Breaking News
Home / Breaking News / শুধু শক্তি প্রয়োগ সমস্যার সমাধান না ——– ইয়াসামিন আক্তার

শুধু শক্তি প্রয়োগ সমস্যার সমাধান না ——– ইয়াসামিন আক্তার

যদি আশা করা হয় পুলিশী অ্যাকশন দিয়েই দেশের মাদক সমস্যার সমাধান করা হবে তাহলে সেই আশা কেয়ামত পর্যন্ত আশাই থেকে যাবে। এটা অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের মাঝে রয়েছে সচেতনতার অভাব। পৃথিবীর কোনো দেশেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে অভিযান চালিয়ে মাদক নির্মূল সম্ভব হয়নি। এর একমাত্র সমাধান হচ্ছে প্রোপার কাউন্সেলিং। যারা মাদক সেবন করে তারা কি মাদকের ক্ষতিকর দিক জানে না? ভালো মতই জানে। তবু নিজেদের জীবনকে তারা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়, কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেটা হয়, মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তি গুলো পারিবারিক বা সামাজিক জীবনে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখী হবার কারণে জীবনের প্রতি ভীতশ্রদ্ধ হয়ে মাদক গ্রহণে প্ররোচিত হয়। জীবনের প্রতি তাদের মায়া দয়া থাকে না। অন্যায় অপরাধের সাথে নিমিষেই জড়িয়ে পড়ে। কোনো অসামাজিক কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না। আবার অনেকে নেহায়েৎ জীবনকে উপভোগ করতে আনন্দ-ফূর্তির অংশ হিসেবে মাদক সেবন করে। এই মানুষগুলো যতদিন জীবনকে মূল্যায়ন করতে না শিখবে, ততদিন তারা ফিরবে না। মানুষকে বোঝাতে হবে তাদের জীবনের মর্মকথা। তারা কেন পৃথিবীতে এসেছে। এখানে তাদের দায়িত্ব কী। কোন কাজে তার সফলতা, কোথায় বিফলতা। এই জীবনই শেষ জীবন নয়। এরপরেও আরেকটি অসীম জীবন আছে, যেটা রচিত হচ্ছে আমাদের এই পার্থিব জীবনের কর্মকা-ের ভিত্তিতে। পৃথিবীতে আমরা সুখভোগ করতে আসিনি, পৃথিবী আমাদের পরীক্ষাকেন্দ্র। এখানে দুঃখ আসবে, কষ্ট আসবে। তার জন্য তো জীবনকেই ধ্বংস করে ফেলা চলে না। মানবজীবন আল্লাহর দেওয়া এক দুর্লভ নিয়ামত। আল্লাহ মানুষকে নিজ হাতে বানিয়েছেন। মানুষের মধ্যে আল্লাহর রূহ আছে। মানুষকে তিনি দায়িত্ব দিয়েছেন পৃথিবীকে শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করার। এটাই তার এবাদত। সুতরাং জীবনের লক্ষ্য ঠিক রেখে দৃঢ়তার সাথে সব ধরনের পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করতে হবে। তবেই জীবন হবে সার্থক, আল্লাহ পরকালে পুরস্কৃত করবেন। অন্যদিকে জীবনকে নিজ হাতে ধ্বংস করলে তার ইহকালের সাথে সাথে পরকালও শেষ হয়ে গেল।
জীবনের এই মর্মার্থ মানুষকে জানাতে হবে, উপলব্ধি করাতে হবে। তাহলে কেবল মাদক কেন, কোনো ধ্বংসকারী ফাঁদেই মানুষ পা দেবে না। অন্যদিকে এই ‘জীবনবোধ’ তৈরি না হলে হাজারো প্রচেষ্টাতেও কোনো সুরাহা হবে না। উদাহরণ- ফিলিপাইন। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট কোনোভাবেই মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে শেষাবধি হত্যার পথ বেছে নেন। তিনি অন্তত আড়াই হাজার মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে হত্যা করেন, যার বিরুদ্ধে জাতিসংঘকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। তাতে কি দেশটি মাদকমুক্ত হয়ে গেছে?
আল্লাহর রহমে আমরা দেশব্যাপী মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মত ক্ষতিকর পথে জীবন ধ্বংসকারীদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ‘কাউন্সেলিং’ এর কাজটি করে চলেছি। এক্ষেত্রে আমরা প্রশাসনসহ সমাজের সর্বস্তরের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
(লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)

Powered by themekiller.com