগুন,শক্ত বিছানা,ক্লান্ত শরীর,ভোগ বিলাসীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য, তীব্র শীত উষ্ণতা, মশা পোকামাকড়ের উপদ্রব,এরকম হাজারো সংগ্রাম। তাবু বিলাসীদের কাছে হয়তো এর কোন স্থায়ী সমাধান নেই; তবে সহানুভূতিতো থাকতেই পারে।
**********************************
রচিত- ১লা আগষ্ট ২০২২ নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্র।

——————————————–

গুচ্ছ ছড়া// কবিতা
# তাল পাকা দুপুরে
#মোঃ_জাকিরুল_ইসলাম_জাকির
প্রকাশ – ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২

তাল পাকা দুপুরে
মাছ ধরি পুকুরে
রান্না করে ফুফুরে
খেয়ে যায় কুকুরে

খোকাবাবু খাবে কি
পান্তা ভাতে চায় ঘি
কান ধরেছে মাসি
আদর করে পিসি।

ভাদ্রে মাসে তালের পিঠা
খাইতে লাগে বড়ই মিঠা
তাল গাছ লাগাই তিতা
মাথায় দিয়ে লাল ফিতা।

হলুদ খামে পাঠায় চিঠি
মেয়ে জামাইয়ের বাড়ি
ভাদ্র মাসে জামাই তিথি
আসবে আমার ইতি।

এই ভাদ্রের মাসের গরমে
মন মেজাজ থাকে চরমে
বানাইছে পিঠা মা নরমে
পিঠা খায় জামাই শরমে।

বেলআমলা, জয়পুরহাট সদর বাংলাদেশ
১৯ আগষ্ট ২০২২ লেখা স্বত্বঃসংরক্ষিত।

——————————————–

শিরোনাম :-তোমার চোখে জল
কলমে :-গৌতম হালদার
তারিখ:-০২|০৯|২০২২ইং

কি হয়েছে তোমার,চোখে জল?
কাঁদছো কেনো এভাবে আমায় বল।
আমাকে হারানোর ভয়ে,এমন করছো?
আমি তো আছি তোমাকে রাখবো হৃদয়ে।
আমি যে তোমায় ভালোবাসি অন্তর দিয়ে
হাউ মাউ করে কেঁদে কেঁদে উত্তর দেয়।
আমি ও যে ঘর বাঁধবো তোমার বুকে
আমাকে ফাঁকি দিবে না কখনো
সব কিছু ছেরে এসেছি আমি তোমার কাছে।
মনের বিষন্নতা কাটিয়ে স্বপ্ন দেখেছি তোমাকে
আমার আমিত্ব বলতে তোমাকে ঘিরে।
আমিও আমার অন্ত স্বত্তা সব করেছি দান
তোমাকে ভালোবেসে দিয়েছি যে প্রাণ।
আমার শুন‍্য বুকটা ভরে দিবে তোমার নিঃশ্বাসে
এসেছো ফিরে আবার আমার রক্তিম হৃদয়ে।
কাছে এসো আবার মুছে ফেল তোমার চোখের জল
বাহুডোরে রাখবো বেধেঁ তোমাকে জীবন ভর
সারা জীবন থাকবে আমার মুছো চোখের জল।

——————————————–

বিভাগ–কবিতা
শিরোনাম–“প্রতীক্ষা ”
কলমে– সূর্যকন্যা তপতী ( তপতী দাস)
তারিখ- ০২/০৯/২০২২
5:34 PM
“”””””””””””””””””””””””””””””””””””””””
আমার তুলসী তলায় মাটির অঙ্গনে
সন্ধ্যা নেমেছে ধীরে–
তার ঘনকৃষ্ণ নীল আঁধার শরীরে
বৃষ্টি ভেজা তুলসী মঞ্জুরি বাস
নিভু নিভু দীপ শিখা আধো অন্ধকার
সর্বাঙ্গে আঁধার মাখা নীরব সান্ধ্য ভাষা
শঙ্খ ধ্বনি ভঙ্গ করে নিঃস্তব্দতা
আমার লাল পেড়ে সাদা তাঁতের শাড়িতে
ঘনকৃষ্ণ নীল আঁধার গড়িয়ে পড়ে
উদাসী উঠানের কোনে হাস্নুহানা গাছ
একাকী বিষন্ন মনে দাঁড়িয়ে রাখে
রোদ, বৃষ্টি, দিন রাত্রির হিসেব নিকেশ
সুগন্ধী ফুলের সুবাসে
বিষধর আসে ছুটে—
আ- পৃথিবী–তোমার সর্বাঙ্গে এত বিস্ময়–!!
প্রদীপের শিখা কাঁপে
করতলের আড়ালে—
ঢাকা পড়ে বাঁকা চাঁদ মেঘের আড়ালে
উত্তর বিহীন প্রশ্ন ঘুরে ফিরে উত্তরের আশে
কাঠের উনানে মাটির হাঁড়িতে ফুটছে
রাঙা চাল, রাঙা আলু টগবগ করে
রাত বাড়ে–প্রহরে প্রহরে শেয়ালের ডাক
মানুষটার ঘরে ফেরার হয় না সময়–!!
কঠোর পরিশ্রম করে একটু শান্তির খোঁজে
আ- কন্ঠ সুরা পান করে মধুশালাতে
কিছু বলতে গেলেই রেগে ওঠে
দু’ কলস নোনাপানি উপচে পড়ে চোখের কোনে
ভিজে যায় আঁচলের কোন—!!
হে রাত্রি–তুমি ভোর হবে কখন—?
প্রতীক্ষায় থাকে এক ক্ষত বিক্ষত জীবন।
“”””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””
সূর্যকন্যা তপতী ( তপতী দাস )

——————————————–

ছুটি ছুটি ছুটি
সোনালী আদক
২/৯/২২

এখন আর এ বুকটায় ঝড় ওঠে না, হয় না কোনো কালবৈশাখী,চাপ চাপ মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জনও উত্তাল হয়ে ঝড়ে পড়ে না মনের আঙিনা জুড়ে, বুকের তপ্ত চাতাল ভাসায় না কোনো সুনামী আয়লা,,
শুধুই ধূ ধূ মাঠে দামাল ছেলেদের চাপা কান্নার শব্দ বয়ে আনে, ছুটি ছুটি ছুটি,,
সমুদ্রের ভয়ঙ্কর ঢেউ আছড়ে পড়ে আঁখি তটে, কিন্তু কিনারা ভাঙে না, বাঁধ সাধে বেহায়া সোহাগ,,
সন্ধ্যার অন্ধকার আরো ঘোরতর হয় রজনীর গাঢ়ত্বে , জোনাকির ডানায় ভর করে নিশি ডাকে না ঝরনা তলায়,,
ডাকহরকরা সুখের সংবাদ বয়ে আনে না হৃদয়ের ঝুলি ভরে, গাঙ চিলের শক্ত ঠোঁটে চাঁদের বুড়ি চরকা থামায় না স্বপ্নের দোহাই দিয়ে,
নক্সী কাঁথার মাঠে রাখাল বাঁশী বাজায় না চিরহরিৎ এ হেলান দিয়ে, সবুজ বনানীর ছায়ায়,,
এলোমেলো দমকা হাওয়ায় জীবন খাতার পৃষ্ঠা গুলো ভেসে যায় গগন পথে, উড়ে বেড়ায় রঙিন ঘুড়ির ভোকাট্টায়, ছুঁতে চায় ধূসর মেঘ, বলাকার সঙ্গী হয়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে মনের খেয়াল খুশিতে উড়ে চলে, বাঁধা হীন পৃথিবীর শেষ সীমানায়,,
বেদনার কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেয়ে আবছা গল্প গুলো, মুক্ত বিশুদ্ধ বাতাসে ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় ছুটির আনন্দে, গেয়ে ওঠে ছুটি ছুটি ছুটি,,

——————————————–

সর্বহারা জাগো
সানোয়ার হোসেন

চারিদিকে অন্ধকার জীবন হাহাকারে ভরপুর।
জালেমের কন্ঠে ঐ আওয়াজ শোনো, বাজে ভোর দুপুর।

জ্বলছে আগুন পথের উপর, জ্বলছে পেটের ভেতর।
খোদার আসনে লুটছে পরান, ক্ষুধায় যখন কাতর।

নগরীর প্রলীপ ধারে কাঁদছে মানুষ কাঁদছে আকাশ বাতাস।
বাংলার মাটি দিশাহীন বিদীর্ণ আজ , বাড়ছে রে ক্ষুধার ত্রাস।

আলখাল্লা জগত জুড়ে স্বৈরাচারীর শোষণ বিরুপ ঠাঁয়।
কন্দনে কাঁদো কেনো? খাদ্য গুদাম কি নাই??

এই জগতে যত ভীরু সবার স্থান নরকে।
তুমি হও বিদ্রোহী ভৃগু, রবে ভগবানের বুকে।

ভগবান চায় লেলিহান শিখা! চায় শিশির ভেজা ফুল!
অন্যায় যত রক্ত ঢালো তত, ভাঙ্গো ঐ নদীর কুল।

জাগো রে জাগো.. সর্বহারা জাগো।
আছে যতো কাস্তে হাতুড়ি, ঐ লৌহ কপাটে আঘাত হানো।

যেথা বন্দি মানুষের আহার
সেথায় তুমি যাও ছিনিয়ে আনো ন্যায্য অধিকার।

তোমার যত স্বপ্ন ওরা কেড়ে, ওরা বাড়িয়েছে মেদ ভুঁড়ি।
ওরে ভুখা, ওরে সর্বহারা
ঐ পেটে চালাও! চালাও সর্বহারার ছুরি।

Powered by themekiller.com