Breaking News
Home / Breaking News / কবি সানোয়ার হোসেন এর গল্প “স্বার্থান্বেষী”

কবি সানোয়ার হোসেন এর গল্প “স্বার্থান্বেষী”

গল্প: স্বার্থান্বেষী।
সানোয়ার হোসেন

(কেউ না পড়েই দয়া করে মন্তব্য করবেন না।
আর যদি এই লেখায় আলোচনা সমালোচনা থেকে থাকে, তবে অবশ্যই সমৃদ্ধশালী ভাষায় করবেন। নয়তো ব্লক করতে বাধ্য হবো।)

ভোরের আলো চুমিয়ে চুমিয়ে ভেসে আসে মুয়াজ্জিন এর মধুর ধ্বনি।
অন্তরে অচিন সুখ উজ্জীবিত হয় জীবন জীবিকার প্রাণ শুদ্ধ করার গ্লানিতে।
ঘুম ভাঙ্গা পাখির ডানা মেলা শব্দের কুঞ্জমোহনের তালে তালে আমি হেঁটে হেঁটে চলে যায় মসজিদে সিজদা দিতে।
আল্লাহর উপর চরম আস্থা রেখে সম্পূর্ণ করি আমার প্রতিটি ইবাদাত।
ইমামের বজ্র কন্ঠের ওয়াজ শুনে আঁতকে আঁতকে উঠে আমার শরীর। কাঁটা দিয়ে উঠে পশম গুলো।
আর তখনই হাদিস কুরআন অনুসারে ঘৃণা করতে থাকি, বিধর্মীদের। কখনোই বিধর্মীদের চোক্ষে দেখতে পেতাম না। এভাবে সময় বয়ে যেত।
এক পর্যায়ে জীবন জীবিকার তাগিদে ছুটে এলাম গ্রাম থেকে শহরে।
শহরে আসার পর স্বল্প বেতনে চাকরি করি।
সপ্তাহের ১দিন হাসি আনন্দে কাটলেও বাবা মায়ের কথা মনে করে ৬দিনই কষ্টে কাটে।
তবুও চলছে সময় সময়ের টানে।
এর মাঝে একদিন সকালে মা ফোন করে আমাকে বলে, আজকে (….) বলে গেলো! সামনে মাসেই তার সুদ আসল সহ সম্পূর্ণ টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। সেই টেনশন নিয়েই আমার কর্মস্থলে যেতে গাড়ির অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
আমার পাসে একজন মধ্যবয়সী লোক গলায় কাঠের মালা দিয়ে এসে দাঁড়ালো। আমি তার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম, বেশ সুন্দর গঠনমূলক সুস্বাস্থের অধিকারী মানুষ। কিন্তু যেহেতু কাঠের মালা গলায় দিয়ে আছে, সেহেতু বুঝায় যাচ্ছে সে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। তার সাথে আমার কথা বলা বা মেশা যাবে না।।
কারণ আল্লাহর নির্দেশ। তাই একটু সরে দাড়ালাম। এমন সময় আমি যেনো হঠাৎই আনমনা হয়ে গেলাম, আর তখনই পিছন থেকে আমাকে টান দিয়ে ফেলে দিলো রাস্তার পাশে একটি দোকানের উপর। আমি পড়ে গিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম ঠিক সেখান দিয়েই দুর্বার গতিতে চলে গেলো একটি বাস।
তার পর ঐ লোক আমার কাছে এসে বললো, আপনি পাগল নাকি? দাড়িয়ে থাকবেন রাস্তায় লক্ষ্য রাখবেন না। আমি যদি আপনাকে না ফেলে দিতাম, তবে কি হতো??তার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে থাকলাম। যেনো আমি বোবা হয়ে গেছি। কোনো কথা আমার মুখে আসছে না।
মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফেরার ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগল আমার দুই পায়ের হাঁটু। আর ঘামতে লাগলো আমার সমস্ত শরীর। কিছুক্ষণ পর সেই লোক গাড়ি ধরে চলে গেল।
আমিও আরেকটি গাড়ি ধরে চলে গেলাম আমার কর্মস্থলে। কর্মস্থলে গিয়ে আর কিছুই ভালো লাগছে না। কারণ আমার ধর্ম কে বাচিয়ে রাখতে, যে মানুষটিকে ঘৃণা করে দূরে দাঁড়ালাম, সে মানুষটিই আমাকে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বাঁচিয়ে আনলো। অথচ সারা জীবন তার মতো বিধর্মীদের আমি ঘৃণা করে আসছি।
আমি কি ঠিক করেছি?
বোধহয় ঠিক করিনি।
কিন্তু আমার ধর্ম তো তাই বলে,যে, তোমরা বিধর্মীদের বন্ধু ভেবো না। যারা বিধর্মীদের সাথে সম্পর্ক রাখে, আল্লাহ তাদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে, পাশে থাকে না।
কিন্তু আমি তো তার সাথে কোনো সম্পর্কই করিনি, কথা পর্যন্তও বলিনি।
অথচ ঐ লোকটাই আমাকে বাঁচালো
আমার আল্লাহ কেনো আমাকে বাচালো না?
আল্লাহ কেন আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো না?
নানান প্রশ্ন মনের মধ্যে জাগলো।
তারপর থেকে জীবনের অতীতের সকল কার্যকলাপ ভেবে ভেবে গবেষণা করে দেখলাম।

যখন পারিবারিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে পরে আমার পরিবার। ঋণ গ্রস্থ হয়ে পড়ে।
এবং ঋণ গ্রস্থ হয় সেই সব মানুষের কাছে, যারা সমাজের স্তম্ভ। যারা সমাজ থেকে সুদ ঘোষ অন্যায় অত্যাচার দূর করে, সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে, মসজিদে ওয়াদা করে, এবং প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অনেক টাকা পয়সা দান করে। পরিমাণে অধিকাংশ তারাই সুদ খায় এবং অশ্লীল অন্যায় অত্যাচারের সাথে জড়িত।
তারা কেবলই ধর্মের বাণী শুনিয়ে লক্ষ কোটি টাকার মালিক হওয়ার ভঙ্গিতে ধার্মিক সেজেছে।
আর সাধারণ মানুষদের হারাম হালালের কথা শুনিয়ে
জাহান্নাম ও জান্নাতের ভয় দেখিয়ে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ গড়ে তুলছে।
সমাজে অন্যায় অত্যাচার নির্যাতন কে তারাই সমর্থন করতে, অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখছে আমাদের মতো অশিক্ষিত মানুষদের।
এখন বুঝি ওরা কেউ ধর্ম বিশ্বাসী নয়, বরং স্বার্থান্বেষীদের দালাল।

Powered by themekiller.com