Breaking News
Home / Breaking News / ইসলাম ও আমাদের যুবসমাজ

ইসলাম ও আমাদের যুবসমাজ

ইয়াসমিন আক্তারঃ
বর্তমানে আমাদের তরুণ ও যুবসমাজে ইসলামের প্রতি অনাগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় প্রত্যেকেই এই অনাগ্রহের দায় পুরোপুরি ভাবে তরুণ ও যুবসমাজের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। কিন্তু আমার মতে বর্তমানে আমাদের সমাজে ইসলামের নামে যা চলছে তার থেকে আমাদের তরুণ ও যুবসমাজের দুরে সরে আসাটাই স্বাভাবিক।
অষ্টম হেনরীর সময় ইংল্যান্ডের প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মকে সার্বিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ব্যক্তিগত জীবনে নির্বাসিত করা হয়। ইংল্যান্ডের পরে ক্রমে ক্রমে সমস্ত খ্রীষ্টান জগত এই নীতি গ্রহণ ও প্রয়োগ করতে বাধ্য হল। এরপর থেকে খ্রীষ্টান জগতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ব্যবস্থা, আইন দল্ডবিধি ইত্যাদি এক কথায় জাতীয় জীবনে স্রষ্টার আর কোন কর্তৃত্ব রইল না। জন্ম হল ধর্মনিরেপেক্ষতার। ধর্মনিরপেক্ষতার জন্মের পর বর্তমানে যে সভ্যতা দাঁড়ালো সে সভ্যতাকে মোটেও সভ্যতা বলা যায় না, বরং একে এক প্রকার প্রযুক্তিগত প্রগতি বলা চলে। এই প্রগতির ফলে আজ বিজ্ঞানের অনেক উন্নতী সাধন হয়েছে আর তার কারনে আমাদের যুবসমাজের মনে বর্তমানে ধর্মীয় কুসংস্কার ও অযৌক্তিক কর্মকাণ্ডগুলো নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন উঠে। কিন্তু ইসলামের ধারক-বাহক সেজে বসে থাকা নির্দিষ্ট লেবাসধারী শ্রেণীটি তাদের এই প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর দিতে পারে না এবং এর ফলে তরুণ ও যুবসমাজের সবসময় অতৃপ্ত থেকে যায়।
আজকে ইসলামকে বানিয়ে দেয়া হয়েছে একটা নির্জীব বস্তু, এতে মনের খোরাক মিটানোর উপায় খুব কমই রয়েছে। ঐ শ্রেণীটি ইসলামের প্রতিটি বিষয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ ও মাসলা মাসায়েল দাঁড় করিয়ে ধর্মকে এমন করে ফেলেছে যে ধর্ম হয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য দুর্বোধ্য। ইসলাম বাদ্যযন্ত্রকে হারাম করেছে, গানকে হারাম করেছে, সুরকে নিষিদ্ধ করেছে ইত্যাদি আরো বহু বিধি নিষেধ তারা ইসলামের নামে বলে। এই অযৌক্তিক ভ্রান্ত মত তাদের কাছে শুনতে শুনতে যুবকদের মনে ইসলামের প্রতি এক ধরনের বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়েছে। তারা ইসলামের প্রকৃত রূপ দেখে নি তাই তারা ভাবে এই বুঝি ইসলাম। ইসলামকে তারা তাদের বৈশ্বিক অগ্রগতিতে বাঁধা হিসেবে মনে করে, যুগের সাথে মিলাতে পারে না। তখনই তারা নাস্তিকতাবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাদেরকে জান্নাতের লোভ বা জাহান্নামের ভয় কোনটাই ধর্মের পথে ফিরাতে পারে না কারণ তারা সারা বিশ্বে নিজেদের শোচনীয় অবস্থা দেখছে। তারা পাশ্চাত্যের অনুকরণে নিজেদের গড়ে তুলতে চায় কারণ পাশ্চাত্যরা যেভাবে ধর্মকে বাদ দিয়ে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করেছে সেই একই উন্নয়ন তারা এখানেও চায়। পাশ্চাত্যের চাকচিক্যময়তার জন্য তারা আসল অবস্থা ধরতে পারে না। তখন তাদের মনে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণীর বলা ‘এই দুনিয়ায় মুসলিমরা কষ্ট করতেই এসেছ’, দুনিয়া আমাদের জন্য নয়’এইসব কথার কোনো মূল্য থাকে না।
সমাজে আজ ইসলামের প্রকৃত আদর্শ নেই। রসুলাল্লাহর রেখে যাওয়া ইসলাম গত চৌদ্দশ বছর ধরে বিকৃত হতে হতে আজ একেবার নষ্টের খাতায় নাম লিখিয়েছে। যে ইসলাম উম্মতে মোহাম্মদীকে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে অগ্রগতিতে শিক্ষকের আসনে আসীন করেছিল, যে ইসলামের উন্নতি, প্রগতি, ন্যায় ও শান্তি দেখে মানুষ মরিয়া হয়ে ইসলামে প্রবেশ করেছিল সে ইসলাম আর বর্তমান ইসলাম কখনই এক হতে পারে না। আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে ইসলামকে দীনুল ওয়াসাতা বা ভারসাম্যপূর্ণ দীন বলেছেন। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ বলেন, “আমি তোমাদেরকে ভারসাম্যযুক্ত জাতি হিসেবে সৃষ্টি করেছি (সুরা বাকারা ১৪৩)।” ভারসাম্যহীনতার ফলে যুব সমাজ আজ অন্য আদর্শ অর্থাৎ পাশ্চাত্য বস্তুবাদী আদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়ে সেই অনুযায়ী সার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক জীবনযাপন করছে। তাদের বরাবরই একটি আদর্শ প্রয়োজন কিন্তু বর্তমান ইসলাম থেকে তারা সেটা পায় নি। তাই আমাদের যুবসমাজকে যদি আমরা পুনরায় ইসলামের আদর্শে উজ্জিবিত করতে চাই তবে তাদের সামনে প্রকৃত ইসলামের রূপকে তুলে ধরতে হবে। তাহলে তারা বুঝতে সক্ষম হবে যে বর্তমানে ধর্মনিরপেক্ষ বস্তুবাদী যে সভ্যতাকে তারা গ্রহণ করে বসে আছে সে সভ্যতা তাদের আত্মার খোরাক মেটাতে সক্ষম নয় এমনকি যে উন্নয়নের কথা তারা চিন্তা করছে সে উন্নতিও কখনও তারা লাভ করতে পারবে না। এই ধারণা যখন তাদের কাছে স্পষ্ট হবে, তখন এই ইসলাম থেকে সরে যাওয়া তরুণ ও যুবসমাজই ইসলামের হয়ে সমগ্র বিশ্বকে নিয়ন্ত্রন করবে।
(লেখিকা: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)

Powered by themekiller.com