গল্পঃ তুমি অন্য কারো
লেখকঃ মাসুম শাহ
তারিখঃ ০২.০২.২০২৩
দীর্ঘ একবছর পর রিতুর সাথে দেখা।রিতু আমার গার্লফ্রেন্ড। তার সাথে দেখা করার ইচ্ছে ছিলো না।রিতু অনেক অনুরোধ করলো।তাই আজকে দেখা করতে আসলাম। আমাদের ক্যাম্পাসের বটতলায়।এ-ই বটতলায় রিতুর সাথে কত সময় কাটিয়েছি তার ঠিক নেই।স্মৃতির পাতায় সবকিছু গেঁথে আছে।গল্প, হাসিঠাট্টা, আগামী দিনগুলোতে কি ভাবে কাটাবো সে-ই পরিকল্পনা। সেগুলো এখন শুধুই একটা বইয়ের ছিঁড়ে যাওয়া পৃষ্ঠা। যাক সে কথা। কিছুক্ষণ পর রিতু এসে আমার পাশে বসলো। আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি রিতুর দিকে একবার তাকিয়ে সামনের দিকে চেয়ে রইলাম। রিতু তখন বললোঃ
-তুমি আগে দেখা হলে বুকে জরিয়ে নিতে। আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে। আজকে কিছুই করছো না কেনো।একটু তাকাও, বুকে জরিয়ে নেও।
-সম্ভব না।
-কেনো সম্ভব না।
-তুমি ভালো করেই জানো।
-এমন করোনা।
-কেমন করলাম।
-তুমি এমন করলে আমার কান্না আসে।
-আমারও একসময় কান্না এসেছিলো।
-বদলা নিচ্ছ।
-না।
-এখন কিন্তু আমার খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে।
-কেনো?
-বুকের ভিতরে খুব কষ্ট হচ্ছে।
-তা হলে কান্না করো।
– আমি একটু চিৎকার করতে চাই।
-করো
-চিৎকার করে কান্না করতে পারছি না।
-কেনো?
-কান্না করতে করতে রিতু বললোঃ আমাকে আর একবার গ্রহন করো।
– পারবো না।
– কেনো?
– তোমাকে গ্রহন করলে আমি তোমার সাথে সংসার করতে পারবো না।
– কেনো কেনো?
– তোমার ঠোঁটে অন্য পুরুষের স্পর্শ দেওয়া। সেখানে আমি স্পর্শ করতে পারবো না। তোমার মনটা অন্য পুরুষকে দিয়ে রেখেছো। সেখানে আমি যেতে পারবো না।
– মানুষ তো ভুল করে,আমিও ভুল করেছি। ক্ষমা করো।
– কিছু কিছু কাজ ক্ষমার যোগ্য না।আমি তারপরও তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
আমার কথা শুনে রিতুর মুখটা হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।মনে হচ্ছে যেনো কোনো কিছু পেয়েছে। কিন্তু তা অল্পক্ষণের জন্য। তারপর আমার কথা শুনে আবার সেই আগের মতো মুখে মেঘ জমে উঠলো।
-হাজেরা বললোঃ তা হলে তুমি আমাকে গ্রহন করবে।
-না।
-কান্না করে, না কেনো।
-তোমাকে ভালোবাসি, খুব বেশি ভালোবাসি তাই তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।তা এই নয় যে তোমাকে গ্রহন করবো।
-তুমি এমন কঠিন হতে পারবে।
-এত কঠিন হতে পারতাম না যদি তুমি আমাকে ছেড়ে না যেতে। ছেড়ে যাওয়ার কারনে আমি আজ কঠিন মানুষে পরিনত হয়েছি।
-একটু নরম হও।আমার দিকে তাকাও।দেখো আমি তোমার সে-ই রিতু।যাকে তুমি একনজর দেখার জন্য পাগল থাকতে।যাকে ভালোবেসে টিয়াপাখি ডাকতে। একটু তাকাও।
-দেখো সেগুলো অতীত। আমি আর সে স্মৃতিগুলো স্মরণ করতে চাচ্ছি না।
-আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না গো।বিশ্বাস করো।
-পারতে হবে,যখন তুমি বড়লোক ছেলের কাছে গিয়েছিলে তখন আমারও এরকম হয়েছে। ভেবেছিলাম তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।থাকতে পারবো না। কিন্তু দেখো আজ আমি ভালোই আছি।সুন্দর মতো আমার দিনগুলো চলে যাচ্ছে। আর সবচেয়ে বড়ো কথা আমার হবু বউ আছে।সে আমাকে খুব ভালোবাসে।আমি তার ভালোবাসা বলিদান দিতে পারবোনা।
-তুমি তাকে ভালোবাস।
-হুমম খুব ভালোবাসি। কিছুক্ষণ পর আসবে।
আমাদের কথায় মাঝে একটা রিকশা এসে সামনে দাঁড়ালো। সেখান থেকে একজন মেয়ে নেমে আসলো। বোরকা পরা। সে আর কেউ না আমার হবু বউ হাজেরা।সবসম পর্দা করে চলে।আমার সামনে এসে দাঁড়াল। তারপর বললোঃ
-আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম সালাম।
– আমার আসতে একটু সময় লেগে গেলো।তারজন্য দুঃখিত।
– আরে না কোনো ব্যাপার না। তুমি আমার পাশে বসো। আর পরিচয় হও,এ হলো রিতু।রিতু এ হলো হাজেরা আমার হবু বউ।
দু’জন দুজনের দিকে তাকিয়ে পরিচয় হলো।
তারপর হাজেরা রিতুকে উদ্দেশ্য করে বললোঃ
-আপু আপনার নাম রিতু তা-ই না।
-হৃমম,তুমি কি ভাবে আমার নাম জানো।
-আপনার কথা মাসুম ভাইয়া সব সময় বলতো।কত গল্প শুনেছি।
-রিতু মুচকি হেঁসে বললোঃ কি কি শুনেছো।
-আপনারা দু’জনে খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। ভার্সিটির সময়টা দু’জনে খুব এনজয় করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি, আড্ডা দিয়েছেন।
-রিতু আমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ হুমম মাসুম ঠিক বলছে।ওর মতো বন্ধু পাওয়া আমার ভাগ্যের ব্যাপার ছিলো।সত্যি আমি ভাগ্যবান। ও খুব ভালো।
-হুমম,আচ্ছা মাসুম ভাইয়া আপনি একটু দূরে জান আমি একটু রিতু আপুর সাথে কথা বলবো।
-আচ্ছা তোমারা কথা বলো।আমি পাশে আছি।একথা বলে উঠে চলে আসলাম।
হাজেরা তখন রিতু কে বললোঃ
-আপু আপনি তো মাসুম ভাইয়ার সব কিছু জানেন।
-বান্ধবী হিসেবে ওর অনেক কিছু জানি।
-তা হলে বলেন তো সে কাউকে ভালোবেসেছিলো।
-হুমম।
– আমাকে তার সাথে দেখা করে দিতে পারবেন।
– কেনো।
– দেখতাম কেমন।
– ও,বাদ দেও,তোমাদের বিয়ে কবে।
– সামনের শুক্রবারে।
– দোয়া করি তোমাদের বিবাহিত জীবন সুখের হোক।
– আপনারও।
– আমার তো এখনো বিয়ে হয় নাই।
– আপু বয়সতো অনেক হয়েছে এখনো বিয়ে করেন নাই কেনো।
– পড়াশোনা শেষ করে চাকুরী করবো।তারপর বিয়ে,আচ্ছা সেকথা থাক,তোমরা দু’জনে ঘুরাঘুরি করো।আমি এখন উঠি।
– চলে যাবেন।
– হুমম বাসায় একটু কাজ আছে।
একথা বলে রিতু আর দাঁড়ালো না।আমার কাছে এসে বললোঃ
-ভালো থেকো।আমার ভুলের জন্য তোমাকে হারিয়ে ফেললাম। তবে তোমাকে দোয়া করি তোমার আগামী দিনগুলো সুন্দর সুখময় হোক।
আমাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রিতু চলে যেতে লাগলো।আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি।ও যত দূরে যাচ্ছে ততোই আমার কষ্ট হচ্ছে। একটা সময় তাকে তো খুব ভালবাসছিলাম কিন্তু আমার ভালোবাসার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।যদি সে বাজে কাজগুলো না করতো তা হলে রিতুকে বুকে আগলিয়ে রাখতাম।রিতু তুমি কখনো আমার ছিলে না।কখনোই তুমি আমার ছিলে না।যদি আমার হতে তা হলে অন্য ছেলে তোমার শরীর মন নিতে পারতো না। তুমি অন্য কারো।
এগুলো ভাবছি তখন হাজেরা এসে আমার পাশে দাঁড়ালো। আমার হাত ধরে বললোঃ
– কি হলো আপনি এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো।চলেন আমাদের বিয়ের জন্য কেনাকাটা করতে হবে।
-আমি তখন বললামঃ হুমম তাই তো,চলো চলো।
একটা রিকশায় করে দু’জনে বিয়ের জন্য কেনাকাটা করতে গেলাম। কিন্তু আমার মনটা রিতুর জন্য খুব খারাপ হয়ে আছে।তবে হাজেরাকে বুঝতে দিলাম। না।শুধু বারবার একটা কথা মনে হচ্ছে,”সে আমার ছিলো না”!!।
সমাপ্ত
——————————————–
#অতীতের_অন্ধকারে।
#ধনঞ্জয়_ঘোষাল।
#তারিখ_01_02_23
#বিভাগ_গদ্যকবিতা
অতীতের দিন গুলি ফিরে পেতে যদি,কালের কাছে নতজানু
হয়ে বলি–
একবার ফিরিয়ে দাও–
শীতের মিষ্টি আলোয়–
কিছু গ্রীষ্মের দ্বিপ্রহর অথবা
রাত্রির কিছু নীরব প্রহর ;
এই পড়ন্ত বেলায়
কেউ সুখী নয়।
তবুও একটি নন্দিনীমাখা
ভোরের নদীর জলে
সিনান করে শুদ্ধ হয়,
নিমি অবৈধ গর্ভপাত করে–
আর তার খেসারত দেয়
গাঁয়ের অবোধ এক তরুণ।
সময় পেরিয়ে যায় জলের মতন
যেমন সূর্যের আলোয়
জল পরিবর্তন ঘটিয়ে
অন্য কোথাও পূর্ণ করে–
এই সব ভয়াবহ স্বাভাবিক কথা
যখন অন্তরাত্মা নাড়িয়ে
চলে যায়–
তখন জীবন অস্তগামী,
তখন ফেরার সময় থাকে না
এই ভেবে শেষ হয়ে যাবে
হয়তো স্বাভাবিক ভাবে।
জীবনের অঙ্ক বড়ো জটিল।
নিমি অথবা নান্দিনী
সকলেই শরীরের সুখ চায়
অকালে গর্ভপাত করে,
দেহের পরিবর্তন বড্ড
দৃষ্টিকটু হয়ে প্রকটিত হয়
শুধু একটা নীরব দুপুর
শুধু একটা নির্জন ঘর–
অতঃপর,
একটা সুস্থ্য হৃদয় হারিয়ে যায়।
——————————————–
বিদায় নৈকট্য নায়
“অনামী”
ভাবনার স্রোত এলোমেলো বড়ো
অস্থিরতা তাই
বাস্তবতার এই প্রেক্ষাপটে
প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি নাই
দূরত্ব তাই আসমান জমিন
সিন্ধু মরুর মেলা
প্রাণের স্পন্দন ধিকিধিকি জ্বলে
নৈকট্য বারবেলা
এমনি করে অপেক্ষা অপেক্ষায়
হয়তো হারিয়ে যাওয়া
মন গহীনে আজও বসন্ত
মঞ্জুরি আশ পাওয়া
ক্রমে ক্রমে বাড়ছে সময়
ফাঁকির পরে ফাঁকি
ভয়টা শুধুই কখন বেরিয়ে যায়
সুপ্ত প্রাণ পাখি
যাওয়ার আগে শুধু পেতে চায়
অবুঝ মনের স্বাদ
পূর্ণতা পাক ঝর্ণার ধারা
মুছুক অবসাদ
বিরতি জানি ডাকবে আমায়
ক্রমে ক্রমে নিকট
আমার অস্তিত্ব মুছে যাবে জেনো
হবে না আর প্রকট
তারপরেও আসবে ঋতুর মেলা
মন বনানীর ছায়
ক্রমে ক্রমে হারিয়ে যাওয়া
বিদায় নৈকট্য নায়…
1st Feb, 2023(প্রেয়সী)
——————————————–
অবিশ্বাস
স্বপন মন্ডল
০১/০২/২৩
চলেই যখন যাবি,ঠিকানাটা রেখে যাস
বলেছিলি,এই দুর্গম পৃথিবীতে নাকি
আর বিশ্বাসের কোন জায়গা নেই তোর
হাত বদলে অনেকবার ঠকেছিস তো
তাই হয়তো,তোর এমন অভিব্যক্তি!
অধীর আগ্রহ ও বিশ্বাস নিয়ে আমি যখন
তোর হাত ধরতে চাইলাম…..
ততক্ষণে তুই সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিস
অবিশ্বাসের খেলায় আর মাতবি না৷
আমার প্রবিত্র প্রেম,চরম সত্য ও বিশ্বাসের
ওখানেই অপমৃত্যু ঘটলো!
একদিন হলেও তোর হাত ধরে রেললাইনের পাশ দিয়ে
অনেকটা পথ হাঁটতে ইচ্ছে হয়েছিল
ইচ্ছে হয়েছিল,হালকা শীতে চাঁদের জ্যোৎস্না মেখে
তোর পাশে বসে আমার অতীত আগলাতে
সব প্রচেষ্টাই কালিমালিপ্ত হল!
জীবনের অন্তিমলগ্নে এসে,যদি একাকীত্ব খুব গ্রাস করে
অথবা,শুনে দেখি তুইও প্রকট একাকীত্বে বিভোর হয়ে আছিস
তবে, ক্ষণিকের কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায়
তোর কাছে গিয়ে আবার নতুন করে বিশ্বাসের বীজ বুনবো!
——————————————–
কবিতা: নীল বসন্ত
কলমে: বিলকিছ ইসলাম বিলু
নীল শাড়ীতে অপরাজিতা নই
নীলের দহন বুকে পুষে হয়েছি
নীল অপরাজিতা,
নীল চুড়ী,নীল টিপে নীলাম্বরী নই
বেদনার অমৃত পানে নীলকন্ঠি আমি।
নীলে আচ্ছাদিত মায়াবতী নই
নীলাকাশ হৃদয়ে ধারন করেই নীলাদ্রি
নীল উপমায় নীলাবতী নই
নিয়ন আলোর নীলাশা আমি।
নীলাভ চোখের ললনা হতে চায়নি
নীলের মাঝে লীন হতে চেয়েছি তোমাতে।
হৃদয়ের লাল রঙে রাঙাতে চেয়েছি
তোমার বসন্তে।
——————————————–
—প্রার্থনা—
কলমে-রশ্মিতা দাস
তারিখ-৩১.০১.২০২৩
আরাধনার দালানবেদী মুখরিত কল্লোলে
হাজার মানুষ ভিক্ষাপাত্র হাতের কর এ তোলে
চাইছে অর্থ,চাইছে যে ভোগ,বিলাস-ব্যসন খনি
দারিদ্র্য ও ব্যাধির নিকেষ।মুখরিত প্রতিধ্বনি
শাপের মোচন,আত্মতুষ্টি হয়ে মন্ত্রের বুলি
বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে ফের।দু হাত শুধুই খালি।
ভক্তি-পূজা বন্দী কি নয় স্বার্থের সীমানাতে?
বন্ধ আঁখিতে অসীমতা ছুঁতে ব্যর্থ প্রতিটি প্রাতে…
খুলে আঁখিদ্বার…করে পথপার,তাকালে আকাশপানে
মন্ত্রের পুঁথি ছোট হতে হতে প্রার্থনা পাবে মানে।
নিজের আকুতি নিজ বুক চিরে মত্ত একাগ্রতায়
কভু জানিয়েছ! জেনেছেন তিনি! ছুঁয়েছে হিয়ার কথায়?
নিয়মের বেড়া শুধুই যে রচে বেড়া।দেয় না মোক্ষ।
বুকের পাঁজর করে খানখান হবে ভেদ নিজ লক্ষ্য।
——————————————–
বাংলারমুখনিউজ২৪.কম এর পক্ষ থেকে সকল বিজয়ী কবিদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। শুভেচ্ছান্তে: এম.আর হারুন।