Breaking News
Home / Breaking News / ’আলো’কে ঢাকিছে আঁধারে, আহারে!!————শাহরিয়ার পলাশ

’আলো’কে ঢাকিছে আঁধারে, আহারে!!————শাহরিয়ার পলাশ

’আলো’কে ঢাকিছে আঁধারে, আহারে!!!!
শাহরিয়ার পলাশ…

সামনের হেড লাইটটা বড় বেশী তীক্ষ্ম। তাকানো যাচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশ কেন যে ব্যবস্থা নেয় না, সেটা এক বড় বিষ্ময়! হেড লাইটের অর্ধেক কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেয়ার নিয়ম থাকলেও অনেক চালক মালিক এই নিয়ম জানে না। ফলে বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য গাড়ী চালকদের অনেক সমস্যা হয়।

আমি মোটর সাইকেল চালাচ্ছিলাম। রাত ১০টার পর রাস্তা ফাঁকা। তাই গতি একটু বেশী। বাবুরহাটের মতলব রোডের মাথা পার হওয়ার পর গতি আরো বাড়ালাম। তখনই বিপরীত দিকে থেকে আসা মাইক্রোবাসটি আমার ডান দিকে থেকে আমাকে আঘাত করল। আমার কিছুই মনে নেই। শুধু আকাশের দিকে উড়ে যাওয়ার কথা ছাড়া।

ঘটনাটি ২০০৪ সালের। অক্টোবর মাসের ৮ তারিখ। যখন আমার জ্ঞান ফিরল তখন আমাকে হাসপাতালে আবিস্কার করলাম। মাথায় ৩২টা সেলাই। পা ভেঙ্গে গেছে। দুই হাতের কনুই থেকে আঙুল পর্যন্ত সব চুরমার। মুখের এক প্রস্থ চামড়া নেই হয়ে গেছে। ডাঃ শাহাদাত হোসেন, ডাঃ মোবারক হোসেন দুজন মিলেই কাজ করলেন। ৫ ঘন্টার সফল অস্ত্রপোচার শেষে আমাকে কেবিনে দেয়া হলো।

এর মাঝে আরেক ঘটনা ঘটল। আমাকে নিয়ে আসে কিছু আন্তরিক মানুষ। আমাকে আনার পর অন্য একজন দেখেন একটা আঙুল রাস্তায় লাফাচ্ছে। অন্য একটি ট্রেক্সিতে (তখন সিএনজি চালু হয়নি) করে সে আঙুল নিয়ে আসল মাসুদ। বাবুরহাট মাল বাড়ি হলো তার আবাস। শুধু তাই নয় সে আমার মোবাইল, টাকা, মানিব্যাগ, মোটর সাইকেল সবই তার হেফাজতে রাখল।

হাসাপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে প্রথমে আমি মাসুদের বাড়িতে যাই। ওরা ৪ জন ছিল। আমি ৪ টা পাঞ্জাবী নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু উপহার নয়, তারা আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না! মনে হয় আপন সহোদর বাড়ি ফিরে এসেছে। এর আগে এদের কাউকে আমি চিনতাম না। কিন্তু পরে এরা সবাই আমার ভালো বন্ধু হয়ে যায়। ওরা উসিলা ছিলো। হয়ত সাহস করে এগিয়ে না আসলে এতদিন কবরে আমার হাড় গোড় এ পঁচন ধরে যেতো। আল্লাহ যাকে বাঁচায় মাসুদদের মতো ভালো মানুষের হাত ধরে বাচাঁয়।

এখনো আমার সে বিভৎস ছবি দেখলে ভয় পাই আমি। অনেক লোকজন আসছে। এক পর্যায়ে মানুষের সাথে কথা বলা বন্ধ করার জন্য ডাক্তাররা সবাইকে আটকে দিতে লাগলেন।

আমাকে জানানো হলো ৬ মাসের আগে হাটতে পারবো না আমি। মানুষের ভালোবাসা তখনই টের পাই আমি। অনেকেই ছিলেন যারা রোজা রেখেছেন। নিয়ত, মানত, কতকি? কেউ মসজিদে মিষ্টি খাইয়ে মিলাদ পড়াচ্ছেন, তো কেউ এটা সেটা খাবার নিয়ে হাজির হচ্ছেন।

মনের জোড় ছিল আমার। নদীতে মানুষ পড়লে নদীই শিখিয়ে দেয় কিভাবে তাকে বাঁচতে হয়। আমার অবস্থাও তাই। অসম্ভব মনের জোড়ে আমি আজকের এই দিনে ২৮ দিনের মাথায় আবার দাঁড়াতে পেরেছি। এবং দু’টি স্ক্র্যাচে ভর দিয়ে আবার দাঁড়ানোর সুখ অনুভব করি।

আমার খুব স্পষ্ট মনে আছে দোতলার সিড়ি থেকে নীচে নামতে আমার ৪৫ মিনিট সময় লাগে। তারপর আরো প্রায় ৪ মাস পর আমি স্বাভাবিক মানুষের মত হাঁটতে পেরেছি।
আল্লাহর কত নেয়ামত আমরা উপভোগ করি, সেটা বিপদে না পড়লে আসলে বুঝা যায় না। ৮ অক্টোবর এবং ৬ নভেম্বর তাই আমার মনের ক্যালেন্ডার থেকে কখনো মুছে যাবে না। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

লেখক শাহরিয়ার পলাশ, জেলা প্রতিনিধি ইউএনবি।

Powered by themekiller.com