বিশেষ প্রতিনিধিঃ অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির অপরাধে আড়ং এর উত্তরা শাখাকে জরিমানা করা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের বদলি আদেশ এখন টক অব দ্য কান্ট্রি।
সেই আদেশের একটি কপি সোমবার দিবাগত রাতে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। সবার জিজ্ঞাসা কেন বদলি করা হলো? এই কর্মকর্তার ছোট্ট মেয়েও তাকে একই প্রশ্ন করেছিলেন।
এই প্রসঙ্গে মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমার ছোট্ট মেয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছিল, ‘বাবা তুমি ভালো কাজ করলে তোমাকে বদলি করা হলো কেন?’ আমি তার উত্তর দিতে পারিনি। এটাই আমার ব্যর্থতা। তাকে উত্তর দেওয়ার জবাব আমার জানা নেই। আমি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী যেখানেই বদলি করা হবে, সেখানেই কাজ করতে হবে।’’
এর আগে, সোমবার (৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে পাঞ্জাবির দাম বেশি রাখার অভিযোগে আড়ংকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সংস্থাটির উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অভিযানকালে তারা দেখেন, আড়ংয়ের ওই শো-রুমে ৭০০ টাকার পাঞ্জাবি ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল।
জানা গেছে, গত ২৫ মে একজন ক্রেতা উত্তরা আড়ং থেকে একটি পাঞ্জাবি কেনেন ৭১৩ টাকায়। একই পাঞ্জাবি ৩১ মে কিনতে গেলে দাম রাখা হয় ১ হাজার ৩১৫ টাকা। এ চিত্র তুলে ধরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করেন ওই ভোক্তা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল উত্তরা আড়ং-এ অভিযান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পায় সংস্থাটি। পরে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিকে আড়ংকে জরিমানা করার ২৪ ঘন্টা পার না হতেই মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে বদলি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ভোক্তা অধিদফতর সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক পদ থেকে বদলি করে তাকে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, খুলনা জোনের এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘আমি যেখানেই যে অবস্থায় থাকি, ন্যায়ের পক্ষে কাজ করে যাবো। এর আগে দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ করেছি, সেসব এলাকায় ন্যায় ও সুনামের সঙ্গে কাজ করেছি। সেইসব জেলার মানুষ এখনও আমাকে ফোন করে, মনে রেখেছে। তবে ঈদের আগে আমার পরিবারের জন্য এই বদলির আদেশটি বিব্রত ও সুখের সংবাদ না।’
বাজার তদারকিতে মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার সোমবার দিবাগত রাতে মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি আজকে সারাদিনই ব্যস্ত ছিলাম। উত্তরা ও গুলশান এলাকায় অভিযানে ছিলাম। সেখান থেকে এসে অফিসে কাজ করেছি। ইফতার করেছি বাইরে। এরপর বেসরকারি টেলিভিশন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির একটি আলোচনায় অংশ নিয়েছি। সেখান থেকে বের হয়ে রাতে ফের আরটিভির আলোচনায় অংশ নিতে বের হই। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে আমার ভাই ফোন দিয়ে আমাকে জানায়, আমার বদলি হয়েছে। আমি আলোচনার বিরতিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে বদলির আদেশটি দেখতে পাই। এরপর আরটিভি থেকে বাসায় চলে আসি।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে কর্মরত এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বদলি আমাদের নিয়মিত প্রক্রিয়া। এটা হতেই পারে। আমি এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি। এখানে আসার আগে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। সুনামগঞ্জে দায়িত্ব পালনের পর যখন আমার বদলি হলো, সেখানের মানুষ আমার জন্য কান্নাকাটি করেছে। তারা মানববন্ধন করেছে। এখনও ফোন দেয়। মানুষ আমার কাজকে পছন্দ করে। মানুষের জন্য কাজ যেকোনও জায়গায় বসেই করা যায়। তবে ঈদের আগে এই বদলিটি আমার পরিবারের জন্য সুখবর নয়।’