ঢাকা রির্পোট ঃ
ভিকারুন্নিসার নবম শ্রেণীর ছাত্রী অদিত্রি অধিকারী (১৪) ক্লাসের পরীক্ষায় মোবাইলে নকল করায় ছাত্রীর বাবা-মাকে ডেকে অপমান করেছিল প্রিন্সিপাল। তা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে মেয়েটি। আর এই আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্কুল কর্তৃপক্ষ আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।’
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করছেন স্কুলের সামনে। তারা বিক্ষোভে অভিযুক্ত শিক্ষকের অপসারণ দাবি করেন।
এর আগে রবিবার ক্লাসের পরীক্ষায় মোবাইলে নকল করায় নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীর বাবা-মাকে ডেকে অপমান করেছিল ভিকারুন্নিসার প্রিন্সিপাল। তা সহ্য করতে না পেরে সোমবার ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে সেই ছাত্রী।
ওই ছাত্রীর নাম অদিত্রি অধিকারী (১৪)। সে ভিকারুন্নেসা স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল বলে জানা গেছে।
ঢামেক হাসপাতালে অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রোবাবার ছিল অরিত্রীর ক্লাস পরীক্ষা। সে ভুলবশত মোবাইল ফোনটি সঙ্গে নিয়ে যায়। পরীক্ষা চলাকালে সেটি দেখে ফেলেন ক্লাসের একজন শিক্ষক। তিনি মোবাইল ফোনটি জব্দ করেন্ এবং তাকে পরীক্ষা হল থেকে বের করে দেন।’
সোমবার আবার সকালে পরীক্ষা দেয়ার জন্য স্কুলে যায়। কিন্তু তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয় না স্কুল কর্তৃপক্ষ। তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ অরিত্রির বাবা-মাকে স্কুলে আসতে বলে। বাবা-মা দু’জনই স্কুলে যায়।
স্কুল অধ্যক্ষ তাদের জানিয়ে দেন, অরিত্রি পরীক্ষায় মোবাইলে নকল করছিল। তাকে স্কুল থেকে টিসি দেয়া হয়েছে। তখন অরিত্রির বাবা-মা স্কুলের শিক্ষকদের অনেক অনুরোধ করেন টিসি না দেয়ার জন্য। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো কথা না শুনে অরিত্রিকে স্কুলে রাখা যাবে না বলে জানিয়ে দেয় এবং তাদেরকে শাসান। এ অপমান সইতে পারছিল না অরিত্রী।
অদিত্রির বাবার সহকর্মী মবিনুর রহমান জানান, ‘বাবা হয়ে এই অপমান সহ্য করতে না পেরে মেয়ের সামনে কেঁদে ফেলেন। বাবাকে অপমানের বিষয়টি হয়তো মেনে নিতে পারেনি। পরে সে বাসায় ফিরে তার ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় এবং ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করে। পরে তাকে বাহির থেকে অনেক ডাকাডাকি করেও দরজা না খোলায় পরে দরজা ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করা হয়। প্রথমে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
এ ঘটনায় তার পরিবার স্কুল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন।
অরিত্রির বাবা দীলিপ অধিকারী অভিযোগ করে বলেন, ‘স্কুল কতৃপক্ষ তাদের জানায় অরিত্রি পরীক্ষায় মোবাইলে নকল করেছে। বড় ধরনের অপরাধ করেছে। তাকে স্কুলে রাখা যাবেনা। তখন আমি এবং অরিত্রির মা অনেক অনুরোধ করি তাকে টিসি না দিয়ে আরেকবার সুযোগ দিতে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
অরিত্রিকে আরেকবার সুযোগ দিলে হয়তো আমার মেয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতো না। অনেক অনুরোধ করা সত্বেও তারা আমাদের কথা রাখলনা। মেয়ের সামনে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে শিক্ষক অকথ্য ভাষায় বকাবকি করেন। তা হয়তো মেয়ে সহ্য করতে পারেনি।’
অদিত্রীর বাবার নাম দিলীপ বড়ুয়া। তাদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলায় এবং অদিত্রি তার পরিবারের সাথে শান্তিনগরে থাকতো। তার বাবা একজন কাস্টসম (সিএন্ডএফ) ব্যবসায়ী।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ বক্সের ইনচার্জ (এসআই) বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি পল্টন থানায় জানানো হয়েছে।
পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আতাউর রহমান জানান, স্কুল ছাত্রী আত্মহত্যা করছে, এই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আমি হাসপাতালে আছি। বিস্তারিত পরে জানা যাবে।