কবি ও কলামিস্ট আব্দুল্লাহ আল মামুন রিটন এর কবিতা ” ছেঁড়া পাঞ্জাবী”

” ছেঁড়া পাঞ্জাবী ”
– আব্দুল্লাহ আল মামুন রিটন

বিকেল হলেই শহরের সেরা একটি হোটেলের পিছনের টেবিলে চার পাঁচ জন বন্ধু মিলে চায়ের টেবিলে আড্ডা দিতাম৷ এটা করতাম SSC পাশ করার পর কলেজে নতুন যোগ দেবার সময়৷ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাবা এক দিনের ছুটিতে বাড়িতে চলে আসতো৷ তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকুরী করতেন৷ এরকমই এক বৃহস্পতিবার বিকেলে বাবা হোটেলের ঐ চায়ের টেবিলে হাজির ৷ ” রিটন, ওঠ বাবা৷ চল মর্কেটে যাব” ৷ আমার হাত ধরে হোটেল থেকে বের করে নিয়ে নওগাঁর সেরা মার্কেটে নিয়ে গেল৷ শহরের বিখ্যাত গার্মেন্টসে৷

” বাব, কি নিবা তুমি?” আমি বাবাকে বললাম৷ বাবা বললোঃ ” আমি না, তোর জন্য প্যান্ট কিনব৷ বগুড়ার ছেলেরা দেখলাম ব্লু জিন্স পড়ে বেড়াচ্ছে৷ দেখতে হেব্বী লাগে৷ তোকে পড়লে ওদের থেকেও বেশি ভালো লাগবে”৷
কথাটা বলেই তিনি দোকানদারকে বললেন “স্যাডল জ্যাক্স জিন্স আছে? নেভী ব্লু কালারের?”

দোকনদার একটি সুন্দর প্যান্ট বের করে দিলো৷ ঐ সময়ের পুরো ৯৯৯ টাকা দিয়ে তিনি একটা প্যান্ট আমাকে কিনে দিলেন৷ মনে মনে তো আমি মহা খুশি ঐ সময়ের সেরা ব্রান্ডের প্যান্ট হাতে পেয়ে৷

রাস্তায় এসে একটা রিক্সা ডেকে বাবা উঠলেন, আমাকেও উঠতে বললেন৷ কিন্তু তখন আমার অন্য একটি কাজ থাকায় বাবাকে প্যান্টের ব্যাগটা হাতে দিয়ে বললামঃ “বাবা তুমি যাও, আমি পরে যাব”৷

বাবা বললেনঃ আরে নাহ্ চল৷ প্যান্ট পড়ে তোকে কেমন লাগে আমি দেখবো৷”

“নাহ্ঃ বাবা,তুমি যাও৷ আমি এক ঘন্টার মধ্যেই বাসায় আসছি৷”

বাবা একটু ভেবে বললোঃ ” ঠিক আছে৷ জলদি আসিস৷ প্যান্ট পড়ে কেমন লাগে না দেখা পর্যন্ত আমি শান্তি পাবোনা বাবা৷”

রিক্সা ঘুড়িয়ে বাবা বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। মৃদু বাতাস বইছে তপ্ত দুপুরে৷ হঠাৎ প্রচণ্ড ধাক্কা লাগল আমার বুকে৷ মুচড়ে উঠলো হৃৎপিণ্ড ৷ হাল্কা বাতাসে বাবার পাঞ্জাবীর ঝুলটা পিছনের দিকে উড়ছে৷ পাঞ্জাবীর সেই উড়ন্ত অংশে লক্ষ্য করলাম অনেকটা ছিঁড়ে গেছে৷ সেখানে পরম যত্নে রিপু করা৷ তবুও বোঝা যাচ্ছে ওটা ছেঁড়া পাঞ্জাবী। মৃদু বাতাসে সেই ছেঁড়া রিপু করা অংশ উড়ছে৷ যদিও তিনি একজন বড় অফিসার ছিলেন৷ ছেড়া পাঞ্জাবী পড়া সেই বাবার হাতে একমাত্র পুত্র সন্তানের বাজারের সেরা “স্যাডল জ্যাক্স” জিন্স প্যান্ট৷

বাবা নেই৷ স্মৃতিটা আজো কাঁদায়……….