Breaking News
Home / Breaking News / ফাইনালে যে ৫ কারণে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ

ফাইনালে যে ৫ কারণে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ

জেলা প্রতিনিধি :এশিয়া কাপের ফাইনালে শুক্রবার বিকালে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে নামবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপজয়ী দলটির বিপক্ষে সাম্প্রতিক সময়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা আছে টাইগারদের। তবে সাফল্যর ঊর্ধ্বগামী রেখায় হাঁটা মাশরাফীর দল মাঠে ছেড়ে কথা বলার নয়।

আরব আমিরাতে চলতি আসরেই নানা চরাই-উতরাই আর কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এই ভারতের কাছে, আফগানিস্তানের কাছেও হেরেছে। আবার সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করে ফাইনালের টিকিটও কেটেছে। শিরোপার মঞ্চে নিশ্চিতভাবেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়বে টাইগাররা।

ক্রিকেট বিশ্লেষকদের চোখে দেখে নেয়া যাক এমন ৫টি কারণ, যা ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে এগিয়ে রাখবে বাংলাদেশকে-

তারুণ্যের শক্তি
আঙুলের চোটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ থেকেই নেই তামিম ইকবাল। পাকিস্তান ম্যাচের আগে ছিটকে গেছেন সাকিব আল হাসানও। ভারতের বিপক্ষে তাহলে কী নিয়ে ফাইনালে লড়বে বাংলাদেশ? উত্তরটা হল- অভিজ্ঞ বাকি সিনিয়রদের সঙ্গে একঝাঁক তরুণই হবেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার তুরুপের তাস!
তারুণ্য পেরোয়নি, তবে ক্রিকেটে ছাপ রাখার শুরুটা হয়ে গেছে। মাঠের খেলায় পরিপূর্ণতার ছাপ পাওয়া যাচ্ছে তরুণ টাইগারদের মাঝে। পেসার মোস্তাফিজুর রহমান জাতীয় দলে আছেন সেই ২০১৫ সাল থেকে। দলের পেস আক্রমণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাবেক অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ওয়ানডে দলে জায়গাটা পাকা করছেন ব্যাটে-বলে। এরইমধ্যে প্রমাণ করেছেন স্পিন দক্ষণক। ভারতের বিপক্ষে সাকিববিহীন বাংলাদেশের স্পিন ভরসা হবেন তিনিই। সঙ্গে ব্যাটেও রাখতে পারেন অবদান।

তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান লিটন দাস এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত ব্যাট হাতে উজ্জ্বল নন। তার কাছে একটা দুর্দান্ত ইনিংসের পাওনা আছেই। আরেক উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ মিঠুন ব্যাটহাতে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ভারতের বিপক্ষে আরেকবার জ্বলে ওঠার পালা তার। সঙ্গে সৌম্য-মুমিনুলদের কাছেও একটা ঝলমলে ইনিংস পাওনা হয়ে আছে বাংলাদেশের। এই তরুণদের যে কেউ আলো কাড়তে সক্ষম ফাইনালে।

অভিজ্ঞ মিডলঅর্ডার
তামিমের অনুপস্থিতিতে পুরো এশিয়া কাপ জুড়েই ওপেনিংয়ে ব্যর্থ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, সৌম্য সরকাররা হয়ত এখনও অভিজ্ঞদের অভাবটা পূরণ করতে পারেননি। এরপরও ফাইনাল পর্যন্ত আসার পেছনে বোলারদের পাশাপাশি কৃতিত্বটা নিশ্চিতভাবেই মিডলঅর্ডার ও লোয়ার মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের।

ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে আছেন মুশফিকুর রহিম। পাঁজরের চোট আর ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে খেলেও একটি শতক, একটি ৯৯ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস উপহার দিয়েছেন মুশফিক। ৪ ম্যাচে ৭০ গড়ে ২৯৭ রান করেছেন টাইগার উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। দলের আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১৫০ রান রসদ যুগিয়েছে মিডলঅর্ডারে।

জরুরী তলব পেয়ে উড়ে গিয়েই ম্যাচ পাল্টে দেয়া অপরাজিত ফিফটি করেছেন ইমরুল কায়েস। ব্যাটিংয়ে শেষদিকে তরুণ মিরাজের সঙ্গে অধিনায়ক মাশরাফীর ছোট ছোট ঝড়ো ইনিংস বাংলাদেশকে দিচ্ছে লড়াইয়ের পুঁজি। নয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে মাশরাফী তাই বাড়তি পাওয়া। সবমিলিয়ে অভিজ্ঞ এই সিনিয়রদের যে কোউ দাঁড়িয়ে গেলে দিনটি যে বাংলাদেশের হত পারে সেটির প্রমাণ মিলেছে বহুবার। শিরোপার মঞ্চে টাইগার দলও আরেকটি সিনিয়ে-শোর দিকে তাকিয়ে থাকবে।

ম্যাজিশিয়ান মোস্তাফিজ
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের পেস ভরসা তিনি। ‘কাটার মাস্টার’ মোস্তাফিজুর রহমান ফিরেছেন চেনা ফর্মে, চেনা ছন্দে। চোট ও পুনর্বাসন ধকল পেরিয়ে গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ থেকেই সেরাটা দিতে শুরু করেছিলেন ফিজ, এশিয়া কাপে যেন সেটার পুনর্জন্মই ঘটিয়েছেন। ৪ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে চলতি আসরে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সেরা বোলার বাঁহাতি এ টাইগার পেসার।
এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত ৩২ ওভার বল করেছেন মোস্তাফিজ। এই ৩২ ওভারে রান দিয়েছেন ১৪৭ রান। গড় পাঁচেরও কম। অভিজ্ঞ মাশরাফীর সঙ্গে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে অবধারিতভাবে মোস্তাফিজই সেনাপ্রধান। সঙ্গে গড়ে তিন রান দেয়া মিরাজের কিপ্টে বোলিং ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশকে যোগাচ্ছে ভরসা।

ফিজ সুপর ফোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওভারে ম্যাজিক দেখিয়েছেন। আফগানদের জিততে লাগত ৮ রান, মোস্তাফিজ দেন মাত্র ৪ রান। যার দুটি আসে বাই থেকে। পাকিসস্তানের ব্যাটসম্যানদের তো নাচিয়েই ছেড়েছেন! ৪ উইকেট দখলে গেছে তার। শিরোপার মঞ্চে আরেকবার ম্যাজিশিয়ান ফিজের দেখা মিললেই বাংলাদেশের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

একজন মাশরাফী, এবং…
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা নিয়ে আসলে নতুন কিইবা লেখার আছে! বোলিংয়ে ধারাবাহিকতা, টুকটাক ব্যাটিংয়ে কার্যকরী অবদান, ফিল্ডিংয়ে বুড়ো হাড়ের ভেল্কি; কোথায় নেই তার ছাপ। আবার দলে মাস্টারমাইন্ড যে বাংলাদেশ অধিনায়কই, সেটা না বললেও চলে। তীক্ষ্ণ ক্ষুরধার নেতৃত্ব এবং দলকে উজ্জীবীত করার সহজত ক্ষমতাটা তো মাশরাফীর আছেই, এই এশিয়া কাপেই বারবার সেটি নতুন করে চোখে পড়েছে ক্রিকেটবোদ্ধাদের।

মাশরাফী বুদ্ধিদীপ্ত এই অধিনায়কত্বই বাংলাদেশ দলের সেরাটা বেরিয়ে আনতে সাহায্য করে। কি তামিম, কি সাকিব, কি মুশফিকের মতো অভিজ্ঞরা; সেরাটা দেয়ার পর অনুপ্রেরণার নামটির জায়গান অকপটে বলেন মাশরাফির কথা। তরুণরা যে শাণিত হচ্ছে, সে তো এই মাশরাফীর ছাতাতলেই।
পাকিস্তানের বিপক্ষে পেসারদের না এনে প্রথমে মিরাজকে দিয়ে বল করিয়েছিলেন মাশরাফী। মিরাজ এসে প্রথম ওভারেই তুলে নিয়েছেন ফখর জামানকে। আসিফ আলীকে সঙ্গে নিয়ে যখন ম্যাচটা বেরই করে নিচ্ছিলেন ইমাম-উল-হক, তখন মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহকে ব্যবহার করে সেই কাটাও দূর করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

এশিয়া কাপের শিরোপা থেকে যখন একহাত দূরে টিম টাইগার্স, মাশরাফী প্রস্তুত সেরাটা দিতে। বিশেষত বিপক্ষ দল যখন তার প্রিয় প্রতিপক্ষ ভারত! ২০০৪ ও ২০০৭ সালে ভারতকে একা হাতেই গুঁড়িয়ে ছিলেন মাশরাফী। বাংলাদেশের ট্রফি কেসে যখন প্রথম বড় কোনো শিরোপার হাহাকার, মাশরাফী প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করতে তো চাইবেনই, তার অনুপ্রেরণা টনিক হয়ে সেরাটা বের করে আনবে সতীর্থদেরও। তাতে দারুণ কিছুর অপেক্ষা করতেই পারে টাইগারপ্রেমীরা।

শিরোপা ক্ষুধা
২০১২ ও ২০১৬। চোখের সামনে থেকেও এশিয়া কাপের ট্রফিটা অধরাই রয়ে গেছে। এরপর নিধাস ট্রফিতে শেষ বলের নাটকে আরেকবার শিরোপা হাতছাড়া হওয়া। এইসব স্বপ্নভঙ্গের বেদনা তীব্র, তাতে একটি ট্রফির জন্য বাংলাদেশের ক্ষুধাটা অবশ্য কমেনি, বরং বেড়েছে দিন দিন।

শিরোপার পথে ভারত নামটাই জাগিয়ে দিতে পারে বাংলাদেশকে। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৬ এশিয়া কাপের ফাইনাল, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল, আর ২০১৮ নিধাস ট্রফির ফাইনাল। সবগুলো ম্যাচে একটাই প্রতিপক্ষের কাছে স্বপ্নভঙ্গ হয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। প্রতিপক্ষটা ভারত!
এইসব হারের ক্ষত কেবল একটা ম্যাচ দিয়েই ভোলা সম্ভব। সেটা দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনাল দিয়ে। টাইগারদের একটা শিরোপার ক্ষুধা সেরাটা বের করে আনলে শুক্রবার রাতে উল্লাস ছড়িয়ে পড়তে পারে লাল-সবুজের প্রান্তরজুড়ে।

Powered by themekiller.com