অক্ষরবৃত্ত ছন্দ (৮+৬)
শিরোনাম – কালের প্রভাবে
কলমে – মোঃ ইসহাক মিয়া
কালের প্রভাবে আজ কত কি বিলীন,
সবুজ শ্যামল গ্রাম বিটপী বিহীন!
মানুষ ছিল কত না সহজ সরল,
এখন সবারে হেরি ভিতরে গরল।
দল বেঁধে হুক্কা টেনে,বসে বাংলা ঘরে,
বলত কিচ্ছা,শোনত,সবে মজা করে।
বদল দিত কথায়,একে অন্যে স্থান,
তুচ্ছ নথি,তার চেয়ে মহার্ঘ জবান।
মেজবানি দাওয়াতে দশ গাঁয়ে মিলে,
পদ্ম পাতা সানকিতে ভোজ খুশ দিলে।
নেই প্রীতি একতার হয়ে গেছে ক্ষয়,
কারো তরে কারো নেই একটু সময়।
নিত্য প্রয়োজন ছিল যাহা,আজ স্মৃতি,
হারিয়ে গেছে বিশ্বাস সুমধুর প্রীতি।
জ্বালিত খাক প্রদীপ,দিয়ে কেরোসিন,
কোথা সেই কুঁড়েঘর অস্তিত্ব বিহীন।
আসবাবপত্র ছিল,মাটি দিয়ে গড়া,
মটকা সানকি হাঁড়ি ঘটি বাটি ঘড়া।
নকশী ছিকা কত কি রাখিত সাজিয়া,
একটি পাবে না আজ সারা গাঁ ঘুরিয়া।
তৃষ্ণা মিটাত কুয়ার ঠান্ডা মিষ্টি জল,
সময় পরিবর্তনে হয়েছে বিকল।
শিল পাটা ঢেঁকি চাকি বোনা পাটি হাতে,
উল্হা মুক্তা বাঁশ বেত নল খাঁগড়াতে।
নেই কোন কিছু,নেই বোনার মানুষ,
ভেবে ঐতিহ্য সবাই,নব পণ্যে খুশ।
রাখাল চরাতো গরু গেয়ে কত গীতি,
বাঁশের বাঁশির সুরে হাসিতে প্রকৃতি।
লাঙ্গল জোয়াল মই দিয়ে চাষাবাদ,
কত কি তখনকার আজ বরবাদ।
সবুজের সমারোহে অরণ্যে ঘেরা গাঁ,
চারিদিকে মরু নেয় রোদে করে খাঁ খাঁ।
আধুনিক ছোঁয়া লেগে সকল’ই সারা,
মায়াবী শ্যামল গ্রাম হইল শ্রী হারা।
নেইকো বনবাদাড়,ঝাঁক বাঁধা পাখি,
মিষ্টি সুরে ভোর সন্ধ্যা,উঠে নাকো ডাকি।
মরা গরুর ভাগাড়,নেই অবিচল,
নির্বিচারে ভাগে,চিল শকুনের দল।
খাল বিল নদী নালা সব আজ ভরে,
সেথা,প্রাসাদ দাঁড়িয়ে শীর উঁচু করে।
পাল তুলে ভাটিয়ালি গায় নাকো মাঝি,
নৌ পথে ইঞ্জিনে,সব যান চলে আজি।
মইশাল গাড়িয়াল গায় নাকো সারি,
ড্রাইরার সব কিছু নিয়েছে গো কাড়ি।
বধূকে আনে না আজ পালকিতে করে,
বেহারা ধরে না গান হুনহুনা সুরে।
কোথায় হারালো সেই প্রসাধনী আজ,
আলতা ফিতা কাচের কাকনের সাঁজ!
গাহেনা বিয়ে বাড়িতে দল বেঁধে গীত,
খেলে না হোলি কাদায় হয়ে কদাচিৎ।
নকশী কাঁথা,রুমালে হাতে কারুকাজ,
আবিষ্কার সেথায় ও ফেলে দিল বাজ।
যেথায় হেরি সেথায় নিত্য নব পণ্য,
আধুনিকায়নে মোরা তাতে হই ধন্য।