বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বিনা পারিশ্রমিকে- নূর মোহাম্মদ। বয়স ৮০ বছর। এলাকার মানুষ তাকে নুরু চাচা বলেই ডাকেন। কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই ৪০ বছর ধরে মৃত মানুষের জন্য কবর খুঁড়ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আজাইপুর মহল্লার বাসিন্দা এই নূর মোহাম্মদ।
কারও মৃত্যুর সংবাদ পেলেই ছুটে যান গোরস্থানে। কবর খোঁড়া থেকে শুরু করে দাফনের শেষ পর্যন্ত তিনি সহযোগিতা করেন। নূর মোহাম্মদের সঙ্গে তার আজাইপুরের ছোট্ট বাড়িতে বসে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
তিনি জানান, দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। দিনমজুরি করে ৪ ছেলে ও ৪ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরাও রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। সবাই এখন নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তিনি কখনও মাটি কাটা, কখনও দিনমজুর আবার কখনও রাজমিস্ত্রির কাজ করে রোজগার করেন। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে টিন ও মাটির টালির ছাপড়া ছোট একটা ঘরে বসবাস করেন।
তিনি বলেন, বয়সের ভারে শরীরটা এখন দুর্বল হয়ে গেছে। আগের মত কাজ করতে পারেন না। তবে এখন পর্যন্ত কারও কাছে হাত পাতেননি বা কারো কাছে আর্থিক সহযোগিতা নেননি। নিজের রোজগারেই স্ত্রীকে নিয়ে সুখে আছেন বলে জানান নূর মোহাম্মদ।
তিনি আরও জানান, মাটি কাটার কাজ করার সুবাদে প্রথম দিকে মানুষ তাকে কবর খোঁড়ার জন্য ডাকতো। তবে কবর খুঁড়ে দিলেও কোনো পারিশ্রমিক নিতেন না তিনি। কবর খুঁড়তে খুঁড়তে এটা এখন তার ভালোলাগা ও মানসিক প্রশান্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো মানুষের মৃত্যুর খবর পেলেই সব কাজ ফেলে কোদাল হাতে ছুটে যান গোরস্থানের দিকে।
নূর মোহাম্মদে জানান, এক সময় দিনে তিনটি কবরও খুঁড়েছেন কিন্তু বার্ধক্যের কারণে এখন আর আগের মতো পরিশ্রম করতে পারেন না। প্রতিমাসে ৮ থেকে ১০ জন মৃতের জন্য কবর খুঁড়েছেন। সে হিসেবে সবমিলিয়ে প্রায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার মৃতের কবর খুঁড়েছেন তিনি।
গত ৪০ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে মৃত মানুষের দাফনের জন্য এ কাজটি করে যাচ্ছেন। শুধু তার নিজের এলাকাতেই নয়, আশপাশের পাড়া মহল্লায় কেউ মারা গেলেই তিনি ছুটে যান। অনেক সময় মৃতের আত্মীয়-স্বজন তাকে ডেকে নিয়ে যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আজাইপুর মহল্লার সারোয়ার হোসেন বলেন, কারও মৃত্যুর খবর পেলেই ছুটে যান নুরু চাচা। কারও কাছে টাকা পয়সা নেন না।
কোথাও কাজ করার সময় কোনো মানুষের মৃত্যুর খবর পেলে কাজ ছেড়ে সঙ্গে সঙ্গে তিনি চলে যান কবর খোঁড়ার জন্য। কবর খোঁড়ার জন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেন না। কবর খোঁড়ার কারিগর নুরু চাচা আমাদের এলাকার গর্ব এবং সকলের শ্রদ্ধারপাত্র।
নূর মোহাম্মদ বলেন, শত্রু-মিত্র, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী অথবা অপরিচিত যেই হোক না কেন মৃত্যুর খবর শোনা মাত্রই ছুটে যাই কবরস্থানে। নিয়ম অনুযায়ী কবর খুঁড়ে দিয়ে আসি। শুধু কবর নয় তার জানাজার নামাজেও শরীক হই। অনেক পরিবারের মানুষ কবর খোঁড়ার জন্য টাকা দিতে আসে কিন্তু আমি সেটা নেই না।
কারণ আমি মনে করি এটা একটা মহত ও ভালো কাজ। আমাকেও তো একদিন মরতে হবে। মাটির ঘর কবরে যেতে হবে সবাইকে। এ কাজটি করলে মন থেকে প্রশান্তি পেয়ে থাকি। তা ছাড়া আমি মনে করি মহান আল্লাহ এ কাজের জন্য হয়তো আমাকে ও আমার সকল পাপ কাজকে ক্ষমা করে দেবেন।
তিনি আরও বলেন, সমাজে মানুষের উপকারের জন্য নানা রকম কাজ মানুষ করে থাকে। মৃত মানুষের জন্য স্বেচ্ছায় এ পেশাকেই বেছে নিয়েছি। যতদিন বেঁচে আছি মৃত মানুষকে দাফনের জন্য নিজ দায়িত্ব ভেবে এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যই এই কাজ করে যাব।
একপর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে নূর মোহাম্মদ বলেন, আমি এত মানুষের কবর খুঁড়লাম, জানি না আমার কবরটি কে খুঁড়বে?
২৭ ব্যাংকে অলস পড়ে আছে ৮ কোটি টাকা, কেউ নেই দাবিদার!
ব্যাংকে জমা রাখা ৮ কোটি টাকার কোনো দাবিদার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের ২৭টি ব্যাংকের হিসাবগুলোতে এ ধরনের ৮ কোটিরও বেশি টাকা রয়েছে, ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যার কোনো দাবিদার নেই।
১০ বছর ধরে লেনদেন না হওয়া হিসাবগুলোর টাকা ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে পরের বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৭টি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করেছে।
তাতে বেশিরভাগ হিসাবেই অল্প টাকা জমা থাকলেও লাখ টাকার বেশি জমা থাকা বেশকিছু হিসাবও রয়েছে তালিকায়। এসব হিসাবধারী বা তাদের স্বজনদের খোঁজে নিজস্ব ওয়েবসাইটে ব্যাংকভিত্তিক তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো হিসাবে একটানা ১০ বছর কোনো লেনদেন না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ওইসব হিসাবের বিস্তারিত তথ্যসহ হিসাবে জমা থাকা টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়।
ব্যাংকের নাম, হিসাবধারীর নাম-ঠিকানা, হিসাব নম্বর ও সর্বশেষ স্থিতি অনুযায়ী তাতে কত টাকা জমা আছে, তার বিস্তারিত বিবরণ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তালিকা প্রকাশের দুই বছরের মধ্যে হিসাবধারী বা তাদের স্বজনরা উপযুক্ত প্রমাণসহ যোগাযোগ করলে
টাকা ফেরত পায়। টাকার দাবিদার পাওয়া না গেলে হিসাবগুলোতে থাকা পুরো টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে থা