আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ফরিদগঞ্জ: ফরিদগঞ্জে অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত করতে গিয়ে দারোগার স্ত্রী কর্তৃক হামলার শিকার হয়েছে পুলিশ। দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে। একজন নারী অপহরণ হওয়ার অভিযোগে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে যায়। অভিযুক্ত ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের খবর শুনে শত উৎসুক জনতা ভীড় জমান ঘটনাস্থলে। শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটেছে উপজেলার বালিথুবা (পশ্চিম) ইউনিয়নের সকদিরামপুর গ্রামের বালি বাড়িতে। ওইদিন রাতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের হলেও, পুলিশ আহতের ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকদিরামপুর গ্রামের বালি বাড়ির আবদুর রহিম এর স্ত্রী পারুল বেগম (৪৬)। ১০ই জুন শুক্রবার দুপুর আনুমানিক দেড় ঘটিকায় তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছেন সম্পর্কে ভাইঝি নুরুল ইসলামের কন্যা রূপা আক্তার (৩২) ও শিল্পী আক্তার (৩৫)। তারা একই বাড়ির বাসিন্দা। এ নিয়ে পারুল বেগমের কন্যা নিপা আক্তার মিম (২৩) ফরিদগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের সূত্র ধরে এস.আই. আনোয়ার হোসেন কনস্টেবল মোঃ সফিকুল আলম (৩০) ও পান্না আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে একটি সিএনজি অটোরিক্সাযোগে ওইদিন বেলা তিন ঘটিকা নাগাদ অভিযুক্তদের বাড়ি যান। এ সময় এস.আই. আনোয়ার হোসেন ও কনস্টেবল পান্না আক্তার সিভিল পোশাকে ছিলেন। তারা রূপার বসত ঘরে ঢোকেন ও পারুল বেগমকে অপহরণের বিষয়ে রূপার কাছে জানতে চান ও নানা প্রশ্ন করেন। রূপা নিজেকে একজন দারোগার স্ত্রী পরিচয় দেন ও অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবী করেন। কথা বলার এক পর্যায়ে পুলিশ রূপাকে থানায় যেতে বললে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বেশ কিছু সময় পুলিশ ও রূপার মধ্যে বাকবিতন্ডা চলে। এক পর্যায়ে এস.আই. আনোয়ার হোসেনের নির্দেশে রূপা আক্তারের হাত ধরে টান দিলে কনস্টেবল পান্না আক্তারের চুলের মুঠি ধরেন রূপা। এতে উভয়ের মধ্যে কিলঘুষি, ধ্বস্তাধস্তি ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হলে কনস্টেবল সফিক আলমও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তারা মাটিতে পড়ে যান। রূপা আক্তার সফিক আলমের ব্যাজ ও মোবাইল ফোন নিয়ে যান। বাড়ির অসংখ্য শিশু, নারী-পুরুষ ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও ভয়ে এগিয়ে যাননি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এস.আই. আনোয়ার হোসেন সংঘর্ষের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। বেশ কিছু সময় যাবত ওই সংঘর্ষ চলে। খবর শুনে কয়েক শত লোক ওই বাড়িতে ভীড় জমান। অবস্থা বেগতিক দেখে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়ে এস.আই. আনোয়ার হোসেন ফরিদগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করেন। এতে, থানা থেকে ইনসপেক্টর (তদন্ত) প্রদীপ মন্ডলের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওই বাড়িতে যান। দীর্ঘ সময় চেষ্টার পর সন্ধ্যা নাগাদ রূপা আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে তারা থানায় ফিরতে সক্ষম হন। ওইদিন রাত ১১:৩৫ ঘটিকায় কনস্টেবল সফিকুল আলম ও পান্না আক্তার ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এর জরুরী বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
থানায় রূপা আক্তারের সঙ্গে আলোচনা ও ফোনে যোগাযোগক্রমে চাঁদপুর জেলা সদরের ভাড়া বাসা থেকে পারুল বেগমকে ফরিদগঞ্জ থানায় নিয়ে যান দুই নং বিবাদী শিল্পী আক্তার। দীর্ঘ সময় দু’পক্ষের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। চেষ্টা ব্যর্থ হলে গভীর রাতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়। এতে, রূপা আক্তারকে ১ নং ও তার বোন শিল্পী আক্তারকে ২ নং বিবাদী করা হয়। তাদের শ্যোন এ্যারেস্ট দেখানো ও পরদিন বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। অভিযুক্তের পারিবারিক সূত্র দাবী করেছেন, বিজ্ঞ বিচারক রূপা আক্তারের জামিন মঞ্জুর ও শিল্পী আক্তারের জামিন না মঞ্জুর করেছেন।
সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ বাহিনীতে চাকরির সুবাদে এস.আই. জাহাঙ্গীর চাঁদপুর পোস্টিং নিয়ে যান। সেখানে কর্মরত অবস্থায় রূপার সঙ্গে পরিচয় ঘটে। প্রায় ৭/৮ বছর পূর্বে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের প্রায় ছয় বছরের ছেলে ও চার বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে। খবর পেয়ে, ঘটনারদিন রাতে এস.আই. জাহাঙ্গীর ফরিদগঞ্জ থানায় যান। সেখানে, পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে তাকে। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে তার দুই সন্তানকে সঙ্গে করে বর্তমান কর্মস্থল নোয়াখালী চলে যান।
এলাকা সূত্রে জানা গেছে, পারুল বেগমের স্বামীর কাছে রূপার বাবা নুরুল ইসলাম মৃত্যুর পূর্বে ১০ বছর আগে টাকা পাবেন মর্মে দাবী করে আসছিলেন রূপা। কিন্তু, পারুল বেগম অস্বীকার করছিলেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কিছুদিন যাবত বিবাদ চলছিলো। তারই জের ধরে অপহরণের ঘটনা ঘটে। যদিও, একে অপহরণ বলতে নারাজ রূপার পরিবার পক্ষ।
মামলার বাদীর মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন, টাকা পাওয়ার কথা মিথ্যা। আমার মা খুবই অসুস্থ্য। শুনেছি রূপার জামিন হয়েছে। শিল্পীর হয়নি। আমি আর বেশি কিছু বলতে পারবো না।
এদিকে, রূপা আক্তারের মুঠোফোনে কল দিলে এক যুবক কল রিসিভ করেন। তিনি রিপোর্ট না করার জন্য পরামর্শ দেন, বিরক্তি প্রকাশ ও প্রতিবেদককে নানা প্রশ্ন করেন। তার পরিচয় জানতে চাইলে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন ও নিজেকে ফরিদগঞ্জের ধানুয়া গ্রামের সুমন পরিচয় দেন। বাড়ির নাম জানতে চাইলে এড়িয়ে যান।
এস.আই. আনোয়ার হোসেনের কাছে অভিযুক্ত রূপা আক্তার ও পুলিশের মধ্যে মারামারির বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বলেন, শুক্রবার বালি বােিড়ত দু’পক্ষের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। বিস্তারিত জানতে চাইলে বলেন, থানায় আসেন, তারপর কথা হবে। এদিকে, রেকর্ড করার পর এস.আই. আনোয়ার হোসেনকেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যপারে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন, পারুল বেগমকে অপহরণের অভিযোগে একটি মামলা রুজু হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, পুলিশ সদস্য আহত বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।