আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ফরিদগঞ্জ:
কালের আবর্তে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির মধ্যে অন্যতম যাত্রাপালা। এ যাত্রাপালা গ্রাম বাংলার মানুষের হৃদয়ে শিহরণ জাগায়। সরকারী-বেসরকারী ও সামাজিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, আকাশ সংস্কৃতি ও অশল্লীলতা এ যাত্রাপালাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। যাত্রাপালার ঐহিত্যকে ধরে রাখতে ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে প্রায় পাঁচ বছর পর মঞ্চায়ন হলো যাত্রাপালাটি। উপজেলার ৯নং গোবিন্দপুর ইউপির দক্ষিণ ধানুয়া গ্রামে শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূ মন্দির প্রাঙ্গণে যাত্রাপালাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে শনিবার রাতে।
স্থানীয় দাস বাড়িতে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ছিলো বার্ষিক মহাউৎসব, দ্বতিীয় ও তৃতীয় দিন নাম কীর্তন। চতুর্থ দিন অনুষ্ঠিত হয় যাত্রাপালা ‘সতী কলঙ্কিনী’। যাত্রানুষ্ঠানে যারা অভিনয় করেছেন, তারা সকলেই সে বাড়ির বাসিন্দা। বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত। কিন্তু, যাত্রানুষ্ঠানে অভিনয় করা অধিকাংশই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বঞ্চিত। এদের কেউ মৎস্য শিকার করেন। কেউ মৎস্য ক্রয়-বিক্রয় করে জীবীকা নির্বাহ করেন। প্রায় পাঁচ ঘন্টার এ যাত্রাপালায় প্রায় সকলে অনবদ্য অভিনয় করেছেন। দেখে মনে হচ্ছিলো তারা পেশাদার নাট্য শিল্পী।
যাত্রাপালা চলাকালে কথা হয় মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রী রাধা কৃষ্ণ দাস এর সঙ্গে। তিনি জানান, তারা প্রতি বছরই এমনি করে রাতভর যাত্রাপালা করতেন। পাঁচ বছর পূর্বে একটি অনাকাংখাতি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার ধারাবাহিকতা বন্ধ ছিলো। এ বছর সকলের সহযোগিতায় আবার শুরু হলো। তিনি এ জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, সরকারী প্রশাসন ও ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
যাত্রাপালা ‘সতী কলঙ্কিনী’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন, রাধা কৃষ্ণ দাস, বাবুল দাস, অমূল্য দাস, রতন দাস, নির্মল দাস, সুজিত দাস, মৃদুল দাস, মিঠন দাস ও সনজিত দাস। পরিচালনা করেছেন নিপেন্দ্র চন্দ্র দাস।
সহ পরিচালনায় ছিলেন রণজিত চন্দ্র দাস। সার্বিক সহযোগিতা করেন দক্ষিণ ধানুয়া পঞ্চায়েত কমিটি ও দক্ষিণ ধানুয়া যুব সংঘ।
অভিনয় করেছেন রণজিত দাস, রিপন দাস, খোকন দাস, হরিপদ দাস, প্রকাশ দাস, ইন্দ্রজিত দাস, নরত্তম দাস, অজিত দাস, প্রবীর দাস, সুজন দাস, জুটন দাস, নিবাস দাস, বিমল দাস, পলাশ দাস, অরুন দাস, জ্যোৎস্না রাণী ও শিলা রাণী। অন্যান্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কাজল দাস, জহলাল দাস, অমৃত দাস ও তপন দাস। যাত্রা পালার অভিনয় দেখতে নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধসহ সকল শ্রেণী-পেশার প্রায় সহস্রাধীক মানুষ ভীড় জমান।