বিশেষ প্রতিনিধিঃ
পরীক্ষায় ফেল করে নিখোঁজ হয়েছিল ছেলে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ছেলের খোঁজে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবার বাড়িতে হন্যে হয়ে ঘুরলেও ছেলের খোঁজ পাননি। উপায়ান্তর না দেখে পুলিশের দ্বারস্থও হয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও লাভ না হওয়ায় আজও ছেলের খোঁজে পথে পথে ঘুরছেন ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধ সন্তোষ কুমার মাইতি।
চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেছে। কানেও ঠিকমতো শুনতে পান না। ঠিকমত পা দু’টোও চলে না। তবু মৃত্যুর আগে যদি ছেলের মুখ দেখতে পান, এই আশায় থেমে নেই তার অনুসন্ধান।
পুলিশ ও তার পরিবারের কাছ থেকে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের ভুপতিনগর থানার বায়েন্দা গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষবাবুর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলের নাম কৃষ্ণানন্দ আর ছোট ছেলের নাম দয়ানন্দ। সুভাষপল্লি হাইস্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়তো দয়ানন্দ।
১৯৮৯ সালের ২ জানুয়ারি, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফল বেরুনোর পর দেখা যায় দয়ানন্দ ফেল করেছে। দয়ানন্দ সেদিনের পর স্কুল থেকে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। দু’সপ্তাহ ধরে এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজির পর ২০ জানুয়ারি ভূপতিনগর থানায় ছেলে নিখোঁজের অভিযোগ জানিয়েছিলেন প্রাথমিকের শিক্ষক সন্তোষবাবু।
১৯৯৩ সালে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকে ছেলের খোঁজ পেতে হন্যে হয়ে রাস্তায় ঘুরছেন। তার অভিযোগ, বার বার পুলিশের দ্বারস্থ হয়ছেন কিন্তু তারা কোনও সাহায্যই করেনি।
২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে বড় ছেলেকে নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা হয়নি। বিষয়টি তার নজরে আনার জন্য ছেলের নিখোঁজ সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র মুখ্যমন্ত্রীর স্থানীয় দফতরে জমা দিয়ে এসেছিলেন।
কলকাতায় ভবানীভবনেও বহুবার ছেলের খোঁজে এসেছেন। সিআইডির কথা শুনে ২০০৬ সালের ২৭ এপ্রিল ভবানীভবনে নতুন করে অভিযোগও দায়ের করেন। কিন্তু আজও ছেলের নিখোঁজ রহস্যের কোনও কিনারা হয়নি। কাঁথি আদালতের আইনজীবী বিশ্বজিৎ সিংহ বলেন, গত ৫ বছর ধরে সন্তোষবাবুকে এই বৃদ্ধ বয়সেও আদালত চত্বরে ঘোরাঘুরি করতে দেখে আসছি। ছেলের জন্য বিভিন্ন জায়গায় বসে চোখের জল ফেলেন।
বড় ছেলে কৃষ্ণানন্দ মাইতি বলেন, ভাই নিখোঁজ হওয়ার বছর দুয়েক পর প্রতিবেশীদের কয়েকজন জানিয়েছিলেন কলকাতার শিয়ালদহ, ধর্মতলা ও বৌবাজার এলাকায় তারা ভাইকে দেখেছেন। কিন্তু আজও ভাইয়ের খোঁজ পাইনি। পরিবারের লোকজন জানান, কয়েক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দফতর থেকে একটা চিঠি এসেছিল। তাতে জানানো হয়েছিল, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু এখনও এ বিষয়ের কোন সমাধান মেলেনি।