Breaking News
Home / Breaking News / সুইয়ের ফোঁড়ে সুতায় বুনবে স্বপ্ন—-চাঁদপুরের সাবেক এসপি শামছুন্নাহার পিপিএম

সুইয়ের ফোঁড়ে সুতায় বুনবে স্বপ্ন—-চাঁদপুরের সাবেক এসপি শামছুন্নাহার পিপিএম

এম. আর হারুনঃ
রান্নাঘর থেকে সন্তান পালন। ঘরগেরস্তালি গোছাবে। সুইয়ের ফোঁড়ে সুতায় বুনবে স্বপ্ন। এই তো ছিল কয়েক যুগ আগের ঘটনা। সেই কাল পার হয়ে নারী এখন কাগজে-কলমে, মেধায় দক্ষ এবং যোগ্য হয়ে উঠছে। যোগ্যতায়, দক্ষতায় তেমনই দেখা মিলে শামসুন্নাহারের। শামসুন্নাহার গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার। পরপর সাতবার জাতিসংঘের পদকপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা শামসুন্নাহারের জীবনযুদ্ধের গল্প রইল মঞ্চের বাইরে পাঠকের জন্য।

২০০১ সালে বিসিএস পাস করে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করেন তিনি। মানিকগঞ্জ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পুলিশে চাকরি পাওয়ার পর প্রশিক্ষণের স্মৃতি হাতড়ান তিনি। ৫ মাস ১০ দিন বয়সের ছেলে স্বচ্ছকে বাবা-মায়ের কাছে রেখে তিনি প্রশিক্ষণ নিতে চলে যান। ছেলের কথা মনে হলে নীরবে অশ্রুপাত করেছেন। নিজের সঙ্গেই তার প্রতিজ্ঞা ছিল- প্রশিক্ষণে ভালো করতেই হবে। শেষ পর্যন্ত প্রশিক্ষণেও সেরা হন শামসুন্নাহার। ২০১৫ সালের জুনে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন তিনি। সৎ ও সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা বলেই তার সুনাম রয়েছে পুলিশ বাহিনীতে। ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০১৬’ প্যারেডে প্রথম নারী হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে ইতিহাস গড়েন এসপি শামসুন্নাহার।

মহানগর পুলিশ, রেঞ্জ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও র‌্যাবসহ পুলিশের ১৩টি দলের হাজারো সদস্যের প্যারেডে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি দেশজুড়ে প্রশংসিত হন। টানা চার বছর জাতিসংঘের শাখা অফিস ইতালিতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। জাতিসংঘ মিশনের মাধ্যমে পূর্ব তিমুর জাতীয় পুলিশের মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এরই ফাঁকে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রিও লাভ করেন। জাতিসংঘে দীর্ঘদিন উচ্চপদে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ ৭ বার জাতিসংঘ শান্তি পদক, প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল এবং ৩ বার আইজি ব্যাজপ্রাপ্ত হন তিনি। পুলিশ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা বদলে দেওয়ার জন্য কাজ করছেন তিনি। গাজীপুরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখানোর পাশাপাশি মাদক, নারী নির্যাতন আর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপসহীন শামসুন্নাহার সুখী ও সমৃদ্ধ একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকারবদ্ধ।

স্কুল মাস্টার বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া শামসুন্নাহার জর্জ-ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ছোটবেলায়। প্রাথমিক বিদ্যালয় পেরুনোর আগেই বাবা ভোলা মাস্টার ও মা আমিনা বেগমের দেখানো এমন স্বপ্ন লালন করতে থাকেন বুকের গভীরে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় তিনি পছন্দের আইন বিষয় পেলেন না, পেলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান। কৈশোরে দেখা স্বপ্ন হঠাৎ করেই পথ বদল করে। ভর্তি হলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানেই। এরই ফাঁকে বিএনসিসিতে নাম লেখান তিনি। তখন সেরা ১০ ক্যাডেটের একজন হিসেবে রাইডার ফ্লাইংয়ে সুযোগ পান। বিএনসিসিতে থাকার সময় প্যারেড করেছেন, ধরেছেন অস্ত্রও। তাদের পোশাক, নিয়ম-শৃঙ্খলা দেখে পুলিশ হওয়ার স্বপ্নে এবার তিনি বিভোর। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস দিলেন, উত্তীর্ণ হলেন। বিসিএস ক্যাডারে তার প্রথম পছন্দই ছিল পুলিশ। ভাইভা বোর্ডে তাকে প্রশ্ন করা হলো- পুলিশ অফিসার হবেন কেন? ঘুষ খাওয়ার জন্য? ভাইভা বোর্ডে শামসুন্নাহার বলেছিলেন- না, পুলিশ যে ঘুষ খায়-এ ধারণার বাইরে নিজেকে উপস্থাপন করার জন্য পুলিশে আসতে চাই। ভাইভা বোর্ডে প্রশ্নের জবাবের সে কথা রেখেছেন শামসুন্নাহার এবং তা শুধু কথার মধ্য দিয়ে নয়, কাজের মাধ্যমে।

Powered by themekiller.com