Breaking News
Home / Breaking News / বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু বিদেশি ঋণের পরিমাণ এখন ১৭ হাজার টাকা।

বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু বিদেশি ঋণের পরিমাণ এখন ১৭ হাজার টাকা।

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বৃহস্পতিবার এই তথ্য দিয়ে বলেছে, ঋণের এই পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। বৃহস্পতিবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এক প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় ঋণের চিত্র তুলে ধরেন ইআরডির যুগ্ম সচিব মোহা. রুহুল আমিন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরের শেষ নাগাদ দেশে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৫২ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৮১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা।
অর্থাৎ সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ২০৪ মার্কিন ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার ১৩৬ টাকা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশের নেওয়া এই ঋণের ভারিত গড় সুদ হার ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। গড়ে ৮ বছরের রেয়াতকালসহ ঋণ পরিশোধের গড় মেয়াদ প্রায় ৩১ বছর।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিচারে বাংলাদেশের বর্তমানে যে বিদেশি ঋণের স্থিতি রয়েছে বা মাথাপিছু বিদেশি ঋণ রয়েছে, তা কোনোভাবেই উদ্বিগ্ন হওয়ার পর্যায়ে যায়নি।
বাংলাদেশের মোট দেশজ আয়ের (জিডিপি) তুলনায় এ বিদেশি ঋণ ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৭ সালে ছিল ১২ দশমিক ৮ শতাংশ।
রুহুল আমিন বলেন, “জিডিপির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি ঋণকে উদ্বেগজনক বলা হয় না। এর বেশি হলে তখন উদ্বেগজনক বলে ধরা হয়।
“বর্তমানে আমাদের বিদেশি ঋণের যে স্থিতি রয়েছে, তা ২০৫৭ সালেই পরিশোধ হয়ে যাবে। এ সময়ের মধ্যে নতুন ঋণ না নিলে বর্তমান স্থিতির জন্য দাতাদের কাছে ২০২৭ এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১৬০ কোটি ডলারের মতো পরিশোধ করতে হবে। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে কমে আসবে। অর্থাৎ এই বিদেশি ঋণ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১১১ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ ফেরত দেওয়া হয়েছিল। রুহুল আমিন বলেন, “আমাদের জিডিপির ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও বর্তমানে আমরা যে হারে বিদেশি ঋণ নিচ্ছি, তা ফেরত দিতে কোনো সমস্যা হবে না।
“আমাদের যে ঋণ ফেরত দিতে হয়, তা আমাদের রপ্তানি এবং রেমিটেন্সের মাত্র ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং প্রতিবছর আমাদের যে রাজস্ব আহরণ হচ্ছে তার মাত্র ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। সুতরাং এই বিদেশি ঋণ আমাদের অর্থনীতির জন্য কোনো ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারবে না।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ৫ বছরেই বিদেশি ঋণ দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে ঋণের পাইপলাইনে ৪ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার জমা আছে।
যুগ্ম সচিব রুহুল আমিন বলেন, “দেশের ভবিষ্যত বিনিয়োগের নিশ্চয়তা এই পাইপলাইন। পাইপলাইন যত বড় হবে ভবিষ্যত বিনিয়োগের গতি ততই বৃদ্ধি পাবে।”
অর্থনীতির সক্ষমতা বাড়ায় বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের দিকটি দেখিয়ে তিনি এখন ঋণে সুদের হার বেড়ে যাওয়ার কথাও বলেন।
“দাতাদের কাছ থেকে আমরা আগে যতটা সহজ এবং সস্তা ঋণ পেতাম এখন তা পাওয়া যাবে না। যেমন, জাইকার সুদ আগে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ হলেও তা প্রায় ১ শতাংশ হতে পারে। বিশ্ব ব্যাংকের আইডিএ তহবিল থেকে আগে আমরা ১ শতাংশের কমে ঋণ পেলেও এখন তা দেড় শতাংশে উন্নীত হয়েছে।”
তিনি বলেন, এডিবি দুই স্তরের সুদে ঋণ দেয়। একটি হচ্ছে ২ শতাংশ হারে। অন্যটি হচ্ছে লন্ডন আন্তঃব্যাংক সুদ হার (লাইবর) ভিত্তিক। সেটি কিছুটা বেশি হতে পারে।
বিভিন্ন দেশ থেকে নেওয়া ঋণের বিষয়ে রুহুল আমিন বলেন, “চীনের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করলে তারা জানিয়েছে, ২ শতাংশের বেশি সুদ দিতে হবে না। ভারতকেও এক শতাংশের বেশি সুদ দিতে হবে না।

“তবে রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু বিদ্যৎ কেন্দ্রের জন্য যে ঋণ নেওয়া হয়েছিল, তার জন্য ৪ শতাংশ সুদ দিতে হবে। সাধারণত এরকম ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার কিছুটা বেশি হয়।”

Powered by themekiller.com