Breaking News
Home / Breaking News / কবি সাবেরা সুলতানা সুমী এর কবিতা “যুদ্ধ শিশু”

কবি সাবেরা সুলতানা সুমী এর কবিতা “যুদ্ধ শিশু”

কবিতাঃ-যুদ্ধ শিশু
লেখাঃ-সাবেরা সুলতানা সুমী

আত্মসম্মানবোধ ত্যাগ করে
একজন পৈশাচিক সৈনিকের
বাসনা মিটিয়ে ছিলেন জননী।

দু বিনুনী করা ষোড়শী মেয়েটি
সবেই পেরিয়েছে স্কুলের গন্ডি।
পরাজিত হয়ে ছেড়ে গিয়েছেন
সবুজ পৃথিবীর গন্ডিটাই।

দশ মাস দশ দিন ধরেছেন গর্ভে আমায়
কতটা নির্যাতিত হয়েছেন বলেননি তো?
কে শুনবে মায়ের দুঃখের কথকতা?
এক্কা দোক্কা খেলায় মেতে থাকা মা আমার!
নজরে আসে সেনাদের ।
সেই যে একাত্তরের দিনগুলিতেই।

তখনও স্বপ্ন নেচে বেড়াতো মায়ের চোখে ।
হানা দেয় একদিন গ্রামে ছিনিয়ে নেয় আমার প্রিয় মাকে হায়েনার দল।
কত রাত কতদিন হয়েছেন নির্যাতিতা?
কেউ তো জানে না মায়ের নিদারুণ কষ্টের কথা।

হঠাৎ একদিন খুব ভোর সকালে,
গোয়ালঘরে বসে একলা একাকী আমার মা বসে কাঁদেন নিরবধি দুচোখে অশ্রূর বন্যা ।
হারিয়েছেন সম্ভ্রম শ্রী নেই আর মুখের
কোথায় হারিয়ে গিয়েছে সেই শিউলি?
হ্যাঁ নামটা ছিল ফুলের নামেই মায়ের।

লালিমা মাখা মুখটিতে হয়নি তো
রাঙানো রঙিন টিপ!
দেয়নি তার ভালোবাসার মানুষটি
সিঁথিতে সিঁদুর।
এ মুখ দেখাবেন কাকে মা জননী?
সিঁদুর দেবার মানুষটিও আছে যে যুদ্ধে।

এ যুদ্ধের দিন কি হবে না শেষ ভাবে মা।
পেটের ভেতর অস্তিত্ব আমার!
কি করবেন মা এ কি পাপের শিশু হবে?
কারো ঘৃনা আর কারো নির্যাতনের শিকার
এ আমার কি হবে?
ভেবে আকুল আমার মা জননী।
সমাজের চোখে একজন নষ্টা কূলটা।

অথচ দেশের বীরাঙ্গনা আমার মা।
একদিন পৃথিবীর আলো দেখালো
বীরাঙ্গনা মা আমার।
স্বাধীন দেশে জন্ম হলো
মায়ের মুখেই নাম রাখা স্বাধীন
আদৌ কি স্বাধীন আমি?

দেখিনি মায়াবতী মায়ের মুখখানা।
প্রসবের যন্ত্রণায় কাতর মা জননী
ছেড়ে গেলেন আমায় এ পৃথিবীর বুকে
একজন যুদ্ধ শিশুকে !
কি নাম তার সাজে?

নির্যাতিতা মা হলেন দেশের বীরাঙ্গনা।
কতজনের ইজ্জত আর রক্তের বিনিময়ে
পেয়েছি স্বাধীনতার স্বাদ কেউ কি জানো ?
বলবে আমায় জানতে চায়!
একজন যুদ্ধ শিশু?
একজন নয় এমন হাজারো
যুদ্ধ শিশু ।
কোনদিন ও হবেনা বলা আমার
” বাবা বড্ড ভালোবাসি”।

জন্মটাই যে আমার এক পাপিষ্ঠের
লালসার শিকার যুদ্ধের ময়দানে।
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মেতে উঠা
লোভী এক মানুষ নামের
অমানুষের বীর্যে ।।

Powered by themekiller.com