আবু হেনা মোস্তফা কমাল: ফরিদগঞ্জে মাদকাসক্ত মুরাদ হোসেন নিজেই গিয়েছেন থানায়। তার আঁকুতি, “আমাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠান। আমি মৃত্যুমুখে, আমাকে বাঁচান”। তার কথা শুনে সংশ্লিষ্ট ওসি তাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন কুমিল্লা পুনঃজীবন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় সেখানকার প্রতিনিধির হাতে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মুরাদ হোসেন (৩৫) নিজেই তার মাদকাসক্তির বর্ণনা দিয়ে বলেন, উপজেলার আষ্টা গ্রামের মৃত আব্বাছ মোল্লার ছেলে তিনি। বেশী দূর লেখাপড়া করা হয়নি তার। এক ধরনের ভবঘুরে জীবন যাপন করছিলেন। পার্শ্ববর্তী রামগঞ্জ উপজেলায় তাদের একটি ব্রিক ফিল্ড রয়েছে। সেখান থেকে তার হাতে প্রচুর টাকা আসতো। যখন যা মন চায়, সেভাবেই জীবন যাপন শুরু করেন। এরমধ্যে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। গত প্রায় ১০ বছর যাবত তিনি মাদকাসক্ত। প্রথমে গাঁজা সেবন করতেন। পরে ধরেন ইয়াবা। এতে, ধীরে তার জীবনিশক্তি হৃাস পেতে থাকে। পরিবার সদস্যরা তাকে নানা সময় অনেক বুঝিয়েছেন, কিন্তু তিনি ফিরে আসেননি।
মুরাদ হোসেন বলেন, এক পর্যায়ে তিনি বিয়ে করার চেষ্টা করেন। একে একে ২০টি পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু, তার মাদকাসক্তির কথা শুনে কেউই তার কাছে কন্যা বিয়ে দিতে রাজি হননি। এমনকি মাদকাসক্তির কথা শুনে কোনো পাত্রীও তাকে বিয়ে করতে চাননি। এক পর্যায়ে একটি পরিবারের এক কন্যার সঙ্গে বিয়ে করতে সক্ষম হন। গত প্রায় দুই বছর পূর্বে পারিবারিকভাবেই বিয়ে সম্পন্ন হয়। তাদের সংসারে এক বছরের একজন পুত্র সন্তান রয়েছে।
মুরাদ হোসেন জানান, আমি এখনও মাদকাসক্ত। কোনো অবস্থায়ই সেখান থেকে ফিরতে পারছি না। দিনে দিনে আমার জীবনিশক্তি ফুরিয়ে আসছে। আমি আমার স্ত্রীকে সময় দিতে পারছি না। আমি কোনো প্রকার কর্ম করতে পারি না। আমার জীবনের চাকা যেনো বন্ধ হয়ে আসছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে থানায় এসে ওসিকে বলি, আমাকে বাঁচান। আমি বাঁচতে চাই।
তার কথা শুনে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ আব্দুর রকিব কুমিল্লা পুনঃজীবন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। এরপর বিকাল পাঁচটা নাগাদ সেখান থেকে প্রতিনিধি এসে পৌঁছেন থানায়। যাবতীয় অফিসায়াল কাজ শেষে একটি প্রাইভেট কারযোগে মুরাদ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে বিকাল পাঁচটায় তারা রওয়ানা দেন কুমিল্লার উদ্যেশ্যে। এ সময় মুরাদ হোসেন এর সহোদর ভাই আকবর হোসেন (৪০), রুবেল হোসেন (২৮) ও মোঃ শাকিল হোসেন (২২) থানায় উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যপারে অফিসার ইন-চার্জ আব্দুর রকিব জানান, যিনি মাদকাসক্ত তিনি নিজেই এর দ্বারা মারাত্মক ক্ষতির শিকার। শুধু তাই নয়, তার জন্য পরিবার সদস্য ও সমাজও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি আরও বলেন, মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে জনগণের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায়, এর ভয়াবহ ছোবলে গোটা সমাজ ব্যবস্থা ধংশ হয়ে যেতে পারে।