Breaking News
Home / Breaking News / ‘আত্মহত্যা করেন’, সাংবাদিককে রেল সচিব

‘আত্মহত্যা করেন’, সাংবাদিককে রেল সচিব

ষ্টাফ রির্পোটারঃ
ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া বাবদ ৬৮ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। তবে এর কারণ জানতে গেলে সাংবাদিককে আত্মহত্যা করার পরামর্শ দিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব মোফাজ্জল হোসেন। এ ঘটনায় রেল সচিবকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনা।
মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে সচিবের কক্ষে ট্রেনের ভাড়ার বিষয়ে কথা বলতে গেলে সচিব সাংবাদিককে আত্মহত্যা করতে বলেন বলে জানায়।
জানা গেছে, ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীরা প্রতিটি চেয়ার আসনের জন্য নিজেদের অজান্তেই বাড়তি দিচ্ছেন ৬৮ টাকা। খোদ টিকিটের মূলভাড়ার হিসাব না দিয়ে, বাড়তি টাকাকেই দেখানো হচ্ছে আসল ভাড়া হিসাবে। এতে না বুঝেই প্রতারিত হচ্ছেন যাত্রীরা।
অতিরিক্ত টাকা কোন খাতে নেয়া হচ্ছে, তা যেমন টিকিটে উল্লেখ নেই, তেমনি তা কোথায় জমা হচ্ছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন নি রেল কর্মকর্তারা। তবে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রেলমন্ত্রী।

কেবিন আর চেয়ার এই দুই ক্যাটাগরিতে ঢাকা- কোলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে কমলাপুর রেলস্টেশন। কেবিন প্রতি আসন ৩ হাজার ৪ টাকা আর চেয়ার প্রতি আসন ২ হাজার ৫শ’ টাকা।
চেয়ার আসনের গায়ে লেখা হিসাব থেকে দেখা যায়, ভাড়া ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৮০ টাকা, ভ্যাট বাবদ ২৫২ টাকা আর ভ্রমণ কর বাবদ নেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। উল্লেখিত এই তিন খাতের যোগফল ২ হাজার ৪৩২ টাকা হলেও টিকিটেই লেখা আছে ২৫০০ টাকা। বাড়তি ৬৮ টাকা খেয়াল না করেই গুণে যাচ্ছেন যাত্রীরা।

যাত্রীরা বলেন, ‘রেল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাচ্ছি, এই বাড়তি টাকা কেন নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাড়তি টাকা নেয়ার ব্যাপারে কোনো কিছুই বলতে পারছেন না টিকিট বিক্রেতা।

কমলাপুর রেলস্টেশন টিকিট বুকিং সহকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রেল ভবনে আলোচনা করলে ভালো হয়। বিষয়টা আসলে কি হইছে এটা ওনারা ভালো বলতে পারবে।’

সপ্তাহে চারদিন ঢাকা-কোলকাতা যাত্রী বহন করে মৈত্রী এক্সপ্রেস। কমলাপুর রেলস্টেশনের তথ্য বলছে, প্রতি ট্রেনে থাকে ৪৫৬ জন যাত্রী। যার মধ্যে কেবিনের জন্য বরাদ্দ ১৪৪টি আসন আর বাকি ৩১২ জনই চেয়ারের। সেই হিসাবে প্রতি মাসে চেয়ারের যাত্রী ৪ হাজার ৯৯২ জন। আর বছরে ৫৯ হাজার ৯০৪ জন। প্রতি আসনে ৬৮ টাকা বেশি হলে বছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪২ লাখ টাকা।

বিপুল পরিমাণ এই টাকা কোন খাতে আদায় করা হচ্ছে? কিংবা তা জমা হচ্ছে কোথায়? জানতে চাওয়া হয়েছিলো রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব মোফাজ্জল হোসেনের কাছে। তবে বিষয়টি শুনেই রেগে ওঠেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আপনার এত উৎসাহ কেন! যে লোকটা জানতে চাচ্ছে সে নিয়মিত কলকাতা যায়। সে জানতে চাইলে আমরা বলে দিবো। কারণ এই জন্য আমাদের কাছে একটা ব্যাখ্যা আছে। তবে আপনাকে আমরা কেন ব্যাখ্যা দিবো। আপনার কি কোনো প্রয়োজন আছে? আপনি তো যাত্রীরা না।’

সচিব পরে ডেকে পাঠান রেলের অপারেশন বিভাগের উপ-পরিচালক মিয়া জাহানকে। তার কাছেও মেলেনি কোনো ব্যাখ্যা। তখন তারা বলেন এ বিষয়ে পরে কথা বলবো।

তবে পরদিন আবারো এ বিষয়ে কথা বলতে রেল সচিব মোফাজ্জল হোসেনের কক্ষে গেলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা না বলে সাংবাদিককে বলেন, ‘আপনি এখন আত্মহত্যা করেন। একটা স্টেটমেন্ট লিখে যান যে, রেলের লোকেরা আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না এ মর্মে ঘোষণা দিলাম যে তারা কথা না বলার কারণে আমি আত্মহত্যা করলাম।’

তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিচ্ছেন রেলমন্ত্রী। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘এখানে যদি অনিয়ম থাকে অবশ্যই দূর করবো আমরা।’

Powered by themekiller.com