শিরোনামঃ বিসর্জন
কলমে: ঝুমা দত্ত
তারিখ : 15.10.21
এবার বিজয়াতে মাকে বিদায় জানাতে সাথে যেতে পারলাম না, বারান্দায় বসে বসে খুকুর সাথে দূর থেকেই মাকে প্রণাম জানালাম। সকলে কত প্রতিমা নিয়ে আসছে আর বিসর্জন দিয়ে চলে যাচ্ছে। অনেকক্ষণ বসে দেখছি, হঠাৎ খুকু বলে মা সবসময় মাকেই কেন বিসর্জন যেতে হয়? মায়ের কষ্ট হয় না? সরল মনে সরল প্রশ্ন, মা দুর্গা ও মহিষাসুরের গল্প বলে শিশুমন শান্ত করলাম, আবার খুকু মায়ের বিসর্জন দেখতে রত হল।
তবে একই প্রশ্ন যখন নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করলাম কোন উত্তর পেলাম না,সরল প্রশ্নের গভীরতা কতখানি তার সঠিক উত্তর খুঁজে পেলাম না আমি। সত্যিই তো সবসময় মা-মেয়েদেরই কেন বিসর্জন যেতে হয়? কেন……?
টি.ভি,খবরের কাগজ খুললেই দেখতে পাই বিসর্জন,কখনও গঙ্গা জলে,কখনও চোখের জলে আবার কখনও গর্ভজলে বিসর্জিত হচ্ছে মেয়েরা। অসুর ও মায়েদের যুদ্ধ নিরন্তর চলছে কালের পরকাল।
সবকালেই কম বেশি ঘটে এসেছে তবে এ ঘোর কলিতে অত্যাধিক বেশি।অসুরগুলো খোলা আকাশে ঘুরে বেড়াবে আর মা -মেয়েরা ভয়ে দোর দেবে? কেন….?
আজ মেয়েদের হাতে অনেক অধিকার, অনেক শক্তি তুলে দিয়েছেন অনেকেই তবুও রোজ শুনতে হয় মায়ের বিসর্জনের কথা। রোজই তুলে নিয়ে যায় নরখাদকরা, ঘরের লক্ষী পুড়ে মরছে। অবহেলা অত্যাচার তাদের নিত্যসঙ্গী।
আজ মায়ের কাছে আমার ছোট্ট প্রশ্ন তুমি মা, তুমি শক্তি,তুমি অসুর সংহারিনী, কত যশ গান শুনেছি তোমার, তোমার স্বরূপই তো আমরা মেয়েরা তবে কেন অসুরগুলোর কাছে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি। কখনো ছিঁড়ে ফেলছে, কখনো ভাসিয়ে দিচ্ছে। এ ঘোর কলিতে কি তোমার স্বরূপের শক্তি ক্ষীণ হয়ে গেছে?
এবার তুমি যাবার বেলায় দিয়ে যেও মা একটু শক্তি সেই শক্তির উপর ভর করেই বিসর্জন দেবো অসুরগুলোকে ওই গঙ্গার জলে যেখানে আমাদের কাঠামোগুলো আজও ভেসে বেড়াচ্ছে স্বতেজ হয়ে।
এবার যাবার বেলায় এ দেহে এত আগুন ভরে যেও যেন অসুরগুলো নোংরা চোখে কোনো শিশু বা মায়ের দিকে তাকাতে না পারে আর তাকালেই ভষ্ম মাখতে পারি যেন তার দেহের।
আর অত্যাচার, অবহেলা,অসম্মান নয় মা এবার যেন তোমার স্বরূপ পায় যোগ্য সম্মান এটুকুই আমার করজোড়ে তোমার চরণে প্রার্থনা।🙏🙏🙏