Breaking News
Home / Breaking News / ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর নামটি যেন কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন না হয়ে যায়

ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর নামটি যেন কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন না হয়ে যায়

**ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর**
চাঁদপুর জেলা ব্রান্ডিং এ প্রধান উপাদান হল স্বাদে গন্ধে অতুলীয় রুপালি ইলিশ।সারাদেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে চাঁদপুর কে এক নামে সবাই চিনে সুস্বাদু রুপালি ইলিশের কারনে।এমনকি দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও ইলিশ মাছ ট্রলার বা ট্রাকে করে এনে চাঁদপুর থেকে দেশ বিদেশে বিক্রি হয় শুধু চাঁদপুরের ইলিশের সুখ্যাতির কারনে।চাঁদপুরের কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয় এই ইলিশ কে ঘিরে।
অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার ও ইলিশ প্রজনন মৌসুম তথা মা ইলিশের ডিম ছাড়ার সময় অর্থাৎ ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর ইলিশ মাছ ধরা,পরিবহন,ক্রয়, বিক্রয়,মজুদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।জেলা প্রশাসন,পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, মৎস বিভাগ,কোস্টগার্ড সদস্যরা নিয়মিত টহলের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করার জন্য বলা যায় প্রানপন যুদ্ধ করে যাইতেছে। দিন রাত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সংসার, পরিবার পরিজন ছেড়ে শীত কুয়াশা,অন্ধকার সব কিছু উপেক্ষা করে ঘন্টার পর ঘন্টা নদীতে অবস্থান করতেছে।
তারা কেউই চাঁদপুরের স্থায়ি বাসিন্দা নয়।চাঁদপুরে চাকুরি করতেছে মাত্র।হয়ত কয়েকদিন পর বদলি হয়ে অন্যকোন স্থানে চলে যাবে।চাঁদপুর নিয়ে তাঁদের অহংকার করার কিছু থাকবেনা।কিন্তু অামরা যারা চাঁদপুরের স্থায়ি বাসিন্দ তারা চাঁদপুরে থাকব।চাঁদপুর নিজ জেলা বলে সর্বত্র প্রচার করব।নিজেকে গৌরবান্বিত ভাবব।অথচ সেই চাঁদপুর জেলার ব্রান্ডিং নিয়া কিংবা বিশ্বের দরবারে যে জিনিসের কারনে সুনাম অর্জন করলাম তা রক্ষা না করে নানাভাবে তা ধ্বংসের উৎসবে মেতে উঠেছি।
নদীর তীরে গেলে দেখা যায় হাজার হাজার মিটার কারেন্ট জাল উদ্ধার করে পোঁড়ানো হচ্ছে।কয়েক মন তাঁজা ডিমওয়ালা ইলিশ উদ্ধার হইতেছে প্রতিদিন।এমন কি গ্রামে বা লোকালয়ে ভ্যান গাড়ি করে বা ব্যাগে বা বস্তায় করে অল্প দামে এই সব মা ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর পাওয়া যায়।অাবার অনেককে অাড্ডায়,বাজারে, চা এর দোকানে বলতে শোনা যায় যে “অাজ দেড় কেজি ওজনের চারটা কিনলাম মাত্র ১০০০ টাকা দিয়া।”
অাবার পত্রিকায় খবর অাসে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের উপর জেলেরা হামলা ও চালিয়েছে তিনি যখন চাঁদপুরের ঐতিহ্য রুপালি ইলিশের বাড়িকে সমুন্নত রাখতে গিয়ে অভিযান চালনা করেন।তার মানে দাঁড়ালো যে এই নিষিদ্ধ সময়ে যারা ইলিশ মাছ ধরতেছেন তারা চাঁদপুরের গর্বিত বাসিন্দা। যারা নিজেদের তুচ্ছ ও হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে মাদক কেনার মত চুরি করে ইলিশ মাছ ক্রয় বা বিক্রয় করতেছেন তারাও চাঁদপুরের গর্বিত বাসিন্দা।অর্থাৎ অামরা নিজেরাই চাইনা ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে থাকুক। অথচ এই মা ইলিশ এখন সঠিক ভাবে রক্ষা করা গেলে, তার উৎপাদন বেশি হলে অামাদের জেলেরাই নদীতে বেশি ইলিশ পাবেন,বেশি টাকা অায় করতে পারবেন।অামরা চাঁদপুরের মানুষরাই কম দামে ইলিশ কিনতে পাবো।
অাবার সারা বিশ্বে চাঁদপুরে সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।অামাদের দেশের পাট বিশ্বের বাজারে স্বনামধন্য ছিল কিন্তু নিজেদের দোষেই অাজ তা অন্যদেশের হাতে চলে গেছে।তাই মনে ভয় হয় না জানি ঐতিহ্যবাহী ইলিশ মাছ ও অামাদের হারাতে হয়।তাই মনে হয় অামরা নিজেরা যদি সচেতন না হই,নিজেরা যদি মাত্র অল্প কয়েকদিনের জন্য অামাদের লোভ, হীন স্বার্থ,ব্যক্তিস্বার্থ কিংবা নিচু মন মানসিকতাকে বিসর্জন দিতে না পারি তাহলে একসময় ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর এই নামটি হয়ে যাবে কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন।যা অামরা কিছুতেই প্রত্যাশা করিনা।
লেখক-আঃ আজিজ শিশির

Powered by themekiller.com