লেখক: রাখি খান
এটি এদের জীবনের ঘটনা । পরি তখন কুমিল্লা সরকারী মহিলা কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্রী । নীলিমা তার খুব ঘনিষ্ট বান্ধবি । তারা একই সাথে হোস্টেলে থাকত ।
যেখানেই যাক না কেন দুজনকে একই সাথে পাওয়া যেত ।
একদিনের ঘটনা । সেদিন তারা কুমিল্লা শহরের মধ্যে দিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছিল । হঠাত্ পেছন থেকে
কে যেন ডাক দিল ‘এই নীলিমা ।’দুজনেই পেছন ফিরে তাকাল । দেখল এক সুদর্শন যুবক । আরে এতো
নীলিমার দূর সম্পর্কের মাসতুতো ভাই তৌসিফ । যাহোক ঐদিনই তৌসিফ সাথে পরিচয় হয় পরির
বেশ কিছুদিন কেটে গেল । পরি কেন যেন মনের কোন একখানে তৌসিফির প্রতি টান অনুভব করল ।
ওদিকে তৌসিফেরও একই অবস্থা । তৌসিফ প্রায়ই পরির হোষ্টেলে আসতে লাগল পরিকে দেখার জন্য । কিন্তু মনের কথাটি আর বলা হয় না তাকে । এদিকে পরিও এই টান আর সহ্য করতে পারলনা । সেই প্রথম বলল ভালবাসার কথাটি । শুরু হল দুটি জীবনের একটি নতুন অধ্যায় ।
ওদিকে নীলিমা সবই জানতে পারল । সে তাদের সবরকম সহযোগিতা করতে লাগল । এভাবেই চলছিল এক
অবুঝ প্রেম । তারা একসাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত । অনেক আনন্দ আর সুখ ছিল সেইদিন
গুলোতে ।
একসময় ওরা সিদ্ধান্ত নিল ওরা বিয়ে করবে । গোপনে করেও ফেলল । দুই ফ্যামিলির কেউ জানল না
। যাহোক এসব খবর বেশি দিন চাপা থাকে না । জেনে গেল দুইফ্যামিলি ।
তৌসিফ ছিল পাটওয়ারী আর পরি ছিলো খান বংসের মেয়ে । তৌসিফ এর বাবা মা এই বিয়ে মেনে নিল না ।
পরির বাড়ি থেকেও প্রায় একই সমস্যা হল । তবুও তারা বিচ্ছিন্ন হল না । তারা কুমিল্লা একটি
বাসা ভাড়া নিল । তৌসিফ তার জমানো টাকা দিয়ে ছোট খাট একটা ব্যবসা শুরু করল । বেশ সুখে শান্তীতেই চলছিল তাদের দুজনের সংসার ।
কিন্তু হায় ! নিয়তির কি নির্মম পরিহাস । হঠাত্ করেই তৌসিফ অসুস্থ হয়ে পড়ল এরপর হসপিটাল, মেডিকেল চেকাপ, রিপোর্ট । রিপোর্টে জানা গেল তৌসিফ ক্যান্সার আক্রান্ত ।
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল পরির । একমুহূর্তেই যেন সমস্ত জ্ঞান হারিয়ে ফেলল সে । নিজেকে কোন মতে সামলে নিল । ডাঃ জানাল ৫০ লাখটাকা লাগবে । তাহলেই তৌসিফকে পূর্ণ সুস্থ করা যাবে ।
পরি সাথে সাথে তৌসিফ এর বাবা মার কাছে গেল তৌসিফকে নিয়ে । তৌসিফের বাবা জানালেন তিনি কোন
টাকা দিতে পারবে না ।
যদিও তিনি ছিলেন প্রচুর সম্পদের মালিক ।
পরি আর দাড়াল না । তৌসিফকে নিয়ে চলে এল বাবার বাড়ি ।বাবার ছোট একটা ব্যবসা ছিল ।
তার যা পুঁজি ছিল সবটুকুই দিয়ে দিল তৌসিফের চিকিত্সার জন্য । টাকা ফুরিয়ে গেল কিছুদিনের
মধ্যে । এদিকে তৌসিফও দিন ফুরিয়ে আসছে ।
একদিন সকালে পরি ঘুম থেকে উঠে তৌসিফকে ডাকল । কিন্তু ঐদিন তৌসিফ আর ঘুম থেকে উঠল না।
পরি নির্বাক পাথর হয়ে গেল । তার মুখে কোন কথা নেই ,চোখে নেই অশ্রু । শুধু থেকে থেকে
একটি কথাই বলছিল “আজ তুমি কোথায় গেলে আমাকে ছেড়ে , আমাকে কেন বলে গেলে না যে তুমি চলে
যাচ্ছ ?” তৌসিফকে কবর দেওয়া হল । তখনো পরির চোখে অশ্রুর ফোটা গড়িয়ে পড়েনি ।
সে আজ বড় একা । ৫ বছর পার হয়েছে । তবু এখনো ভোলেনি তৌসিফর কথা । বিধবার সাজে চাপা কষ্ট
নিয়ে আজো ঘুরে বেড়ায় । তবে সে এখন মাঝে মাঝে কাঁদে । সে আজো তৌসিফের বড় বাঁধানো ছবি
বুকের উপর নিয়ে ঘুমায় ।
যখন সে তার জীবনের এই কাহীনিটা বলছিল তার চোখে জলের ধারা দেখেছি আমি । জানিনা তুমি কোথায় আছ , কেমন আছ ।
আজ তোমাকে বড় বেশি মিস করি । যেখানেই থাকো , ভাল থাকো ।