Breaking News
Home / Breaking News / ফরিদগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারের মধ্যে পাল্টাপাল্টি চরথাপ্পর, চাপা ক্ষোভ

ফরিদগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারের মধ্যে পাল্টাপাল্টি চরথাপ্পর, চাপা ক্ষোভ

আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ফরিদগঞ্জ: ফরিদগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের মধ্যে পাল্টাপাল্টি চরথাপ্পর মারার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার ছয়দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনার কোনো মিমাংসা হয়নি। কোনো পক্ষ কোথাও অভিযোগও করেননি। জন্মনিবন্ধন ও ওয়ারিশান সার্টিফিকেট প্রদানে কালক্ষেপণ ও অতিরিক্ত টাকায় আদায়ে বাকবিতন্ডার জের ধরে ঘটনার প্রকাশ বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। চেয়ারম্যানের লোকজন দ্বারা পুনঃ হামলার শিকার হয়েছেন বলে মেম্বার দাবী করেছেন। খবর শুনে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। উপজেলার ১৫ নং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ঘটনা ঘটেছে রোববার (৩রা মে) দুপুরে।

সরেজমিন প্রত্যক্ষদর্শী, ভূক্তভোগী ও ঘটনা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৫ নং ইউপির কয়েকজন নারী জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেটের জন্য ইউপি কার্যালয়ে যান। আবেদন ফি হিসেবে তাদের কাছ থেকে ২ থেকে আড়াই শত টাকা হারে আদায় করেছেন সচিব গোলাম মোস্তফা। কিন্তু, প্রায় দুই সপ্তাহেও তারা সার্টিফিকেট পাননি। এতে, খাদিজা বেগম (৩৬), আনোয়ারা বেগম (৫০) ও ফরিদা বেগম (৫০)সহ বেশ কয়েকজন নারী পুরুষ রোববার (৩রা মে) ইউপি কার্যালয়ে যান। ওইদিনও তাদের বলা হয় “অন্যদিন আসেন”। এতে, ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার ফারুক হোসেন লিটন “অন্যদিন আসেন” বলার কারণ জানতে চাইলে ইউডিসি কর্মী মোঃ সজিব বলেন, এখনও তাদের আবেদন হয়নি। কিন্তু, সচিব গোলাম মোস্তফা বলেছেন, আবেদন হয়েছে। এ নিয়ে ইউডিসি কর্মী মোঃ সজিব ও সচিব গোলাম মোস্তফার সঙ্গে মেম্বার এর বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান কাউসার উল আলম কামরুল তার কক্ষ থেকে সচিব এর কক্ষে যান। ওই সময়ে মেম্বারের সঙ্গে চেয়ারম্যানও বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে মেম্বারের গালে চরথাপ্পর মারেন চেয়ারম্যান। ওই সময়ে উভয়ের মধ্যে তর্কের সৃষ্টি হয়। কিছুক্ষণ পর মেম্বারও চেয়ারম্যানের গালে চরথাপ্পর দেন। অন্তত ছয়জন মেম্বার ও ৩০ জন নারী পুরুষ সমস্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।

এদিকে, কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে চেয়ারম্যানের নিকটাত্মীয়সহ বেশ কিছু সংখ্যক যুবক উপস্থিত হয়ে লিটন মেম্বারের ওপর চড়াও হয় ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ওই যুবকরা চেয়ারম্যানের পক্ষ নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। ওই সময়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের এস.আই. নাছিরের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাদের সামনেই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে লিটন মেম্বার দাবী করেছেন।

এদিকে, ঘটনার ছয়দিন অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু, উদ্ভুত ঘটনার কোনো মিমাংসা হয়নি। কোনো পক্ষ কোথাও অভিযোগও করেননি। সংশ্লিষ্টজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উভয়ের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের মধ্যে নানা বিভাজন তৈরি হয়েছে। দ্রুত মিমাংসা না হলে পরবর্তীতে অনাকাংখিত কোনো ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে।

এদিকে, ভূক্তভোগী নারীরা বলেছেন আমরা জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেটের আবেদন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছি শুনে লিটন মেম্বার জানতে গেলে বাকবিতন্ডা ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, আমরা দুই ও আড়াই শত টাকা হারে প্রতিটি নতুন জন্মনিবন্ধনের জন্য জমা দিয়েছি। তবে, শুনেছি নতুন নিবন্ধন ফি ৫০ টাকা।

মেম্বার ফারুক হোসেন লিটন গতকাল শনিবার বলেছেন, আমি হাসপাতাল কাল থেকে এসেছি। চিকিৎসার জন্য ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিতে পারিনি। তবে, উনাকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছি। যদি, চেয়ারম্যান সুষ্ঠু সমাধান না করেন তাহলে আমি পরবর্তীতে লিখিত অভিযোগ নিয়ে স্যারের কাছে যাবো। এক প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, আমি আত্মরক্ষার্থে চেয়ারম্যানের গালে থাপ্পর দিছি।

সচিব গোরাম মোস্তফা বলেন, ওই নারীরা এক সপ্তাহ আগে আবেদনের জন্য আমার কাছে কাগজপত্রসহ ২০০ শত টাকা হারে জমা দেয়। তবে, নিবন্ধন হয়নি। এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে মেম্বারের বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হলে চেয়ারম্যান এসে মেম্বারকে তার কক্ষের সামনে নিয়ে যান। সেখানে কি হয়েছে আমি দেখিনি, শুনেছি।

চেয়ারম্যান কাউসার উল আলম কামরুল বলেছেন, ফারুক হোসেন লিটন (মেম্বার)কে জন্মনিবন্ধন নিয়ে এখানে রাত ১০-১১ টা পর্যন্ত বসে থাকতে দেখেছি। এটা উনার ব্যবসা কি না জানি না। উনারা (সচিব ও ইউডিসি কর্মী) কিভাবে সেবা দিচ্ছে জানি না। তাদের সাথে আমার দ্বন্দ্বই হচ্ছে- নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। লিটন মেম্বারের চিৎকার শুনে আমি গিয়ে বারণ করি, তার সঙ্গে তর্কের সৃষ্টির হয়। রতন মেম্বার বাধা দিলে বলে আপনি কি গুন্ডা পালেন। ওই সময়ে তাকে দুইটা থাপ্পর দিছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, খবর পেয়ে কিছু লোকজন আসছে। তাদের আমি সংঘর্ষে জড়াতে দিইনি। দিলে অনেক খারাপ অবস্থা হতো।

এ বিষয়ে এস.আই. নাসির উদ্দিন গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছেন, আমরা উপস্থিত হয়ে মেম্বার লিটনকে উদ্ধার করে বাড়ি পাঠিয়ে দেই।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেছেন, চেয়ারম্যান ও মেম্বারের মধ্যে মারামারির খবর পেয়ে ফোর্স পাঠিয়েছি। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। তবে, এরপর কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেননি।

Powered by themekiller.com