Breaking News
Home / Breaking News / কবি ইতি ঘোষ এর গল্প “অদ্ভুত বন্ধু”

কবি ইতি ঘোষ এর গল্প “অদ্ভুত বন্ধু”

বিভাগ — গল্প ।
শিরোনাম — অদ্ভুত বন্ধু
কলমে – ইতি ঘোষ

নন্দিতা সব ধরনের গল্প লিখতে দক্ষ হলেও ঠিক জমিয়ে ভূতের গল্প লিখতে পারে না । ওর ভূতের গল্প ছাড়া সব গল্প পাঠক মহলে বেশ সমাদৃত । লেখিকা হিসেবে বেশ সুনামও অর্জন করেছে । নন্দিতা মনে মনে ভাবে সাহিত্য জগতের সব লেখক লেখিকারা বেশ গা ছমছমে ভূতের গল্প লেখেন তাহলে আমি কেন পারবো না ? ওর মনে জেদ চেপে যায় আমিও গা ছমছমে ভূতের গল্প লিখবই । সে রাত্রি বেলা তার নিজের ঘরে লেখালেখি করে । অফিসে প্রচন্ড কাজের চাপ তা সত্বেও রাত্রি বেলা সব কাজ সেরে সে তার লেখার টেবিলে ভূতের গল্প লিখতে সচেষ্ট হয়। সে নানা ধরনের গল্প লিখলেও তার লেখা ভূতের গল্প কোনো প্রকাশক ছাপাতে চায় না । নন্দিতা বিধবা মায়ের এক মাত্র সন্তান তাই সব দিক সামলে নিজের খরচে বই ছাপানো তার পক্ষে অসম্ভব । তবু ভূতের গল্প লেখার ইচ্ছে সে ছাড়তে পারে না। লিখতে বসলে তার সারা দিনের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায় । এক দিন রাত্রি বেলা নন্দিতা মন দিয়ে একটা ভূতের গল্প লেখার চেষ্টা করছে । গল্পের শুরুটা এই রকম বিমান বাবু সারা বছর অফিসের কাজের প্রচন্ড প্রেসার থাকায় ক্লান্তি দূর করার জন্যে পাহাড়ী এলাকায় ঘুরতে এসেছেন । একটা বেশ ছিমছাম হোটেলে উঠেছেন । পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেছে বলে সে দিন আর কোথাও বেরোলেন না । রাত্রি বেলা ডিনার করে শুয়ে পড়লেন । খুব ক্লান্ত থাকায় শুয়েই ঘুমিয়ে পড়লেন । মাঝ রাতে দরজায় ঠক ঠক শব্দ শুনে বিমান বাবুর ঘুম ভেঙে গেল । মনে হচ্ছে কেউ দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে । এতো রাতে কে এলো ভেবে উনি অনেক বার কে কে বলে চিৎকার করে করলেন । কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে উনি উঠে দরজা খুলে দেখেন একটা ছোট্ট ছেলে দাঁড়িয়ে আছে । এই পর্যন্ত যেই লিখেছে হঠাৎ পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল আরে আরে হচ্ছে না । আগে ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি করো । হুট করে দরজা খুলে দিলেই হলো ? নন্দিতা প্রচন্ড ভয় পেয়ে চারিদিকে একবার তাকিয়ে দেখল ধারেকাছে কেউ নেই । জানালাটা খুলে রেখেছে ঘরের গুমোট ভাব কাটাবার জন্যে । আবছা অন্ধকারে হাওয়ায় গাছের পাতা গুলো আন্দোলিত হচ্ছে । পরিবেশটা কেমন যেন থমথম করছে । মনে হলো যেন শীতল বাতাস বহে গেল । নন্দিতার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো । কলমটা ঠক করে হাত থেকে পড়ে গেল । আর বসে থাকার সাহস পেলো না । দৌড়ে গিয়ে মায়ের পাশে শুয়ে পড়লো । কিছুতেই নন্দিতার ঘুম আসছে না । মনে হচ্ছে যা শুনলাম সে কি সত্যি না মনের ভুল ? পর দিন অফিস গেলে বন্ধু শ্রাবণী ওকে দেখে বলে কি রে তোর চোখ মুখের এই অবস্থা কেন ? রাতে কি ঘুমোস নি ? নন্দিতা বলতে পারে না কাল রাতে তার সঙ্গে কি ঘটনা ঘটেছে । জানে বন্ধু বান্ধবরা এইসব শুনলে হাঁসাহাঁসি করবে । তাই কথা ঘুরিয়ে বলল আজ অফিসে শুনলাম মিটিং আছে ? শ্রাবণী বলে হ্যাঁ রে টিফিনের পরে । নন্দিতা অফিস থেকে ফিরে যথারীতি নিত্য নৈমিত্তিক কাজ সেরে লিখতে বসলো । মনে মনে ভাবলো কাল যা শুনেছি সব মনের ভুল । ভুল যে নয় কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারল । আজ আর কালকের গল্পটা না লিখে অন্য গল্প লিখতে শুরু করলো । নন্দিতা লিখে চলেছে

একটা ছেলের বাড়ি বিমান বন্দর থেকে কিছুটা দূরে। রাত্রি বেলা ব্যালকনি থেকে সে দেখল একটা প্লেন ল্যান্ড করতে করতে আগুন লেগে গেল । তাই দেখে ছেলেটা সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নামছে । এই পর্যন্ত যেই লিখেছে হঠাৎ পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল আরে আরে কি করছো ? আবার সেই একই ভুল করছ ? এ ভাবে লিখলে কোনো পাঠক তোমার ওই জোলো লেখা পড়বে না বুঝেছ ?
ভুতের গল্প লিখতে গেলে আগে ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয় কালই তো বললাম , এর মধ্যে ভুলে গেলে ? এবার সে ভয়ে ভয়ে ঘরের চারিদিকে তাকালো কিন্তু ঘরে কাউকে দেখতে পেলো না । ব্যাপারটায় গুরুত্ব না দিয়ে মনে সাহস সঞ্চয় করে আবার যখন লেখা শুরু করতে যাবে তখন হঠাৎ পাখাটা বন্ধ হয়ে গেল । আলো জ্বলছে অথচ পাখাটা বন্ধ হয়ে গেল কেন ভেবে পাখার দিকে তাকিয়ে ওর রক্ত হিম হয়ে গেল। দেখে একটা ছায়া মূর্তি পাখার ব্লেডে বসে দুলকি চালে পা দোলাচ্ছে আর ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে । এ কি দেখছি ভেবে ভালো করে চোখ কচলে দেখে না যা দেখছে একদম সত্যি । ওর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল । বুকের মধ্যে ধক ধক করছে । মনে হচ্ছে কেউ যেন হাতুড়ি পিটছে । শরীরটা কেমন যেন ভারী হয়ে যাচ্ছে । ছায়া মূর্তি টা তাকে বলছে শোনো হে লেখিকা আমাদের নিয়ে গল্প লেখা ওতো সহজ না বুঝলে ? অনেক ভেবেচিন্তে ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে তবে একটি হাড়কাঁপানো ভূতের গল্প লিখতে হয় । ওই জন্যে তোমার লেখা ভৌতিক গল্প পাঠক পড়ে না । আমাদের নিয়ে যা ইচ্ছে লিখবে সে আমি হতে দেবো না। নন্দিতার মনে হচ্ছে যেন দম বন্ধ হয়ে যাবে। সে কোনরকমে এক ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল । মা জিজ্ঞাসা করলেন কি হয়েছে রে , হাঁপাচ্ছিস কেন ? নন্দিতা কোনো রকমে বললো কিছু না মা । আমাকে একটু জল দিতে পারবে ? জল খেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে মনে মনে ঠিক করে নিল আর আমার ভূতের গল্প লিখে কাজ নেই । পরের দিন অফিস পৌঁছলে শ্রাবণী বলল নন্দিতা আজ অফিস ছুটির পর আমার সঙ্গে কলেজ স্ট্রিট যাবি ? আমার বোন এবার উচ্চ মাধ্যমিক দেবে তাই কিছু রেফারেন্স বই কেনার দরকার। আমি ওই এলাকাটা ভাল চিনি না । নন্দিতা বলে ঠিক আছে যাবো । অফিস ছুটির পর দুই বান্ধবী কলেজ স্ট্রিট পৌঁছে একটা বড়ো দোকানে গিয়ে সব বই পেয়ে গেল । বই কেনা হয়ে গেলে নন্দিতা বলে চল শ্রাবণী কফি হাউসে গিয়ে বসি । এখানে এলে কফি হাউসে না গেলে আমার আবার মন খারাপ হয়ে যায় । শ্রাবণী হেঁসে বলে মন খারাপের কি আছে ? নন্দিতা বলে আরে কফি হাউসে কতো গুণী মানুষের পদধূলি পড়েছে তুই জানিস না ? সেখানে গিয়ে বসে তাদের স্মরণ করলেও মন ভালো হয়ে যায় । ওরা কফি হাউসে কফি নিয়ে একটা খালি টেবিলে বসলো । নানা রকম গল্প করতে করতে নন্দিতা দেখে প্রদীপ্ত ওর দিকে আসছে । প্রদীপ্ত নন্দিতাকে দেখে এগিয়ে এসে বলল ভালো হয়েছে নন্দিতাদি তোমার সঙ্গে এখানে দেখা হয়ে গেল । কাল তোমার অফিসে যাবো । কি ব্যাপার প্রদীপ্ত আমাকে এতো দরকার ? শোনো সামনের সপ্তাহে বিখ্যাত লেখিকা মাধুরী দেবীকে আমরা রবীন্দ্রসদনে সংবর্ধনা জানাবো । আরো কিছু কবি লেখক দেরও আমন্ত্রণ করবো । তার মধ্যে তুমিও আছো । নন্দিতা হেঁসে বলে আমাকে আবার কেন ভাই আমি সামান্য লেখিকা । ও সব বললে শুনবো না দিদি । আমরা তোমার অফিসে গিয়ে কার্ড দিয়ে আসবো । আজ চলি কাল দেখা হবে দিদি । দেখতে দেখতে সংবর্ধনায় যাবার দিন এসে গেল । সংবর্ধনায় এসে নন্দিতার খুব ভাল লাগছে আর মনটাও বেশ হালকা লাগছে । সব থেকে ভালো লাগল এখানে এসে বিখ্যাত লেখিকা মাধুরী দেবীর সঙ্গে পরিচয় হয়ে । এতো দিন ওনার নামই শুনেছে আর অনেক বই পড়েছে কিন্তু পরিচয় হয়নি । মাধুরী দেবীর নিরহঙ্কার ব্যাবহারে নন্দিতা মুগ্ধ হয়ে গেল । বাড়ি ফিরে নন্দিতা সব কাজ সেরে মাকে খাইয়ে নিজে খেতে খেতে ভাবলো আজ আর ওই ঘরে যাব না আর কিছুদিন লেখাও বন্ধ রাখব । মায়ের পাশে শুয়ে পড়ে সারা দিনের ক্লান্তিতে সে ঘুমিয়ে পড়ল । নন্দিতার ঘুমের মধ্যে মনে হল তাকে যেন কেউ জোর করে লেখার ঘরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । বাধা দেবার ক্ষমতা ওর নেই । যখন হুঁস হল দেখে সে লেখার ঘরে বসে আছে। কিন্তু সে ঠিকই করেছিল আজ আর লিখবে না । তাহলে লেখার ঘরে এলো কি করে তাও আবার এতো রাত্রে ? ভাবার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের দরজা জানালা গুলো নিজের থেকেই খুলছে বন্ধ হচ্ছে । পাখাটা বনবন করে ঘুরছে । যেন কেউ প্রচন্ড রেগে এসব করাচ্ছে । হঠাৎ ঝুপ করে শব্দ শুনে দেখে তার টেবিলের পাশে সেই ছায়ামূর্তি । নন্দিতা ভয়ে স্থির হয়ে গেল । মনে হচ্ছে ওর সারা শরীর অবশ হয়ে গেছে । সেই ছায়া মূর্তি খোনা গলায় বলল, শোন নন্দিতা তোমাকে আমাদের নিয়েই গল্প লিখতে হবে । আমি তোমাকে সাহায্য করবো । একদিন দেখবে পাঠকমহলে তোমার লেখা ভৌতিক গল্পের বইয়ের চাহিদা কতো বেড়ে গেছে । আমাকে ভয় পাবার কিছু নেই ।‌ আমার জীবনের করুন কাহিনী শুনলে তুমি নিজেই আমাকে তোমার বন্ধু ভাববে ।

আমিও এক সময় নাম করা লেখক ছিলাম । আমার লেখা গল্প পাঠকমহলে খুব সমাদৃত ছিল । এক দিন বাইক করে অফিস থেকে ফেরার পথে একটা গল্পের প্লট মাথায় এলো । ভাবলাম যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি গিয়ে গল্পটা লিখতে হবে । আমি এই রকমই ছিলাম। ভাবার সঙ্গে সঙ্গে লিখতে না পারলে মনে শান্তি পেতাম না । আমি চিন্তার জালে এমন আচ্ছন্ন ছিলাম যে কখন একটা ট্রাক আমার বাইকের সামনে এসে গেছিল আমি খেয়াল করতে পারিনি । আচমকা ট্রাকটা সামনে এসে যাওয়ার আমি বাইকের ব্রেক ফেল করলাম । ট্রাকটা আমাকে ধাক্কা মেরে বেরিয়ে গেল । আমি রাস্তার ধারের রেলিং এর ওপর ছিটকে পড়লাম । এই ভাবে আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেল আর আমার লেখা হল না । সারা দিন অমানুষিক পরিশ্রম করেও তুমি যে লেখার চেষ্টা কর , তোমার এই প্রচেষ্টা আমাকে মুগ্ধ করেছে । তুমি আমাকে ভয় পেও না বরং আমাকে তোমার এক ভালো বন্ধু ভাবো । তুমি ভৌতিক গল্প লেখো, আমি তোমাকে শিখিয়ে দেব কিভাবে ভৌতিক গল্প লিখতে হয় । এই নাও তোমাকে আমি আমার লেখার কলমটা দিলাম । বলতেই ঠক করে একটা কলম এসে পড়ল নন্দিতার সামনে । সব শুনে নন্দিতার খুব মায়া হলো তবুও মন থেকে ভয় দুর হলো না । প্রতিদিন তো আর একটা মানুষ ভয় পেতে পারেনা । তাই ভয় পেতে পেতে ধীরে ধীরে নন্দিতার মন থেকে ভয় চলে গেল এবং লেখক ভুতের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠল । বন্ধু রোজ আসে । এখন কখনো লেখাও হয় আবার কখনো দেশ বিদেশের সাহিত্য নিয়ে নানা আলোচনাও হয় । গল্প লেখার নানা কৌশল ভূত বন্ধু তাকে শিখিয়ে দেয় । এখন নন্দিতা অনায়াসে ভৌতিক গল্প লিখতে থাকে । অনেক গল্প লেখা হয়েছে দেখে ভুত বন্ধু নন্দিতাকে বলে এবার তুমি প্রকাশকের কাছে যাও । আমি চাই তোমার লেখা গল্পগুলো পাঠক মহলে ছড়িয়ে পড়ুক ।

একটা ছুটির দিনে নন্দিতা তার লেখা নিয়ে শীবেন্দু বাবুর কাছে গেল । নন্দিতাকে দেখেই তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন , কাজের সময় আপনি আবার এসেছেন ? আপনি অন্য গল্প দিন আমি ছাপাব কিন্তু আপনার লেখা ভূতের গল্প আমি নিতে পারব না । নন্দিতা শেষ চেষ্টা করে বলে আমার লেখাটা নিয়ে রাখুন, পরে পড়ে দেখবেন। আমার সময় নেই পড়ার আপনি এখন আসুন, আমার অনেক কাজ জমে আছে । লজ্জায় মাথা নিচু করে বেরিয়ে এল নন্দিতা । আরো দু তিন জনের কাছে গেল । একই কথা শুনে শেষে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে । রাত্রি বেলা চুপ করে বসে আছে । কলম হাতে নিতে ইচ্ছে করছে না । হঠাৎ ভূত বন্ধুর কথা শুনতে পেল । নন্দিতা মন খারাপ করলে চলবে না । তোমার লেখা পাঠকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেবার জন্যে তোমাকে অনেক অপমান সহ্য করতে হবে । আমিও প্রথম দিকে অনেক অপমান সহ্য করেছি । তারপর পরিচিতি পেয়েছিলাম । হতোদ্যম হলে চলবে না নন্দিতা । বাধা বিঘ্নের ছোট বড় নুড়ি পাথর সরিয়ে তোমাকে এগোতে হবে । লড়ে যাও নন্দিতা লড়ে যাও । বন্ধুর কথা শুনে নন্দিতা যেন মনের জোর ফিরে পেল । সে বলে ঠিক বলেছেন বন্ধু লড়াই সবে শুরু , আমাকে ধৈর্য্য ধরে এগোতে হবে । ওর ভবতোষ বাবুর কথা মনে পড়ে গেল । উনি খুব ভালো মানুষ। পরের দিন ভবতোষ বাবুর কাছে গেলে উনি নন্দিতাকে দেখে বললেন, কি ব্যাপার আবার ভূতের গল্প নিয়ে এসেছেন ? নন্দিতা ইতস্তত করে বলল একটা লেখা এনেছি দেখুন আপনার ছাপাতে হবে না আপনি শুধু পড়ে দেখবেন । ভাল লাগলে আমাকে ফোন করবেন । ভবতোষ বাবু বিব্রত হয়ে বললেন আমি ব্যাস্ত মানুষ । ঠিক আছে এনেছেন যখন পড়ে দেখব । পরের দিন নন্দিতা অফিসে কাজ করছে তখন ভবতোষ বাবুর ফোন এলো। আরে নন্দিতা আপনি তো দারুন লিখেছেন । অবশ্যই আপনার লেখা ছাপাব । আরো কয়েকটা লেখা দিন । সেই নন্দিতার বই বার হতে শুরু করল । পুজোর সময় এতো লেখার অনুরোধ আসছে যে নন্দিতা অফিস করার সময় পাচ্ছে না । যারা তার লেখা ছাপাতে চাইতো না অপমান করে ফিরিয়ে দিতেন তারা পর্যন্ত পুজোর সংখ্যায় লেখা দেবার জন্যে অনুরোধ করছেন । লেখার চাহিদার কারণে ভূত বন্ধুর পরামর্শে নন্দিতা চাকরী ছেড়ে দিয়ে লেখায় মন দিল । অন্যান্য গল্প লেখার জন্যে তার আগেই পাঠক মহলে বেশ পরিচিতি ছিলই কিন্তু এখন সে নাম করা ভৌতিক গল্প লেখিকা হিসাবে পরিচিতি পাচ্ছে । নন্দিতা এর জন্যে তার ভুত বন্ধুকে কৃতগ্যতা জানায় । এক দিন রাত্রি বেলা বন্ধু তার টেবিলের সামনে চুপ করে বসে আছে দেখে নন্দিতা বলে এতো চুপচাপ কেন বন্ধু। ? কি হয়েছে আপনার ? ভূত বন্ধু দুঃখিত ভাবে বলে নন্দিতা আমার পৃথিবীতে আসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেল । পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে এবার চলে যেতে হবে কোন অজানার পথে । তোমার কাছে আর আমার আসা হবে না । তোমাকে আমি খুব ভালো বন্ধু পেয়েছিলাম । আমি লিখতে ভালোবাসতাম বলে তোমার সঙ্গে আমার দিনগুলো সুন্দর অতিবাহিত হয়েছে । তোমার কাছে আমার একটাই অনুরোধ কোনো পরিস্থিতিতেই তুমি লেখা ছাড়বে না । নন্দিতা কোনরকমে বলে আমি অনেক ভাগ্য করে আপনার সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম , আপনার মতো বন্ধু পেয়েছিলাম বলতে বলতে নন্দিতার দু চোখ জলে ভরে গেল । সে দিন সত্যিই দুই বন্ধুর খুব মন খারাপ হয়ে গেছিল । বন্ধুকে হারিয়ে আজও নন্দিতা কষ্ট পায় তবে

নন্দিতা স্বীকার করে যে ভূত বন্ধুর কাছ থেকে সে যা শিক্ষা লাভ করেছে তার কাছে মহা মূল্যবান । আজ সে নানা ধরনের গল্প ছাড়াও ভৌতিক গল্প লিখে যে সুনাম অর্জন করেছে সে তো অবশ্যই ভূত বন্ধুর জন্যে । বড় ফ্ল্যাট কিনে তার দুঃখী মাকে সুখে রেখেছে । বন্ধুর স্মৃতি বলতে প্রথম লেখার দিন বন্ধু যে কলমটা দিয়েছিলেন সেই কলমটা টেবিলে যত্ন করে রেখে ধুপ জ্বালিয়ে বন্ধুর উদ্দেশ্যে প্রণাম করে লেখা শুরু করে । এখন প্রায়ই নন্দিতা সংবর্ধনার আমন্ত্রণ পায় । এবার বই মেলায় একটা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে নন্দিতার খুব ভালো লাগছে । অনেক দিন পর মাধুরী দেবীর সঙ্গে দেখা হলো অনুষ্ঠান শেষে মাধুরী দেবী নিজে নন্দিতার কাছে এসে বললেন নন্দিতা কেমন আছো ? তুমি তো এখন বেশ সুন্দর লিখছো । আগে তোমার লেখা ভৌতিক গল্পগুলো তেমন ভয়াবহ হোতো না । তুমি তো লেখকের শেষ ইচ্ছা গল্প , কালের কবলে উপন্যাসটা অসাধারণ লিখেছ । এখন তোমার লেখায় হঠাৎ পরিবর্তনে আমি সত্যিই খুব বিস্মিত হয়ে গেছি ।
আমি বাড়ি ফিরছি , আমার গাড়িতে যেতে তোমার আপত্তি আছে ? গাড়িতে যেতে যেতে নানা ধরনের আলোচনার মধ্যে নন্দিতা মাধুরী দেবীকে বলে দিদি আপনাকে আমার খুব ভাল লাগে । আমি কি আপনাকে কিছু ঘটনা বলছি । তারপর নন্দিতা সংক্ষেপে ভুত বন্ধুর কথা , বন্ধুর কলম উপহার দেবার কথা সবটা বললো মাধুরী দেবীকে যা সে কাউকে বলেনি । কারণ নন্দিতা জানে মাধুরী দেবী এতো ভালো মনের মানুষ যে এনাকে সব বলা যায় । শুনে মাধুরী দেবী নন্দিতাকে কলমটা দেখাতে অনুরোধ করলেন । নন্দিতা হেঁসে বলে তাহলে দিদি আপনাকে আমার ফ্ল্যাটে যেতে হবে । তিনি বললেন আমি তোমার অমূল্য রতন দেখতে তোমার ফ্ল্যাটে যেতেও রাজী আছি । ওরা ফ্ল্যাটে এসে কলিং বেল বাজালে নন্দিতার মা মাধুরী দেবীকে দেখে স্বাদরে অভ্যর্তনা করে ঘরে এনে বসালেন । নন্দিতা মাধুরী দেবীকে তার লেখার ঘরে এনে কলমটা দেখালো । মাধুরী দেবী দেখলেন লেখার টেবিলের ওপর কলম দানিতে কলমটা মালা পরানো । সামনে ধুপ দানিতে ধূপ জ্বলছে। তিনি নন্দিতার অনুমতি নিয়ে কলমটা হাতে নিয়ে দেখলেন তারপর পরম ভক্তিভরে প্রণাম করলেন । ও মা , মা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাকে প্রণাম করছ ? মেয়ে মঞ্জুলীর ডাকে মাধুরী দেবীর ঘুম ভেঙে গেল । বিছানায় উঠে বসে বুঝতে পারছেন না তিনি কোথায় আছেন। স্বপ্নের কথা মনে হতেই তিনি মনে মনে হাসলেন । গল্প লিখতে লিখতে গল্পের চরিত্ররা স্বপ্নের মধ্যেও হানা দিচ্ছে। ওই দেখো মা রনি বনি আর মিষ্টি এসেছে ,মা মামা মামীও এসেছেন । মঞ্জুলির কথায় মাধুরী দেবীর চমক ভাঙল । রনি বনি মিষ্টি ততক্ষণে তাদের পিসিমনিকে ঘিরে ধরেছে । বলো না পিসিমনি তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাকে প্রণাম করছিলে ? ওরা জানে পিসিমনির কাছে এলে অনেক গল্প শোনা যায় । মাধুরী দেবী ফ্রেশ হয়ে এসে বললেন না বললে তোরা আমাকে ছাড়বি ? মাধুরী দেবীর কাছ থেকে স্বপ্নের কাহিনী শুনে মঞ্জুলী বলে মা মনে আছে একবার তুমি স্বপ্নে “তাল তলার আজব প্রতিযোগিতা ” দেখেছিলে ? সেই গল্পটাও কিন্তু তোমার পাঠকদের খুব ভালো লেগেছিল । হ্যাঁ রে মনে আছে । কি যে হয় আমার মাঝে মাঝে । তিনি হাসতে হাসতে বললেন তবে আমি কিন্তু এই স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে ভূতের গল্প লেখার অনেক কৌশল শিখে নিয়েছি । তারপর মাধুরী দেবী রনি বনি আর মিষ্টিকে আদর করে বললেন মঞ্জুলি ছায়াদিকে বল হর্ষকে গাড়ি বার করতে । আমরা আজ সবাই মিলে ঘুরতে যাব । রনি ,বনি , মিষ্টি আনন্দে হাত তালি দিয়ে বলে উঠল কি মজা কী মজা ।

Powered by themekiller.com