একজন অশিক্ষিত মানুষের সাথে একজন শিক্ষিত মানুষের পার্থক্য হবে কোথায়? অবশ্যই চরিত্রে, মননে, চিন্তায়। মোটেও পোশাক আশাকে নয়। অশিক্ষিত মানুষ আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপরের মত জীবনযাপন করবে। পশুর মত আহার- নিদ্রা করেই জীবন পার করে দেবে। সমাজের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করবে না। দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার চেতনা তার মধ্যে থাকবে না। অন্যদিকে শিক্ষিত ব্যক্তি সমাজ নিয়ে ভাববে, বিশ্ব নিয়ে ভাববে, মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণ নিয়ে ভাববে। জীবনকে উৎসর্গ করবে মানুষের কল্যাণের জন্য। আর এ কারণেই তিনি হবেন সম্মানীত। এখানেই শিক্ষার মাহাত্ম্য।
কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ব্যর্থতায় তেমন শিক্ষিত মানুষ আমরা তৈরি করতে পারছি না। যে শিক্ষিত মানুষ তৈরি হচ্ছে তারা অশিক্ষিত মানুষের চাইতে আরও বহুগুণ ভোগবাদী, বহুগুণ আত্মকেন্দ্রিক, বহুগুণ স্বার্থপর। এরাই খাদ্যে বিষ দিচ্ছে, ওষুধে ভেজাল দিচ্ছে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে, লুটপাট করছে,দুর্নীতির নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে যাচ্ছে। যেন অশিক্ষিত চোরকে শিক্ষিত চোরে রূপান্তর করাই অসাধু শিক্ষিত ব্যাক্তির শিক্ষার উদ্দেশ্য! শিক্ষা হয়ে গেছে পণ্য, শিক্ষকরা দোকানদার, ছাত্ররা কাস্টমার। ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক এখন লেনদেনের সম্পর্ক।এটাকে বানিজ্য বললে ভুল হবে কিনা জানিনা। ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপড়া শিখছে অর্থ অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে। তার পরিণতিও কিন্তু এড়ানো যাচ্ছে না। শিক্ষকরা ছাত্রদের হাতে মার খেয়ে, অবরুদ্ধ হয়ে, অপমানিত হয়ে এই অপশিক্ষার মাসুল গুনছেন। শিক্ষকের প্রথম কর্তব্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীকে তার জীবনের লক্ষ্য বুঝিয়ে দেওয়া। কেন সে শিক্ষা অর্জন করবে? এতে তার নিজের কী লাভ, জাতির কী লাভ, ইহকালে কী কল্যাণ, পরকালে কী কল্যাণ। এটাই হওয়া উচিত একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের প্রথম পাঠ। এখানে অন্ধকার রয়ে গেলে সেই শিক্ষার্থীর সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত মেধাও অর্থহীন হয়ে যেতে পারে, জাতির ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমনটা বর্তমানে হয়েছে।
একজন শিক্ষার্থীকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে- শিক্ষা হচ্ছে আলো। এই আলো আমাকে পথ দেখাবে। আমি সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় বোধসম্পন্ন মানুষ হয়ে গড়ে উঠব। শিক্ষা হচ্ছে জ্ঞান, যে জ্ঞান নিজেকে চিনতে সহায়তা করবে, জীবনকে উপলব্ধি করতে সহায়তা করবে, জীবনকে সফল করার উপায় বলে দেবে।
জ্ঞানের সাথে স্বার্থের মিশ্রণ জ্ঞানকে বিষাক্ত করে দেয়। বর্তমানে সেটাই হয়েছে। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কম নেই, লক্ষ লক্ষ শিশু প্রতি বছর শিক্ষাজীবনে প্রবেশ করছে, লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণী শিক্ষা জীবন শেষ করছে, শিক্ষিত হচ্ছে বা আধা শিক্ষিত হচ্ছে। যারা মেধা মননে শিক্ষিত হচ্ছ তারাই ডাক্তার হচ্ছে, ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে, শিক্ষক হচ্ছে, জজ ব্যারিস্টার হচ্ছে, আমলা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মানুষ তৈরি হচ্ছে না। স্বার্থের মিশ্রণে তাদের জ্ঞান হয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত। আমাদের মনে রাখতে হবে শিক্ষাই জাতীর মেরুদন্ড। এ দেশের প্রত্যেকটা মানুষ যদি শিক্ষারর আলোয় আলোকিত হয়ে সমাজ ও দেশের কাজ করে তাহলে অশিক্ষিতের হার শুন্যের কোঠায় চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা একটি শিক্ষিত জাতী পাবো, এমনি কি প্রতিটি ঘরে ঘরে শিক্ষারর মান প্রসারিত হবে। অবহেলা ও অসচেতনায় আমাদের দেশ তথা আমরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রয়েছি। সচেতনতার অভাবে শিক্ষা তাদের জীবনকে আলোকিত করতে পারছে না।
(লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)