ষ্টাফ রির্পোটারঃ
উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গঠনে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। তবে বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। বিশেষ করে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষায় বিদ্যমান বাস্তবতায় রয়েছে ব্যাপক সমস্যা, সংকট ও বৈষম্য।
ময়মনসিংহে প্রাথমিক শিক্ষার হালহকিকত নিয়ে ৫ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখেছেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান। ছবি তুলেছেন ডিস্ট্রিক্ট ফটো করেসপন্ডেন্ট অনিক খান। আজ পড়ুন ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় কিস্তি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বনাম কিন্ডারগার্টেন। রীতিমতো এক প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতায় কিন্ডারগার্টেন স্কুলের কাছে মার খাচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরকারি বেশিরভাগ স্কুলগুলোতেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে না বরং কমছে।
শিক্ষার্থীদের নতুন গন্তব্য হয়ে উঠেছে কিন্ডারগার্টেন। সেই সুযোগে চুটিয়ে ব্যবসা করছে কিন্ডারগার্টেনগুলো। এসব কিন্ডারগার্টেনে কোনো তদারকি যেমন নেই তেমনি নেই প্রশিক্ষিত শিক্ষকও। মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারের অভিভাবকরাও ভরসা করছেন কিন্ডারগার্টেনেই। যদিও এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে এক প্রকার জিম্মিই হয়ে আছেন তারা।
‘শিক্ষানগরী’ হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহের বিদ্যালয়গুলোতে এক সমীক্ষা চালিয়ে মিলেছে এসব তথ্য। প্রাথমিক শিক্ষার মানের পাশাপাশি শিক্ষাব্যয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাচম্যাপ এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য বেসরকারি স্কুল। চারদিকে অসংখ্য কিন্ডারগার্টেনের ভিড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
প্রথম কিস্তি: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শুধুই গরিবের স্কুল!
ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, জেলায় ২ হাজার ১৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর কিন্ডারগার্টেন বা বেসরকারি বিদ্যালয় রয়েছে ৬৪১টি। যদিও বেসরকারি হিসাবে দেখা গেছে, কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যাটা হাজার ছাড়াবে।
ময়মনসিংহে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগকে উপেক্ষা করে অভিভাবকরা শিক্ষা বাণিজ্যের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। পাড়া-মহল্লায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেনগুলো শিক্ষার্থী ধরতে ক্যাম্পেইন চালায়।
গাইড বইয়ের ব্যবহারের পাশাপাশি ‘নোট শিট’ প্রদান ও কোচিংয়ের ব্যবস্থাসহ নানা সুযোগ দেওয়ার নামে বেসরকারি এসব স্কুলগুলো শিক্ষার্থী ধরে। চাকচিক্যই সেখানে মূলকথা।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মানের ওপর আজকাল ব্যাপক তদারকি রয়েছে। শিক্ষা প্রশাসন এই ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করায় সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান, ভালো ফলাফল নিশ্চিত করতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সচেষ্ট রয়েছে। কিন্তু ভালো শিক্ষার পাশে চাকচিক্যপূর্ণ পরিবেশ কিন্ডারগার্টেনগুলোর বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। অভিভাবকরাও সেদিকেই ঝুঁকছেন।
শহরের সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন রাশেদা বেগম (৩৫)। তিনি তার সন্তানকে ৩ হাজার ৪শ’ টাকায় শহরের একটি কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করিয়েছেন। রাশেদা জানান, তার সন্তানের সমবয়সীরা কিন্ডারগার্টেনে পড়ে। তাই তার ছেলেকেও সেখানে ভর্তি করেছেন।
ময়মনসিংহ শহরের ৫২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভরা। সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল, লাইসিয়াম, আইডিয়াল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ফাস্ট মিডিয়াসহ একাধিক কিন্ডার গার্ডেন। এই বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী ৩৯০ জন।
গত বছর এখানে শিক্ষার্থী ছিলো ৩৭৫ জন। এক বছরে বিদ্যালয়টিতে মাত্র ১৫ জন শিক্ষার্থী বেড়েছে। অথচ স্কুল এলাকার ওইসব কিন্ডারগার্টেনে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।
সানকিপাড়ার স্কুলে গত সমাপনী পরীক্ষায় ৬২ পরীক্ষার্থী’র সবাই পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ জন। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন তিন বছর যাবত স্কুলটির প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে মোট শিক্ষকের সংখ্যা ১০ জন
এই বিদ্যালয়ের ছাত্র আবির হাসান মুরাদ চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা হালুয়াঘাট উপজেলার একটি মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি স্কুলই ভালো, কিন্ডারগার্টেনের চেয়ে।
শহরের ১১৫ গোলকিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রোকসানা পারভীন বাংলানিউজকে জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরিয়া অনেক বড়। আমরা বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি জানান, আমরা প্রতি মাসেই নিয়ম করে হোম ভিজিটে যাচ্ছি। কোন শিক্ষার্থী কী করছে, কতটুকু পড়াশুনা করছে সব খোঁজ খবর রাখছি। তারপরও কিন্ডারগার্ট