Breaking News
Home / Breaking News / বান্দরবানের রুমায় শরণার্থীদের নিয়ে আসে আরকান আর্মি !

বান্দরবানের রুমায় শরণার্থীদের নিয়ে আসে আরকান আর্মি !

বান্দরবান প্রতিনিধিহ::

বান্দরবানের রুমা সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে শরণার্থীরা
বান্দরবানের রুমা উপজেলার প্রাংসা সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের বাংলাদেশে নিয়ে আসে মিয়ানমারের শসস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরকান আর্মি (এএ)। এমন তথ্য জানা গেছে স্থানীয় একাধিক সূত্রে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার তিনটি উপজেলায় খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করে আলোচনায় আসা মিয়ানমারের শসন্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরকান আর্মি গত তিন বছর তাদের অপরাধ কার্যক্রম সীমিত করে। গত শনিবার প্রথম দফায় মিয়ানমারের চীন রাজ্য থেকে ১৬৩ জন বৌদ্ধ শরণার্থী বান্দরবানের রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের চক্ষ্যং সীমান্তের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করিয়ে ফের স্থানীয়দের মাঝে আলোচনায় আসে (এএ)। আর মিয়ানমার থেকে তাদেরকে অনেকটা জোর পূর্বক বাংলাদেশের নিয়ে আসে আরকান আর্মি। গত বুধবার আরো ৪০ পরিবার সেখানে অনুপ্রবেশ করার কারনে এ নিয়ে অনুপ্রবেশের সংখ্যা দাড়ায় ২০৩জনে।
আরো জানা গেছে, মিয়ানমার সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে আরকান আর্মিসহ বিভিন্ন বিদ্রোহ গোষ্ঠির সাথে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারনে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কারনে মূলত প্রানে বাঁচানোর জন্য আরকান আর্মি সমর্থিত মিয়ানমারের এসব নাগরিকদের বাংলাদেশে নিয়ে আসে। গভীর অরণ্য ঘেরা বান্দরবান – মিয়ানমার সীমান্ত থেকে অন্তত ৩ দিন পাঁয়ে হেটে তারা জেলার চক্ষ্যংপাড়ায় প্রবেশ করে অবস্থান গ্রহন করে।
এই ব্যাপারে রুমার রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার ভান লং বম বলেন, তাদের আরকান আর্মি রুমায় নিয়ে আসে, তবে কি জন্য তাদের এখানে এনেছে আমরা তা এখনো জানতে পারিনি।
আরো জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে আসার পর তারা খোলা জায়গায় অবস্থান করলেও স্থানীয়রা তাদের জন্য তাবু ও খাদ্য সরবরাহ করলেও ক্ষোধ প্রাংসা ইউনিয়নের উক্ত এলাকার স্থানীয়রা খুব গরীব হবার কারনে তাদের যথাযথ ভাবে খাদ্য দিতে পারছেনা। ফলে শরনার্থীরা দিনে এক বেলা ভাত, তার সাথে তরকারি হিসাবে পাহাড়ী আলু ও কলাগাছের বাকলসহ বিভিন্ন লতাপাতা রান্না করে খিদা নিবারণ করছে। একজনের খাবার তারা চার-পাঁচজন মিলে ভাগ করে খাচ্ছে।
এই ব্যাপারে রুমার রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড মেম্বার সাংকিং বম বলেন,বৌদ্ধ অনুসারী এই শরনার্থীদের রুমার চাইক্ষ্যং পাড়ায় অনেকটা গার্ড দিয়ে আরকান আর্মি নিয়ে আসে, পরে তারা ফের চলে যায়, তিনি আরো বলেন, আপদত পাড়াবাসীরা যতসামান্য খাদ্য সরবরাহ করছে তাদের।
এদিকে পাহাড়ে প্রচন্ড শীতের কারনে অনুপ্রবেশকারীরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন, মিয়ানমারের সেনাদের নির্যাতন আর অত্যাচারের মুখে চিন প্রদেশের পালাটওয়া শহরতলি তরোওয়াইন এর পশ্চিমে খামংওয়া, কান্তালিন গ্রামগুলো থেকে খুমি, রাখাইন, বম ও খেয়াং সম্প্রদায়ের শিশুসহ অনুপ্রবেশ করে। গত বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমার থেকে আসা এক রাখাইন নারী প্রসব বেদনা উঠলে তাকে পাশের একটি পাড়ায় নিয়ে সন্তান প্রসব করান স্বাস্থ্যকর্মীরা। আরো দুজন গর্ভবতী নারী আছেন। দু-একদিনের মধ্যে তাদেরও সন্তান প্রসব হতে পারে।’
রুমায় অনুপ্রবেশর্কৃত শরনার্থীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এই ব্যাপারে বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা: অংসুই প্রু বলেন, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে এলাকা গুলোর স্বাস্থ্য কর্মীদের ইতিমধ্যে সজাগ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রুমা উপজেলা প্রশাসন (সরকারী) সূত্রে জানা গেছে, এই পর্যন্ত শিশুসহ ১৬০জন মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ অনুপ্রবেশ করেছে এলাকাটিতে। তবে দেশের ২য় সর্বোচ্ছ শৃঙ্গ কেউক্রাডং থেকে উক্ত এলাকায় পায়ে হেটে পৌছাতে অন্তত ১দিন সময় লাগার কারনে বৃহস্পতিবার সেখানে বিজিবি ও সেনা সদস্যরা পৌছেন। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের ত্রাণ সামগ্রি দেওয়া সম্ভব হয়েছে কিনা জানা যায়নি।
এই ব্যাপারে রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাসসুল আলম জানান, এখানে বিজিবি ও সেনা সদস্যদের পাঠানো হয়েছে, তারা ফিরলেই সরকারের নির্দেশনা মতো আমরা শরনার্থীদের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করবো।
গত ৪ জানুয়ারি দেশটির স্বাধীনতা দিবসের ভোরে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া রাখাইনের চারটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় সশস্ত্র আরকান আর্মি। তাদের হামলায় মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী বিজিপির ১৩ সদস্য নিহত হন এবং আরকান আর্মি অনেক বিজিপি সদস্য ও স্থানীয়দের বন্দি করে রাখে। এরপর থেকে মূলত রুমা সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের এলাকাগুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠলে নিরাপত্তার জন্যই তাদের অনুপ্রবেশের ঘটনা আরকান আর্মি।
কারা এই আরকান আর্মি ?
১৭৮৪ থেকে শুরু হওয়া আরকানি জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের একটি বড় দিক হলো এটা মূলত বৌদ্ধ নেতৃত্ব প্রধান। আরকান আর্মিও তার ব্যতিক্রম নয়। মিয়ানমারের রাজনীতিতে তাদের ‘এএ’ বলে উল্লেখ করা হয়।

Powered by themekiller.com