Breaking News
Home / Breaking News / একাত্তুরের মুলহেডের সেই বীভৎসতা আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে …শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

একাত্তুরের মুলহেডের সেই বীভৎসতা আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে …শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

মোহাম্মদ সিন্টুঃ
চাঁদপুর মোলহেডে শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত নাট্যশালার সূচনা লগ্নে চাঁদপুরের কৃতিসন্তান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, চাঁদপুর মোলহেডে আজ এমন একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমাদের প্রথাগত মঞ্চায়িত নাটক থেকে আজকের এই নাটকটি একটু ব্যতিক্রম। বাস্তবতাকে ঘিরে ঘটনা যেখানে ঘটেছে সেখানে নাট্যায়ন করার নতুন একটি ধারা আজ আমরা দেখতে পাব। মোলহেড চাঁদপুরে একটি অনন্য সুন্দর স্থান। সামনের বিস্তৃর্ণ মেঘনা ঢেউ দেখলে মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু এই জায়গাটিকে ঘিরে আমাদের অনেক কষ্টের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা, লঞ্চের যাত্রীদের প্লাটফর্মে রেখে নির্যাতন শেষে হত্যা করে এই নদীতে ফেলে দেওয়া হতো। নারীদের উপর চালানো হতো পাশবিক নির্যাতন। নির্যাতন শেষে হত্যা করে এই নদীতে ফেলে দেওয়া হতো নারীদের। সেই দুঃসহ স্মৃতি যা অনেকেই আজ হয়তো বয়ে বেড়াচ্ছেন। আমি জানি কারণ আমার পরিবারের চারজন সদস্য কে এই নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন চাচা বেঁচে এসেছিলেন। কিন্তু তিনজন চাচা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তৎকালীন সময় সারাদেশে পাঁচ হাজারের বেশি বধ্যভূমিতে নির্বিচারে হত্যাকান্ড হয়েছিল। আমাদের সেই ইতিহাসকে জানতে হবে। যেন আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক ভাবে নির্মাণ করতে পারি। সঠিক ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের জন্য সঠিক ইতিহাস জানা অত্যন্ত জরুরী। বিশেষ করে আমাদের দেশ দুর্ভাগা। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সহ পরিবারের সকলকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে ইতিহাস বিকৃতির মধ্য দিয়ে আমাদের এ দেশটিকে যেতে হয়েছে। এবং একুশ বছর ইতিহাস বিকৃতির মহা উৎসব চলছিল। সেখানে আমাদের স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ শক্তিকে বদলে ফেলা হয়েছিল। স্বাধীনতা কথাটি মনে করার চেষ্টা হয়েছিল স্বাধীনতার মহান স্থপতির নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। জাতিকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ৭ ই মার্চের ঘোষণাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। একটি দুঃসহ সময় পার করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিক পথে আসতে পেরেছি ১৯৯৬ সালে। আবার সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরে এসেছি বলেই বঙ্গবন্ধুর দেখানো সেই পথে চলছি বলেই শুধু একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। মধ্যরাতের মোলহেড নাটকটির নাট্যকার নির্দেশক শিল্পী কলাকুশলী তাদের সকলের চেষ্টায় একাত্তুরের মুলহেডের সেই বীভৎসতা আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে। যত বীভৎস হোক কষ্টের হোক আমাদের জন্য জরুরী জানতে হবে আমাদের অতীতকে। ১৯২১ সালে ১০০ বছর আগে আরেকটি গণহত্যা এখানে হয়েছিল চা শ্রমিকদের উপর ব্রিটিশদের। ৩০ হাজার শ্রমিককে এখানে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছিল।

বড় স্টেশন বধ্যভূমিতে গণহত্যা পরিবেশ থিয়েটারের প্রযোজনায় ”মধ্যরাতের মোলহেড” উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পূর্বে শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এই কথা গুলো বলেন।
উদ্বোধক হিসেবে বক্তব্য রাখেন লিয়াকত আলী লাকী
তিনি বলেন,
আমি বিনীতভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি আজ উপস্থিত না থাকতে পারার জন্য।
বাংলাদেশের ৫০ বছর সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আজকে এই বিশেষ নাটক এর উদ্বোধন ঘোষণা করছি। সারাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে চার থেকে পাঁচ হাজার বধ্যভূমি রয়েছে। প্রতিটি জেলায় একটা বধ্যভূমি কে কেন্দ্র করে গবেষণা কাজ সম্পূর্ণ করে তার ফলশ্রুতিতে চাঁদপুরে মধ্যরাতের মোলহেড নাটকটি মঞ্চায়িত করার জন্য নির্ধারণ করা হয়। নাটকটি একেবারে ব্যতিক্রমধর্মী একটি নাটক। বিশ্বে অনেকগুলো দেশে গণহত্যা নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে। উগান্ডা, বসনিয়া, আলবেনিয়া এইসব দেশে সীমিত আকারে নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলায় বধ্যভূমিতে একটি করে নাটক মঞ্চায়িত হবে। তৎকালীন সময়ে ইয়াহিয়া খান আমাদের কমিটমেন্ট ভঙ্গ করে ২২ মার্চ পাকিস্তান চলে গিয়ে ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনার নির্দেশনা দেন। অপারেশন সার্চলাইট এর ভয়াবহতা টা কি ছিল বর্তমান প্রজন্ম তা বুঝতে পেরেছে। সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বধ্যভূমিতে এই ধরনের নাটক বর্তমান প্রজন্মকে বুঝতে সহায়তা করবে। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বিপিএম বার, পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জাহিদুল ইসলাম রোমান।

গবেষণা নির্বাহী আবু ছালেহ মো. আব্দুল্লাহ, প্রযোজনা নির্মাণ ও মঞ্চায়ন নির্বাহী অলি আহ্মেদ মুকুল। রচনা সৌম্য সালেক ও পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, পরিকল্পনা ও নির্দেশনা শরিফ চৌধুরী, প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়দ মুহাম্মদ আয়াত মাবুদ, সহকারী নির্দেশক এম আর ইসলাম বাবু, মঞ্চ পরিকল্পনা শহীদ পাটোয়ারী, আলোক পরিকল্পনা সুকদেব রায়, আবহাওয়া সঙ্গীত পরিকল্পনা সিয়াম খান, পোশাক পরিকল্পনা গোবিন্দ মন্ডল, প্রপস পরিকল্পনা দেবব্রত সরকার বিজয়, কোরিওগ্রাফি চৌধুরী ও আফসানা আক্তার তন্নি।পরিবেশনায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী, চাঁদপুর রেপার্টরী নাট্যদল।

Powered by themekiller.com