Breaking News
Home / Breaking News / ফরিদগঞ্জে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ ॥ দিনব্যাপী মহড়া, ককটেল বিস্ফোরণ

ফরিদগঞ্জে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ ॥ দিনব্যাপী মহড়া, ককটেল বিস্ফোরণ

আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ফরিদগঞ্জ: ফরিদগঞ্জে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে গতকাল রোববার দিনভর উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে ধারালো অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত ছিলো। প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবী করেছেন কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও দেখা গেছে। সংঘর্ষে ও হামলায় জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মশিউর রহমান মিটু ও সাইফুল ইসলাম রিপন, ছাত্রলীগ কর্মী মুসা, রুবেল, (ব্যবসায়ী কানাই লাল জনকসহ) অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। তবে, তাৎক্ষণিক সকলের নাম পাওয়া যায়নি। দুপুর প্রায় ১২ ঘটিকা থেকে ফরিদগঞ্জ পৌর বাজার ও আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ককটেল ও পটকা বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটেছে। বিকাল প্রায় ছয় ঘটিকায় বাজারের পূর্ব প্রান্তে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময়ে জীবন বাঁচাতে পথচারীরা দিগি¦দিক ছুটোছুটি করেন। মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরনের মাঝে পুলিশ নিরাপদ স্থানে ছিলো। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকে আটকের খবর পাওয়া যায়নি।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে, উপজেলা কমিটির সভাপতি বাকিবিল্লাহর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ শনিবার বিকালে সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা করেছিলো। এরপর পৌর সভাপতি আলী নেওয়াজের নেতৃত্বে অপর গ্রুপও একইদিনে কর্মসূচী ঘোষণা করে। ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি হুমকি ধমকি চলতে থাকে। ঘোষণা দিয়ে দু’গ্রুপ উপজেলাব্যাপী শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ দু’গ্রুপের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এতে মোঃ বাকিবিল্লাহর নেতৃত্বাধীন গ্রুপ শনিবার থেকে পিছিয়ে রোববার সমাবেশ ও মিছিলের ঘোষনা দেন।

সূত্র জানিয়েছে, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল রোববার মোঃ বাকিবিল্লাহর নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ সমাবেশের প্রস্তুতি নেন। পৌর ছাত্রলীগ কমিটির সভাপতি আলী নেওয়াজের নেতৃত্বাধীন কমিটিও ঈদ পুনর্মিলনীর ঘোষণা দেন। খবর শুনে পুনরায় পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ দু’টি কর্মসূচী বন্ধের চেষ্টা করে। পাশাপাশি, রোববার সকাল হতে পৌর বাজারের বিভিন্ন প্রবেশমুখে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দু’পক্ষ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে কর্মী সমর্থকদের জড়ো করতে থাকেন। পুলিশের তৎপরতায় কেউই মিছিল নিয়ে বাজারে প্রবেশ করতে পারেননি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে বস্তাভর্তি বিপুল পরিমাণ কাঁচের বোতল, পাথর, ইটেরকণা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এরমধ্যে, পৌর এলাকা ও তার বাইরে কয়েকস্থানে দুপুর ১২ ঘটিকা থেকে থেমে থেমে পটকা ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ছোট ছোট সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বিকাল প্রায় পাঁচ ঘটিকা পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু, সাড়ে পাঁচ ঘটিকা নাগাদ কেরোয়া গ্রামের দিক থেকে একটি মিছিল বাজারের সন্নিকটে ব্রীজ পর্যন্ত যায়। ওই সময়ে উপস্থিত পুলিশ বাহিনীর একটি দল তাদের গতিরোধ করে ও পিছিয়ে দেয়।

মিছিলের খবর পেয়ে অপর গ্রুপ বাজারের মধ্য এলাকা থেকে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধারালো অস্ত্রসস্ত্র উঁচিয়ে দলবদ্ধভাবে ধাওয়া দেয়। ওই সময়ে তারা বৃষ্টির মতো কাঁচের বোতল, ইট পাটকেল ও পাথরের কণা ছুঁড়ে মারে। এতে, কয়েকজন পথচারীকে আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। ওদিকে, ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে অপরপক্ষ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এক পর্যায়ে, এক পক্ষ কোরোয়া গ্রামের দিকে পিছু হটে। কিছুক্ষণ পর সেখানে হামলার শিকার হন জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মশিউর রহমান মিটু ও সাইফুল ইসলাম রিপন। রিপন প্রথমে স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে তিনি চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মশিউর রহমান মিটু প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। সংঘর্ষের সময়ে একজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

গতকাল রোববার ছিলো সাপ্তাহিক হাটেরদিন। ফলে, বাজারে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা বিক্রেতা উপস্থিত ছিলেন। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে পথচারীরা আতংকে ও জীবন বাঁচাতে দিগি¦দিক ছুটোছুটি করেন ও কয়েকজন আহত হন। মুহুর্তে গলি ফাঁকা হয়ে যায়। কর্তব্যরত পুলিশের সামনেই এসব ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

এদিকে, বেলা প্রায় পাঁচ ঘটিকায় মুঠোফোনে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আলী নেওয়াজ এ প্রতিনিধিকে বলেন, প্রশাসনের অনুরোধে আমরা ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান বাতিল করেছি। তবে, সংঘর্ষের পর তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

এদিকে, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ বাকিবিল্লাহর মুঠোফোনে বলেছেন, আমরা বিকাল সাড়ে তিনটায় কালিরবাজারগামী রাস্তার মোড়ে আমাদের মিছিলের কর্মসূচী পালন করেছি। কয়েকটি বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আমরা তথ্য নিচ্ছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পূর্ব বাজার মোড়ের সংঘর্ষের ঘটনা আমরা জানি না। যদি সংঘর্ষ হয়ে থাকে তবে তার সঙ্গে আমাদের ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নন।

সংঘর্ষের বিষয়ে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলেছেন, এতো অস্ত্র কোথায় মওজুদ ছিলো। এগুলো উদ্ধার করা যায়নি কেনো। পুলিশের সামনে সংঘর্ষ হয়েছে কিন্তু কাউকে আটক করতে দেখিনি।

এদিকে, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) প্রদীপ মন্ডল বলেছেন, সহকারী পুলিশ সুপার সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে সকাল থেকে আমাদের পুলিশ বাহিনী চারিদিকে তৎপর ছিলেন। কোনো প্রকার অপৃতীকর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু, সন্ধ্যার পূর্ব মুহুর্তে অতর্কিতে দু’গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়লে পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কোনো টিয়ারসেল বা শর্টগান থেকে গুলি ছোঁড়া হয়নি। অন্য প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র বহনকারীদের খুঁজে বের করে আটক করা হবে।

Powered by themekiller.com