Breaking News
Home / Breaking News / একাদশ সংসদ নির্বাচনে যেখানে আওয়ামীলীগের চেয়ে বিএনপি এগিয়ে

একাদশ সংসদ নির্বাচনে যেখানে আওয়ামীলীগের চেয়ে বিএনপি এগিয়ে

বিশেষ প্রতিনিধিঃ এবারের সংসদ নির্বাচনে দুই দল থেকে শতাধিক নারী মনোনয়ন চাইলেও শেষ পর্যন্ত পেয়েছেন মাত্র ৪৩ জন। সংসদে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীদের প্রতিনিধিত্ব সাত শতাংশের বেশি নয়। সংরক্ষিত ধরলে তা ২০ শতাংশ।

আইন আছে প্রত্যেক দলে ৩০ শতাংশ নারী নেতৃত্ব থাকতে হবে। আর এটা একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পাওয়ার অন্যতম শর্ত। রাজনৈতিক দলগুলো তাই কাগজে-কলমে বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের কমিটিতে নারী নেতৃত্বের এই সংখ্যা মিলিয়ে দেয়। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। খবর ডয়ে চেভেলের।

নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে যদি সংসদের কথা ধরা হয়, সেখানে বর্তমান সংসদদে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্য মাত্র পাঁচ শতাংশ। তবে সংসদে নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন আছে। তারা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন না।

তাদের নির্বাচন করা হয় রাজনৈতিক দলগুলোর সংসদে প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে। সংরক্ষিত আসনের হিসাব ধরলে সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ২০ ভাগের মতো।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুয়ায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে একশরও বেশি নারী নির্বাচনে সরাসরি প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়নপত্র কেনেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপি থেকে ২৫ জন এবং আওয়ামী লীগ থেকে ১৮ জন দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।

বিএনপির একক নারী প্রার্থী অবশ্য হাতে গোনা। তাই নারী প্রার্থীদের এসব মনোনয়নও চূড়ান্ত নয়। কতজন নারী শেষ পর্যন্ত সরাসরি দলীয় মনোনয়ন পান তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ওইদিন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ওই দিনই দলগুলো চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে তাদের চূড়ান্ত মনোনীত প্রার্থীর নাম দিয়ে প্রতীক দেয়ার আবেদন জানাবে।

স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালে। ওই সংদদে কোনো নারী সংসদ সদস্য সরাসরি ভোটে নির্বাচত হননি। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে দুজন নারী সরাসরি ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে পাঁচ জন, ১৯৮৮ সালে চার জন, ১৯৯১ সালে তিন জন, ১৯৯৬ সালে আট জন, ২০০১ সালে সাত জন, ২০০৮ সালে ২১ জন এবং ২০১৪ সালে ২২ জন নারী সংসদ সদস্য হিসেবে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন।

জাতীয় সংসদে এখন নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০টি। প্রথম জাতীয় সংসদে এই সংখ্যা ছিল ১৫। এরপর তা বাড়িয়ে করা হয় ৩০টি। এখন সংরক্ষিত আসন ৬০টি করে তা অনুপাতিকভাবে ভাগ না করে সরাসরি নির্বাচনের দাবি উঠছে অনেক দিন ধরে।

গোপালগঞ্জ-১ ( মকসুদপুর-কাশিয়ানি) আসন থেকে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী আরিফা রহমান রুমা। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত এবং দলের নীতি নির্ধারনী অনেক কাজ করেন। কিন্তু তাকে দল মনোনয়ন দেয়নি।

নারীদের কেন মনোনয়ন দিতে দলগুলোর অনীহা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্বাচনি ব্যয়ের সীমা বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু প্রার্থীরা নির্বাচনে অনেক বেশি টাকা খরচ করেন। ধরেই নেয়া হয় যে, নারীরা এত টাকা খরচ করতে পারবে না, তারা অসচ্ছল। এছাড়া নারীরা পেশিশক্তিরও ব্যবহার করতে পারবে না। তারা ধরেই নেয় নির্বাচনে জিততে অনেক টাকা, পেশিশক্তি লাগে’।

তিনি জানান, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৮ টি আসনে ১৯ জন নারীকে মনোনয়ন দিয়েছিল। আর এবার ১৭টি আসনে ১৮ জনকে মনোনয়ন দিয়েছে। তাই বলাই যায়, এবার নারী মনোনয়ন আওয়ামী লীগে কমেছে’।

ঢাকা-৮ (মতিঝিল-রমনা-পল্টন) আসন থেকে এবার বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক ছাত্রদল নেত্রী শিরিন সুলতানা। তিনি এখন বিএনপিরও কেন্দ্রীয় নেতা। ৯০-এর গণআন্দোলনে তিনি সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর আগে ২০০৮ সালে তিনি সরাসরি নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন।

কিন্তু এবার বিএনপি তাকে মনোনয়ন দেয়নি। তিনিও নারীদের মনোনয়ন দেয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো অনীহার কারণ হিসেবে কালো টাকা ও পেশি শক্তিকে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের মনোনয়ন দিতে ভয় পায়। তারা মনে করে, নারীরা জিততে পারবেন না। কারণ, নির্বাচনে জিততে কালো টাকা লাগে, পেশিশক্তি লাগে। নারীদের তা নেই। নারীরা অনেক দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করলেও রাজনৈতিক দলগুলো এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে যায়’।

তিনি বলেন, ‘সংসদে যদি শতকরা ৭৫ ভাগই ব্যবসায়ী হন, তাহলে নারী কেন, যে কোনো সৎ রাজনীতিবিদের জন্যই মনোনয়ন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। নারী রাজনীতিবিদদের জন্য তো তা আরো কঠিন হয়’।

মানবাধিকার কর্মী ও নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোই নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে আন্তরিক নয়। তাদের দলের নেতৃত্বে ৩০ ভাগ নারী রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। তাহলে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারে এটা তারা কেন মানবে না? বাংলাদেশে নারীরা সক্রিয় রাজনীতিতে আছেন, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু নির্বানের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে তাদের বঞ্চিত করা হয়’।

তিনি বলেন, ‘নারীদের মনোনয়ন দেয়ার প্রশ্ন এলে টাকা-পয়সা আর পেশিশক্তির প্রশ্ন আসে। তবে আরো একটা খারাপ দিক হলো গত কয়েক টার্ম নির্বাচন হচ্ছে জোটগতভাবে। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল এখন নারীদের আসনগুলো জোটের শরিকদের মধ্যে ভাগ করে দিচ্ছে। এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়’।

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রীও নারী। শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দক্ষতা অর্জন করেছেন। খালেদা জিয়াও করেছেন। কিন্তু তারা রাজনীতিতে এসেছেন কিন্তু পরিবারের কারণে। একজন তার পিতার উত্তরসূরী হয়েছেন, আরেকজন তার স্বামীর। নারীর ক্ষমতায়ন যে হচ্ছে না, তা নয়। তবে সেটা সার্বিকভাবে নয়। তাই আমরা দেখি, সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেয়া ও পাশ করে আসা নারীর সংখ্যা নগণ্য। আর এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সবার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে’।

Powered by themekiller.com