Breaking News
Home / Breaking News / **আশি বছরের মা আর তার নয়কন্যা-কাহন**

**আশি বছরের মা আর তার নয়কন্যা-কাহন**

আমিরুন্নেসা, আশি বছরের বৃদ্ধা, ধীর পায়ে হেঁটে যখন পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এলেন, তখন তাকে ঘিরে তার নয় কন্যা দাঁড়িয়ে। তিনি এসেছেন পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম স্যারকে তার বাড়িতে দাওয়াত দিতে। তার নয় কন্যা নাকি জেলা পুলিশ পরিবারকে খাওয়াতে চায়!

এমন মজার কথা শুনে আগ্রহ নিয়ে ঘটনা জানার চেষ্টা করলাম। আমিরুন্নেসার স্বামী আঃ মান্নান তালুকদার ২০০৪ সালে মারা যান৷ বড় মেয়ে খুরশিদার স্বামীই দেখাশোনা করছিলেন প্র‍য়াত শ্বশুরের সম্পত্তি। সর্বশেষ তিনবোনের বিয়ে দিতে পৈত্রিক সম্পত্তির বেশ কিছুটা বিক্রি করতে হয়৷ তারপরে যা বাকি থাকে সেই ২৬ শতক জমি আর বসতভিটা৷ স্নেহের বশবর্তী হয়ে বড় মেয়ে খুরশিদা আর সবচেয়ে ছোট মেয়ে হীরাকে হেবামূলে সব সম্পত্তি দিয়ে দেন আমিরুন্নেসা৷ বৃদ্ধা মায়ের এমন বৈষম্যমূলক আচরণে কষ্ট পেয়ে বাকি সাত মেয়ে মায়ের দেখাশোনায় অবহেলা করছিল। অথচ যে দুই মেয়েকে সব লিখে দিলেন, তারাও গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না মায়ের। স্বামীর সম্পত্তি, গর্ভজাত নয় সন্তান, সব থেকেও যেন অসহায় আমিরুন্নেসা।

অবস্থা এমন যে বৃদ্ধা আমিরুন্নেসা দু’দিন এক মেয়ের কাছে থাকেন তো, তারপরেই চলে যেতে হয় আরেক মেয়ের কাছে৷ নিজের একটা মাথাগোঁজার ঠাঁই পর্যন্ত নেই তার৷ এমন অবস্থায়ই তিনি আসেন পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক (অপরাধ) ওয়ালিউল্লাহ্ দায়িত্ব নেন নয় কন্যা ও মায়ের সমঝোতার৷ সপ্তাহখানেকের চেষ্টায় সবার সাথে কথা বলে সমাধান হয় সমস্যার৷ খুরশিদা আর হীরা তাদের সম্পত্তি লিখে দিবে মায়ের নামে। জীবনের শেষ দিনগুলো স্বামীর ভিটায় কাটাবেন আমিরুন্নেসা৷ তার মৃত্যুর পরে নয় বোনের মাঝে সমান ভাগ হবে সম্পত্তি।

আমিরুন্নেসা খুশি যতটা না তার স্বামীর ভিটা ফিরে পেয়ে, তারচেয়েও বেশী তার নয়কন্যার মনোমালিন্য দূর হওয়ায়। বৃদ্ধা মায়ের কাছে সব সন্তানকে একসাথে দেখার চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে৷ আর তাই তিনি তার বাড়িতে দাওয়াত দিচ্ছেন আমাদের৷ পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম স্যার বললেন, আপনারাই বরং আজকের দিনটা ঈদ ভেবে উদযাপন করেন আমাদের সাথে।

এই বৃদ্ধা মায়ের আশীর্বাদের দৃষ্টি, নয়বোনের অভিমানভাঙা ভালবাসা, একটা পরিবারের এক হয়ে যাওয়ার আনন্দ, এর চেয়ে বেশী কিছু প্রাপ্তি আর কি হতে পারে!

লেখকঃ শাকিলা ইয়াসমিন সূচনা, সহকারি পুলিশ সুপার, চাঁদপুর।

Powered by themekiller.com