Breaking News
Home / Breaking News / বিয়ের প্রস্তাব দিয়েই কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণে উদ্যত হয় এনজিও ম্যানেজার জীবন!

বিয়ের প্রস্তাব দিয়েই কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণে উদ্যত হয় এনজিও ম্যানেজার জীবন!

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি :: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ধর্ষকের হাত থেকে বাঁচতে দু’তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে এক কলেজ ছাত্রী।
আর এ ঘটনায় কলেজ ছাত্রীর মা বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় দুইজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করলে আফিয়া বেগম (৩০) নামের নারীকে সহযোগিতার দায়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে ঘটনায় মূল আসামীকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছে পরিবার ও এলাকাবাসী।
সূত্র মতে, উপজেলার পাকুল্যা বাজারে অবস্থিত আব্দুল হক ভবনে অবস্থিত যুগবাণী সমাজকল্যাণ নামে এক বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানের এরিয়া ম্যানেজার তানজিরুল হাসান জীবন নিজেকে এশিয়া ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় মেয়েদের চাকরি দেয়ার কথা বলে অফিসে নিয়ে এসে বাজে কুপ্রস্তাবসহ ধর্ষনের চেষ্টা করতেন। আর তাকে সহযোগিতা করতেন ওই অফিসের নারী কর্মী আফিয়া বেগম। এরই ধারাবাহিকতায় গত রবিবার (২৬মে) সকালে ঐ সংস্থার নারী কর্মী আফিয়া বেগমকে দিয়ে এক কলেজ ছাত্রীকে তার কক্ষে ডেকে নেয় জীবন। কেউ না থাকার সুযোগে মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে সে। পরে ছাত্রীটি কক্ষ থেকে বের হয়ে আসতে চাইলে মূল দরজা বন্ধ পায়। এসময় ধর্ষকের হাত থেকে বাঁচতে বারান্দার দরজা দিয়ে পাশের একটি ডোবায় লাফিয়ে পড়ে সে। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করে।
ওই কলেজ ছাত্রী জানান, বেশ কয়েকদিন আগে পরীক্ষা শেষে ফেরার পথে গাড়িতে দেখা হয় জীবনের সাথে। তখন তিনি আমার বিষয়ে জানতে চান। আমি আমার পরিচয় দিলে সে তাকে এশিয়া ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দেয় এবং ওই ব্যাংকে চাকরির জন্য লোক নেয়া হবে। আমাকে চাকরি দেয়ার কথা বলেন তিনি। গত (২৬ মে) ফোন করে তার এক নারী কর্মীকে পাঠাবেন তার সাথে আমাকে অফিসে যেতে বলেন। আমি বিশ^াস করে অফিসে যাই। অফিসে যাওয়ার পর ওই নারী কর্মী বাহিরে বের হয়ে যায়। এসময় জীবন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে এখান থেকে বের হতে দেয়া হবেনা বলে জানান তিনি। পরে আমাকে ধর্ষনের চেষ্টা করে। তখন আমি বের হতে চাইলে মূল দরজা বন্ধ পাই। এসময় পাশের আরেকটি দরজা খুলে দেখি বারান্দা। তখন কোন উপায় না পেয়ে আমি দু’তলা থেকে লাফ দেই। এরপর আমি আর কিছু জানিনা। জ্ঞান ফিরলে আমি দেখি হাসপাতালে। অভিযুক্ত জীবন ও সংস্থাটি প্রভাবশালী হওয়ায় শাস্তি নিশ্চিতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন প্রাণে বেঁচে যাওয়া ছাত্রীটি।
এই ছাত্রীর মা জানান,আমার মেয়েকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ডেকে নেয়া হয়েছিলো। পরে ধর্ষণ চেষ্টা করলে ধর্ষকের হাত থেকে বাচতে দু’তলা থেকে লাফ দিয়েছে। বাচঁবে কিনা মরবে এসব চিন্তা না করেই জীবনের মায়া ছেড়ে দিয়ে ধর্ষকের হাত থেকে বাচঁতে লাভ দিয়েছে। এ ঘটনায় জরিতদের কঠিন বিচার দাবি করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই সংস্থার এক কর্মী বলেন, জীবন স্যার ম্যানেজার হওয়ায় প্রায় সময় অফিসে তিনি একাই থাকতেন। এই সুবাদে মেয়েদের চাকরির দেয়ার কথা বলে অনেক মেয়েকে অফিসে নিয়ে আসতেন। তিনি মেয়েদের ক্ষতি করার চেষ্টা করতেন, কাউকে চাকরি দিতেননা। জীবন এই সংস্থার মালিকের ভাতিজা হওয়ায় এত বড় একটা ঘটনা ঘটানো পরেও মালিক পক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু ম্যানেজার পরিবর্তন করেছে।
স্থানীয়রা জানান, এই ম্যানেজার জীবন তার সহযোগি আফিয়ার মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিন নতুন নতুন মেয়ে নিয়ে আসতো চাকরির কথা বলে। তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। যত বাজে আড্ডা আছে সবই হতো এই অফিসে। এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানে প্রধানকে জানানো হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। এই জগন্য ঘটনার পর তিনি অফিসে এসেছিলেন। এরপর থেকে জীবনকে আর অফিসে আসতে দেখা যায়নি। নতুন এক ম্যানেজার আসছে। এঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার এক প্রকার চেষ্টা করছে মালিকপক্ষ। এ ঘটনায় জরিত সকল সদস্য ও এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ এখান থেকে এই প্রতিষ্ঠান অপসারনের দাবি জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসক ডা: প্রত্যয় বড়ুয়া বলেন, বিভিন্ন পরীক্ষা করার পর মেরুদন্ডের একটি হাড় ফাটল পেয়েছি এবং তার পায়ে কাটা পেয়েছি। চিকিৎসা শেষে তাকে এটি বেল্ট দেয়া হয়েছে এবং দেড় মাসের বিশ্রামে থাকতে বলা হয়েছে। তিন সপ্তাহ পর তাকে দেখা করতে বলা হয়েছে। তখন দেখে পরবর্তী চিকিৎসা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া এখন আগের থেকে সুস্থ আছে।
এ বিষয়ে মির্জাপুর থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুস সামাদ জানান, মঙ্গলবার ওই ছাত্রীর মা বাদি হয়ে মির্জাপুর থানায় জীবন ও আফিয়াকে আসামি করে মামলা করলে পুলিশ আফিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। অপর আসামি জীবন পলাতক আছে।তাকে ধরতে চেষ্টা করছে পুলিশ।

Powered by themekiller.com