বিশেষ প্রতিনিধিঃ
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বেশ কিছু দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক করুণ ঘটনার সূত্রপাত ঘটছে। এমনই একটি ঘটনা ইয়েমেনের শাইমা সুইলের। আমেরিকার অকল্যান্ডের শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল শাইমার সন্তান আবদুল্লার। ভেন্টিলেশনে থাকা জটিল রোগে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী সন্তানকে দেখতে যাবার ক্ষেত্রেও এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। কেননা শাইমা ইয়েমেনের নাগরিক।
শাইমার পুত্র আবদুল্লা হাসানের জন্মের কিছু দিন পরে মস্তিষ্কের জটিল রোগ ধরা পড়ে। ডাক্তাররাও শিশুটির বাঁচার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। এমতবস্থায় মা শাইমা শুধু একটিবারের জন্য সন্তানের হাত দুটো ধরতে চান। পাশে থাকতে চান।
ইয়েমেনেই জন্ম আবদুল্লা ও তার বাবা আলি হাসানের। কিন্তু তারা আমেরিকারও নাগরিক। আলির পরিবার ৮০-র দশকে ক্যালিফর্নিয়ায় চলে আসে। কিন্তু ইয়েমেনে বাকি স্বজনদের সঙ্গে তাদের ভালই যোগাযোগ ছিল। আবদুল্লার মস্তিষ্কের অসুখ ‘হাইপোমায়ালিনেশন’ ধরা পড়ার পরে আট মাসের শিশুকে নিয়ে সেই সময় ইয়েমেনে ছিলেন আলিরা। পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত সে দেশ ছেড়ে বাধ্য হয়ে তারা চলে যান মিশরে। মাত্র তিন মাস আগে ছেলের চিকিৎসার জন্য আলি আমেরিকায় ফিরে আসেন। সেই মুহূর্তে কিছু অসুবিধায় তাদের সঙ্গে আসতে পারেননি শাইমা।
আলি ভেবেছিলেন, স্ত্রী পরে চলে আসবেন। এর মধ্যেই অকল্যাল্ডের হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, আবদুল্লার হাতে আর বেশি দিন সময় নেই।
গত শনিবার জন্মদিন ছিল শিশুটির। চিকিৎসকদের কথা শোনার পর থেকে আর স্থির থাকতে পারছিলেন না শাইমা। তবে আমেরিকায় আসার চেষ্টা করতেই জানতে পারেন, তাকে ভিসা দেয়া হবে না। ছেলের মুখটা আর দেখতে পাবেন না ভেবে যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন শাইমা। শুধু একটিবার ছেলের হাতটা ধরে তার পাশে কিছুক্ষণ বসতে চেয়েছিলেন এই মা।
তবে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই হবার পর মার্কিন বিদেশ দফতর অবশ্য সেই মা, শাইমা সুইলের ভিসা মঞ্জুর করেছে। আমেরিকান-ইসলামিক কাউন্সিলের উদ্যোগে মিশর থেকে আমেরিকাগামী প্রথম যে বিমান আছে, তারই টিকিট দেয়া হচ্ছে শাইমাকে। সবার এখন একটাই প্রার্থনা, মায়ের সঙ্গে ছেলের শেষ দেখাটা যেন হয়।