” বিশ্ববাসীর কথা ভাবুন,
মাথা ঠান্ডা রেখে শান্তির পথ তৈরী করুণ ”
দিন যতই যাচ্ছে ততই ইউক্রেন রাশিয়া ইসু এখন দুটি দেশের উত্তেজিত কার্যকলাপ প্রথমেই ন্যটোর মাথা ব্যথার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের মাথা ব্যথার কারণ তো অবশ্যই, সেইসাথে এই ত্রিমুখি বিরোধ এখন সমগ্র রাস্ট্র বা দেশ গুলোর জন্য শুধুমাত্র প্রভাব না দারুণ প্রভাব ফেলেছে। ইউক্রেন ইসুতে ন্যাটো বিস্তার সংক্রান্ত আতঙ্ক উষ্কে দিয়েছে রাশিয়াকে, যেটা বারবার ইউক্রেনের নামের সাথে স্পষ্ট হয়েছে আসলে এই যুদ্ধ শুধুমাত্র ইউক্রেন না বরং ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে ন্যাটোর রাশিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত অগ্রসর, যেটা রাশিয়া তার অভন্তরীণ বিষয়গুলোতে হুমকি বলেই মনে করে।
রাশিয়ার বিপক্ষে সম্মুখ যুদ্ধে পশ্চিমারা সরাসরি যুদ্ধে না নামলেও এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ নিষেধাজ্ঞার কবলে ফেলতে চেয়েছে রাশিয়াকে, যেটা ইউক্রেনে রাশিয়ার বর্তমান হামলার জন্য কোন প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে না, পুতিন তার লক্ষে অবিচল রয়েছেন এবং ইউক্রেন দখলের জন্য লাগাতার বিভিন্ন আক্রমণ বৃদ্ধি করেই যাচ্ছেন। যার অর্থ যে কোন মূল্যে রাশিয়ার সীমান্ত এলাকাতে পশ্চিমাদের তৎপরতাকে প্রতিহত করা। এখানে ইউক্রেন যেহেতু রাশিয়ার সীমান্ত রাস্ট্র সেজন্য যে কোন ভাবে ন্যাটোর সাথে ইউক্রেনের বর্তমান সংযুক্ত হবার বাসনাকে পুতিন যে কোন ভাবেই হোক ঠেকাবেই, এটা স্পষ্ট।
রাশিয়ার এই ইউক্রেন ইসুতে পশ্চিমা রাস্ট্র গুলো রাশিয়ার বিপক্ষে এবং ইউক্রেনের পক্ষে থাকলেও রাশিয়া যে একদম একা এটাও বলা যাবে না। কারণ ইদানিং আন্তর্জাতিক মিডিয়ার বিভিন্ন তথ্য ও সংবাদে এই প্রসঙ্গে বারবার আরও একটি দেশের নাম আসছে যেটাকেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ হুমকি বলেই ন্যাটো মনে করছে। সেই দেশটি হলো চিন। এপর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রাস্ট্র পশ্চিমাদের সমর্থন করলেও বিশ্বের আরও একটি অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তিধর দেশ চিন কার্যত পশ্চিমাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে রাশিয়ার সাথে সব ধরণের বানিজ্যিক সহ বিভিন্ন সহযোগিতা অব্যাহত রেখে অনেকটা স্পষ্ট করে দিয়েছে তাদের অবস্থান।
রাশিয়ার পাশাপশি ন্যাটোর অন্যতম মাথা ব্যথাও চিনের ক্রমবর্ধমান শক্তি বৃদ্ধির ঘটনা। বলা হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন জরিপ থেকে উঠে এসেছে ভূ-রাজনৈতিক ভাবে চিন দিন দিন ন্যাটোর সমকক্ষ হয়ে উঠছে। যেটা ন্যাটোর নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। যদিও ন্যাটো চিনের সাথে কোন রকম শীতল যুদ্ধে না জড়াবার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্ত বর্তমান পরিস্থিতির কারণে একদিকে রাশিয়ার ন্যাটোর সম্প্রসারণের ব্যপারে কঠোর অবস্থান, যেটাকে তারা তাদের অভন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করে, অন্য দিকে রাশিয়ার সাথে বর্তমান পরিস্থিতে ইউক্রেন ইসুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার পক্ষে পশ্চিমাদের সমর্থন থাকলেও অধিকাংশ দেশ সহ চিন ভারতের মত শক্তিধর দেশ গুলোর নীরব রাশিয়ার পক্ষকে সমর্থন এবং নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত একটা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে, যেটা একটা বড় ধরণের সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করছে। রাশিয়া, চিন, ভারত এরা তিন জনেই বানিজ্যিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ গুলোর অন্যতম, যাদের উপর বর্তমান বিরোধী ন্যাটো রাস্ট্র গুলো সহ পিশ্চিমা রাস্ট্র গুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্ভরশীল। সেদিক থেকে রাশিয়া যেমন জানে যে এই নিষেধাজ্ঞার জোর কতটুকু। নিষেধাজ্ঞার কারণে জ্বালানি তেল সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য সরবরাহের বাজার খোদ ন্যাটোর রাস্ট্র গুলোকেই ভোগাচ্ছে, যার তথ্য চিত্র এখনই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যেহেতু এই গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক উপকরণ গুলোর বিকল্প তৈরির জন্য যেমন সময়ের ব্যাপার, তেমনই এই নিষেধাজ্ঞা ঠিক কতদিন ধরে রাখতে পারবে আমেরিকা সহ তাকে সমর্থনকারী বিভিন্ন রাস্ট্র, সে ব্যপারে যেমন সন্দেহ আছে তেমনই চিনের মত আন্ত-রাস্ট্রিয় ভাবে প্রভাব ধরে রাখা বা বিস্তার করতে থাকা চিনের বর্তমান বানিজ্য নীতির নামে যে আচরণ উঠে আসছে, তাতে কারা প্রথম বিপাকে পড়বে সেটাও দিন গেলেই আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
পৃথিবীর বর্তমান সময়ে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে এই প্রথম এরকম বড় ধরনের রাশিয়ান পক্ষ থেকে আঘাতকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক ভাবে যে ভূরাজনৈতিক অর্থনৈতিক এবং স্থিরতার ব্যাপক অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে এই ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ আসলে কোন দিকে মোড় নেবে সেটা ন্যটো সহ পশ্চিমা রাস্ট্র এবং বাকি শক্তিধর রাস্ট্র গুলোর মাথা কতটা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি বীবচনা করে সিদ্ধান্ত ও সমঝতার মনোভাবের প্রয়োগ করবে সেটার উপরেই নির্ভর করছে বলে আমি মনে করি। কারণ এখানে পক্ষ বিপক্ষের সবার যুক্তিই তাদের দিক থেকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে যদি তাদের প্যাঁচে তারাই নিজেদের বেঁধে রাখে, একবার ভাবুন বিশ্বের অনুন্নত রাস্ট্র গুলোর অবস্থা কেমন হবে, যারা এই সমস্ত রাস্ট্র গুলোর সহযোগিতার উপরেই অনেকটা নির্ভরশীল? আর এই অনুন্নত রাস্ট্র গুলোকেও এভাবেই তারা জিম্মি করে রেখেছে নিজেদের বিভিন্ন সার্থেই। যেটা এখন তাদের থেকে এই অনুন্নত রাস্ট্র গুলোর জন্য সব থেকে বেশি ভোগাচ্ছে এবং ভোগাবে।
বিশ্বমানবতার দোহায় দিলে হবে না। কাজে প্রমাণ এখন খুবই দরকার। কারণ এই পরিস্থিতির ভোগান্তি বহুদিন আমাদের ভোগাবে। এখানে সবার সার্থকেই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে, কথা শুনতে হবে, পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণের জন্য যুদ্ধের বিকল্প রাস্তা তৈরী করতে হবে। বিশেষ কোন শক্তিধর রাস্ট্রের তাবেদারী থেকে বের হয়ে এসে সমগ্র মানব জাতির জন্য চিন্তা করতে হবে। এখানে সার্থ দেখে সার্থপরের মত আচরণ করে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির তৈরি করলে, তাদের সহ বড় রাস্ট্র গুলোকেই এই দায়ভার নিতে হবে।
মানুষের জীবন দিয়ে এবং মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে কখনও বিশ্ব শান্তির চিত্র আঁকা সম্ভব বলে আমি মনে করিনা। সুতরাং এখন সময় সবার সার্থ চিন্তা করা এবং সবার কথা ভাবা। যে দায়িত্ব আপনাদেরকেই নিতে হবে। যুদ্ধ কখনও সমাধান নয়। বরং লাশের লাইনকে বৃদ্ধি করা।