Breaking News
Home / Breaking News / লক্ষ্মীপুরে এ কেমন বিদ‌্যুৎ! হতাশ সর্বপেশার মানুষ

লক্ষ্মীপুরে এ কেমন বিদ‌্যুৎ! হতাশ সর্বপেশার মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
পল্লী বিদ্যুৎ দেয়ার নামে চলছে হরিলুট আর চাঁদাবাজির মহোৎসব। অসহায় মানুষ থেকে শুরু করে বিধবা, নিঃসন্তান এমনকি ভিক্ষুক, কাজের মেয়েও বাদ যায় না। গাধা গরু এক সমান করে চাঁদা তুলে নিচ্ছেন চাঁদাবাজরা। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় নেতা, মাতাব্বর, স্কুলের শিক্ষক পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার নাম করে টাকা উত্তোলন করছেন।ঠিকাদাররা একেকটি ওয়ার্ড় থেকে 4 লাখ সাড়ে 4লাখ টাকা করে হাতান। এর মধ্যে তাজু ভয়ংকর প্রকৃতির। তাকে টাকা না দিলে খুঁটি দেয়া হয় না।

লক্ষ্মীপুরে সদরের চররুহিতায় টাকা উত্তোলনের সাথে কয়েকজন যুক্ত হওয়ার প্রমান পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষের মামলায় কয়েকজন জেলে থাকলেও জেলার বাকি 51 ইউনিয়নে চলছে টাকা উত্তোলন। এ টাকার ভাগ জিএমও পান। কিন্তু জিএম বলেন উল্টো। কে টাকা উত্তোলন করেন তার নাম ধাম দেন, পত্রিকায় খবর প্রকাশ করে আমাদের এক কপি দেন, কে টাকা দিয়েছে তাকে অভিযোগ করতে বলেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

যেসব নেতারা পল্লী বিদ্যুতের টাকা তোলেন তারা প্রত্যেক ইউনিয়নকে ওয়ার্ডে ভাগ করে পাড়া বা মহল্লায় এক জন করে দায়িত্ব দেন টাকা তুলে নেয়ার জন্য। এ টাকা তোলার জন্য কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নেন তারা। যেমন সার্ভে করার সময় মিটার প্রতি 200 টাকা। খুঁটি আসবে আসবে করে 5000 টাকা। খুঁটি এলে লেবার খরচ,খাওয়ার খরচ মিটার প্রতি 500 টাকা।খুঁটিতে তার টানার সময় 2000 টাকা। ঘরে সংযোগ তার দেয়ার সময় 1500 টাকা।শেষ মিটার এলে 3000 টাকা করে উত্তোলন করছে। কেউ যদি কিছু টাকা কম দেয় তাহলে সে মিটার খুঁটি কিবা সংযোগ কিছুই পায় না। তার বোর্ড দিলেও খুলে নিয়ে যায়।

এদিকে বিদ্যুতের মিস্ত্রি বা ইলেকট্রিশিয়ান মিটার প্রতি দুই বাতি এক ফ্যান এর পয়েন্ট বসিয়ে সাড়ে চার হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন।

এই চিত্র লক্ষীপুরের পুরো জেলা জুড়ে। কোথাও অভিযোগ দিলেও প্রতিকার পান না ভুক্তভোগীরা। দু-একটা তদন্তের নামে আইওয়াশ করা হয়। প্রমাণ করা যায় না। যারা তদন্তে আসে তারাও বিক্রিতে যান। কারণ মিটার প্রতি 10 হাজারের বেশী টাকা করে উত্তোলন করা হয়। যারা চাঁদা তোলেন তারা তাদের মানুষ এনে তদন্তকারীদের বলান। মানে ফলাফল শুন্য। আদতে অভিযোগকারীর উপর উল্টো আঘাত আসে।

এমনি একটি ঘটনা লক্ষ্মীপুর রায়পুর উপজেলার 8 নং চরবংশী ইউনিয়নের চর লক্ষী গ্রামের 6 নং ওয়ার্ডের সামসু দেওয়ানের বাড়ির মৃত হাফেজ আলাউদ্দিনের স্ত্রী মমতাজ বেগমের কাছ থেকে একই এলাকার আবু তাহের 3000 টাকা নিয়েছেন মিটার দিবেন বলে। এলাকার সবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন আবু তাহের 3000 টাকা নেয়ারর পরে আবার শাহ্জালাল মাঝি 4500 টাকা নিয়েছেন মমতাজ বেগমের কাছে। বিদ্যুৎ না দিয়ে চাঁদাবাজরা বলেন – যে টাকা দিলি কিচ্ছু হয় নি, আরো 5000 টাকা দে, নইলে বিদ্যুৎ পাবি না।

মমতাজ বেগম বুড়ো মানুষ। কামাই করার মত একটা মেয়ে মানসুরা বেগম ফেনীতে বাসায় কাজ করে। কিন্তু আবু তাহের ও শাহ্জালাল মাঝি টাকা নিয়ে বলে- তোদের ঘর করতে হবে, ভাঙ্গা ঘরে মিটার দিবে না। তড়িঘড়ি করে মানসুরা ধারদেনা করে দোচালা একটা টিনের ঘর করেছে। দুঃখের বিষয় হলো বাড়ির সবার ঘরে বাতি জ্বললেও মানসুরার ঘরে বিদ্যুৎ না দিয়ে উল্টো তারা মিটার বোর্ডটাও খুলে নিয়ে গেছেন।

আবু তাহের বলেন টাকা নিয়েছি সত্য,টাকা সিদ্দিক প্রধানিয়াকে দিয়েছি।

সিদ্দিক প্রধানিয়া স্থানীয় চর লক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক নারী কেলেঙ্কারি, শিক্ষিকাদের লোভে ফেলে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়াসহ ইস্কুল আছে বলে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এক একজন শিক্ষকের কাছ থেকে 7 লাখ 8 লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেওয়ার প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে সিদ্দিক প্রধানীয়ার বিরুদ্ধে।

তার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কার্যালয়, থানা, শিক্ষা অফিসে অভিযোগ থাকলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
সিদ্দিক প্রধানীয়া এর আগে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিল সেখানেও নানা অনিয়ম অর্থ আত্মসাৎসহ নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় জের ধরে বদলী হয়ে চরলক্ষ্মী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন।

Powered by themekiller.com