Breaking News
Home / Breaking News / কোলকাতায় মঞ্চ¯’ হলো খান শওকত রচিত নাটক “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব”

কোলকাতায় মঞ্চ¯’ হলো খান শওকত রচিত নাটক “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব”

অনলাইন ডেস্ক :কোলকাতায় মঞ্চ¯’ হলো খান শওকত রচিত নাটক “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব”

বিপুল উৎসাহ এবং উৎসব মুখর পরিবেশে পশ্চিমবঙ্গে মঞ্চ¯’ হলো নিউইয়র্ক প্রবাসী নাট্যকার খান শওকত রচিত ঐতিহাসিক নাটক “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।”
গত ২৩ শে সেপ্টেম্বর (২০১৮) তারিখে নাট্যমোদীদের প্রিয় ¯’ান “জ্ঞানমঞ্চ” (১১ প্রিটোরিয়া ষ্ঠিট। কোলকাতা-৭০০০৭১) -র বিশাল অডিটোরিয়ামে উপ¯ি’ত দর্শকদের টানটান উত্তেজনার মাঝে নেপথ্য ঘোষণায় বলা হয় “১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী দুই বাংলার বীর যোদ্ধাদের প্রতি জানা”িছ বিনম্র শ্রদ্ধা।” কর“ন মিউজিক বাজলো।
এরপর বজ্রকণ্ঠে বেজে উঠলো বঙ্গবন্ধুর ভাষন, ‘সাতকোটি বাঙালীদের দাবায়ে রাখতে পারবা না। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।” পর্দা সরলো। পিন পতন নীরবতায় নাটক শুর“ হলো। প্রথম দৃশ্য ছিলো পাকিস্তানীদের শোষনের বিরূদ্ধে বাঙালীদের স্বাধীনতার দাবীতে জেগে ওঠার প্রত্যয়।
এ দৃশ্যে মুক্তিকামী জনতার কথাগুলো তুলে ধরেন রফিক, মান্নান, ফাতেমা, বসির ও সোলেমান এর সংলাপে। এদের বিপরীতে পাক বাহিনীর দালাল হিসেবে রেজ্জাক এবং ২জন পাক সেনার নির্যাতন দেখানো হয়। ২য় দৃশ্য আসে ২৫ শে মার্চের গণহত্যা এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে আওয়ামী-লীগ নেতাদের আলোচনা নিয়ে। এ দৃশ্যে যে সকল চরীত্র তুলে ধরা হয় তা হলো: বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজর“ল ইসলাম, তোফায়েল আহমেদ, মোশতাক আহমেদ, ফজিলাতুন্নেসা, শেখ হাসিনা এবং ২জন পাক সেনা। এই দৃশ্যে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তৃতীয় দৃশ্যে দেখানো হয় মুক্তিযুদ্ধ। এই দৃশ্যেই বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। চতুর্থ দৃশ্যে জার্মানীতে বসবাসরত শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অ¯ি’রতা নিয়ে আলোচনা করেন বঙ্গবন্ধু। এই দৃশ্যে এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারকে খালেদা জিয়ার জন্মদিনের অনুষ্ঠানের দাওয়াত পত্র দিতে আসেন উপ সেনা-প্রধান জিয়াউর রহমান।

তিনি বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা করেন। এ দৃশ্যে বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমান, শেখ হাসিনা এবং ফজিলাতুন্নেসার চরীত্র সমূহ তুলে ধরা হয়। দর্শকরা ধারণা পেয়ে গেলেন দেশের রাজনৈতিক অ¯ি’রতা এবং সম্ভাব্য নানামূখী ষড়যন্ত্র নিয়ে। বিরতীর পর্দা পড়লো। দশ মিনিট বিরতীর সময় দর্শকরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন এবং অনেকেই অতিথীদের সাথে পরিচিত হ”েছন।

বিরতী শেষে ৫ম দৃশ্যে মঞ্চে এলেন সৈয়দ নজর“ল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু এবং মোশতাক আহমেদ। এই দৃশ্যে বাকশাল নিয়ে এবং চলমান রাজনীতি নিয়ে কিছু আলোচনার পর বঙ্গবন্ধু এবং সৈয়দ নজর“ল ইসলামের প্র¯’ানের পর খন্দকার মোশতাক প্রতিহিংসা পরায়ন হয়। মঞ্চে আসে মেজর ফার“ক এবং মেজর ডালিম। তারা বিভিন্ন আলোচনার পর বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। হত্যাকান্ডের পর করণীয় বিষয়গুলোও আলোচনায় উঠে আসে। কুমিল­ায় চোরা চালানে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় সেনা সদর দপ্তরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে ১৯৭৪ সালে যে ২২ জন সেনা সদস্যকে চাকরী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছিলো বঙ্গবন্ধু সরকার, যেহেতু তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় সাহসী ভূমিকা পালন করবে তাই মেজর নূর চৌধুরী, মেজর ডালিম, মেজর শাহরিয়ার, মেজর রাশেদ চৌধুরীসহ চাকরীচ্যুত সকলকে প্রমোশন দিয়ে সেনা বাহিনীতে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়।
চাকরী ফিরে পাবার লোভে ওরা মরিয়া হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য। এরপর এলো শেষ দৃশ্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের কাল রাত এই দৃশ্যে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার পরিজনকে কিভাবে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। তা দেখানো হলো। এই দৃশ্যের পরই নাটক শেষ হয়। দর্শকরা এতটাই বেদনাহত এবং আবেগাপ্লুত হয়ে যান যে, তারা অনেকক্ষন নিরবে বসে থাকেন। অনেকেরই চোখে অশ্র“ টলটল করছিল। তারা ফিরে গিয়েছিলেন ১৯৭৫ সালের স্মৃতিতে।

কোলকাতার বরানগর স্রোত নাট্য একাডেমী প্রযোজিত, বঙ্গবন্ধু থিয়েটার এর সহযোগীতায়, উত্তর কোলকাতার সৃষ্টি ছাড়া নাট্যসং¯’া এবং বরানগর স্রোত নাট্য একাডেমীর যৌথ প্রয়াসে সুনিপুন দক্ষতায় এ নাটকটি নির্দেশনায় ছিলেন অভিজ্ঞ নাট্যজন রাজা সরকার আবহ-সঙ্গীতে জি বাংলার মৃগনাভী চট্টোপাধ্যায়, আবহ নিয়ন্ত্রণে বাপী, মঞ্চ অজিত রায়, আলো : হর্ষনারায়ন দাস, রূপসজ্জা: মোঃ আলী, পোষাক: সোমনাথ দাস, অভিনয়ে: আব্দুল মান্নান চরিত্রে অমিত গাঙ্গুলী, রফিক ও মেজর ফার“ক চরিত্রে ঈশান সাহা, সোলেমান ও আজিজ পাশা চরিত্রে- সুরজিৎ শর্মা, রেজাউল ও মেজর মহিউদ্দিন চরিত্রে অপূর্ব ঘোষ, বসির চাচা ও মেজর নূর চরিত্রে গোরা ধর, মকবুল ও মেজর ডালিম চরিত্রে বুবাই মাইতি, ফাতেমা চরিত্রে ঈন্দ্রানী দত্ত, পাকসেনা চরিত্রে – সৌমিত ঘোষ, অভিজিৎ দত্ত, তুষার কান্তি ঘোষ, এবং দেবাশিষ সরকার, সৈয়দ নজর“ল ইসলাম চরিত্রে- কিংশুক মুখোপাধ্যায়, তাজউদ্দিন আহমেদ এবং আকিব হাসান আবুল চরিত্রে- প্রমিত কার্জী, তোফায়েল আহমেদ ও রাজাকার চরিত্রে গোপাল সর্দার, ফজিলাতুন্নেসা চরিত্রে- সুচরিতা মুখোপাধ্যায়, জিয়াউর রহমান চরিত্রে- তুষার কান্তি ঘোষ, খন্দকার মোশতাক আহমেদ চরিত্রে- সঞ্জয় ঘোষ, শেখ হাসিনা চরিত্রে- মোনালিসা রায় চৌধুরী, শেখ কামাল চরিত্রে – দেবাশীষ সরকার এবং বঙ্গবন্ধু চরিত্রে -জি বাংলার খ্যাতিমান অভিনেতা বিমান চক্রবর্তী অনবদ্য অভিনয় করেন।
তাদের অভিনয় দর্শক নন্দিত হয়। নাটকটি মঞ্চায়নের আগে ও পরে উপ¯ি’ত দর্শকবৃন্দ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা কে কিভাবে সহযোগিতা করেছেন সেসব স্মৃতিচারণ করেন নিজেদের মধ্যে এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপ¯ি’ত সংখ্যা গরিষ্ঠ দর্শক জানান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এবং পরবর্তী ২১ বছর ব্যাপী নানাবিধ রাজনৈতিক নিগ্রহের কারণে তারা জন্মভূমি বাংলাদেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কলোনীতে ¯’ায়ী ঠিকানা গড়েছেন। আজও বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর জন্যে তাদের মন কাঁদে, এজন্যই তারা নাটকটি দেখতে ছুটে এসেছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপ¯ি’ত ছিলেন কোলকাতার প্রেস ক্লাবের মান্যবর সভাপতি স্নেহাশীষ সুর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ¯ি’ত ছিলেন জি বাংলার মীরাক্কেল এর প্রাণ সদস্য ডাঃ কৃষ্ণেন্দু চ্যাটার্জী, বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বঙ্গবন্ধু থিয়েটার নিউইয়র্ক কম।

Powered by themekiller.com