Breaking News
Home / Breaking News / মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে অপরিবর্তিত রাখতে হবে ।। মোহাম্মদ শাহজাহান ।।

মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে অপরিবর্তিত রাখতে হবে ।। মোহাম্মদ শাহজাহান ।।

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি বিজয় অর্জন করে। এটা প্রমাণিত সত্য যে, শেখ মুজিব স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন। ড. ওয়াজেদ মিয়া তাঁর স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থে লিখেছেন, ৭ মার্চ ভাষণ দিয়ে বাসায় এসে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের বলেন, ‘পাকিস্তানি সৈন্যরা যে কোনো সময় আমাকে মেরে ফেলতে পারে। আজ থেকে তোমরা সকলে আমার সাথে খাবে।’ হত্যা করা হতে পারে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত জেনেও ২৫ মার্চ রাতে বাসা থেকে তিনি আত্মসমর্পণে যাননি। স্বাধীনতা লাভের পর একটি বিদেশী পত্রিকা লিখেছিল। ‘রক্তই যদি স্বাধীনতার মূল্য হয়, তাহলে বাংলাদেশকে অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়েছে।’ বাঙালি জাতি ভাগ্যবান, তারা শেখ মুজিবের মতো একজন বিশ্বমানের নেতা পেয়েছিল। মুজিবের মতো একজন দূরদর্শী, সাহসী, ত্যাগী ও বিচক্ষণ নেতার জন্ম হয়েছিল বলেই একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। কারো কারো মতে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল নায়ক হচ্ছেন ‘শেখ মুজিব ও বাংলার জনগণ’। আর স্বাধীনতার জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন শেখ মুজিব। একাত্তরে বাংলার শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ মুজিবের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। বিশ্বরাজনীতির ইতিহাসে আর কোনো রাজনৈতিক নেতা তাঁর দেশের প্রায় সকল মানুষকে এভাবে শেখ মুজিবের মতো ঐক্যবদ্ধ করতে সমর্থ হননি। যে জন্য একাত্তরের ৭ মার্চ পাকিস্তানি কামান-বন্দুক-মেশিনগানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বঙ্গশার্দুল শেখ মুজিব জনগণের একজন সত্যিকারের অভিভাবকের মতো নির্দেশ দেন। ‘আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমাদের লোকদের হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলোÑ প্রত্যেক ঘরে ঘুরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।’

দেশের সাধারণ মানুষ থেকে প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত একাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর সাহেবজাদা ইয়াকুব আলী খান অন্য পাকিদের তুলনায় মানবিক গুণসম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান মার্চে ইয়াকুব খানকে বরখাস্ত করে ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ হিসেবে পরিচিত জে. টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত করেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ টিক্কা খান ঢাকা আসেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি বিএ সিদ্দিকী শপথ করাতে অস্বীকার করেন গভর্নর টিক্কা খানকে। ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু হওয়ার পর টিক্কা খান গভর্নর হিসেবে শপথ নেন। মার্চের আরেকটি ঘটনা হচ্ছে, সংকট নিরসনের জন্য বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা করতে জে. ইয়াহিয়া ১৫ মার্চ ঢাকা আসেন। কিন্তু বাঙালি বাবুর্চিরা ইয়াহিয়া খানের রান্না করতে অস্বীকার করেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার দপ্তর থেকে একজন কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাসভবনে যোগাযোগ করা হলে বাবুর্চিদের বলা হয়Ñ ‘বাঙালি অতিথিপরায়ণ জাতি।’ ৩২ নম্বরের গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে বাবুর্চিরা রান্না করতে রাজী হন। এভাবে বাবুর্চি থেকে প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত জনগণ একাত্তরে মুজিবের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।
স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারাও বঙ্গবন্ধুর নামেই যুদ্ধ করেছেন। অথচ তিনি ছিলেন শত্রু পাকি সরকারের কারাগারে বন্দী। এখানে গুলিবিদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী এক মুক্তিযোদ্ধার ঘটনা উল্লেখ করা হলো। সেক্টর কমান্ডার পরে সেনাপ্রধান ও সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল কেএম সফিউল্লাহর সাক্ষাৎকারে এবং মেজর জেনারেল এমএসএ ভূঁইয়ার লেখা থেকে ঘটনাটি জানা গেছে। ১৯৭১-এর ২১ জুন সিলেটের তেলিয়াপাড়ায় পাকিদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। দুলু নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা একটি মেশিনাগানের সাহায্যে পাকিদের থামিয়ে দেয়। দুলু মেশিনগান থেকে অনবরত গুলি চালাতে থাকেন। আর মুক্তিযোদ্ধাদের কোম্পানি বের হয়ে আসে। ঐ সময় পাকি সেনাদের গুলি এসে দুলু মিয়ার পেটে লাগে। শত্রুর গুলির আঘাতে দুলুর পেট ছিড়ে রক্ত পড়া শুরু হয়। ঐ অবস্থায়ও দুলু এক হাতে পেট ধরে রেখে অন্য হাতে মেশিনগান চালাতে থাকেন। অধিনায়ক সফিউল্লাহকে দেখে কেঁদে কেঁদে দুলু বলেন, “স্যার, আাপনি যে আমাকে যুদ্ধ করার সুযোগ দয়েছেন এ জন্য আপনার কাছে আমি ঋণী। আমার গায়ের রক্তাক্ত জামাটা শেখ মুজিবকে দেখাবেন। তিনি বলেছিলেনÑ ‘তোমরা রক্ত দেয়ার জন্য তৈয়ার হয়ে যাও।’ আমি রক্ত দিয়েছি। আমি এখন মৃত্যুর পথে। আমার মৃত্যু হলে বাংলাদেশের মাটিতে কবর দিবেন।” অধিনায়ক সফিউল্লাহ নিজে মুক্তিযোদ্ধা দুলুকে তাঁর গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। দুলুর মতোই লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধা একাত্তরে মুজিবের নামেই জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও দুলু পিতা-মাতা, স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ের কথা না বলে শেখ মুজিবের কথাই বলেছিলেন। দুলু

Powered by themekiller.com