Breaking News
Home / Breaking News / ‘গণতান্ত্রিক সন্ত্রাস’ কেন বৈধ হবে?—– ইয়াসমিন আক্তার ।

‘গণতান্ত্রিক সন্ত্রাস’ কেন বৈধ হবে?—– ইয়াসমিন আক্তার ।

জঙ্গিবাদ বর্তমান পৃথিবীর এক প্রবল সংকট। বাংলাদেশ সরকার এ সংকট মোকাবেলায় আগাগোড়াই বেশ তৎপরতা প্রদর্শন করেছে। আমরা দেখেছি আফগানফেরতা বাংলাদেশিদের দ্বারা যখন এদেশে জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটল তখন থেকেই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জঙ্গিবাদের সঙ্গে দূরতম সম্পর্ক আছে এমন ব্যক্তিকেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে। হত্যাকারী তো বটেই, হুকুমের আসামিদেরকেও ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গ্রেফতার করা হয়েছে হাজারে হাজারে। প্রতিদিনের পত্রিকায় এসব সংবাদ আমরা দেখেছি। তারপর রমনা বটমূলে হামলা, সিরিজ বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, সিনেমাহল, আদালত প্রাঙ্গনে বোমা হামলার পথ বেয়ে হলি আর্টিজান পর্যন্ত জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারগুলোর জিরো টলারেন্স মনোভাব আমরা দেখেছি। এরপর এসেছে, জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো এবং তাদের আত্মঘাতী হওয়ার ধারাবাহিক ঘটনা-পরিক্রমা। অক্টোবর ২০১৮-তেও এমন ঘটনা ঘটছে।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই যে কঠোর মনোভঙ্গি তা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বজ্ঞান ও দায়বদ্ধতারই প্রতিফলন। এই অবস্থান অবশ্যই আশা-জাগানিয়া।
আমাদের সংবিধানের ২৭ নম্বর আর্টিকেলে বলা আছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। আইন যদি কারো ক্ষেত্রে কঠোর কারো ক্ষেত্রে নমনীয় হয় তাহলে রাষ্ট্রের উপর নাগরিকদের আস্থা বিনষ্ট হয়। এর একটি উদাহরণ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটেই আমর দেখতে পাই। সেটা হচ্ছে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরূপ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। গত ৪৭ বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে দৃশ্যটা দেখতে পাচ্ছি সেটা হলো এখানে গণতন্ত্রের নামে সবাই ক্ষমতা দখল করতে চায়, ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। গণতন্ত্রের নাম দিয়ে করলে সব কাজই জায়েজ হয়ে যায়। মানবতা, মানবাধিকার, ন্যায়-অন্যায়, বৈধ-অবৈধের কোন বালাই থাকে না।
স্বাধীনতার পর থেকে বারবার বাংলাদেশে রাজনৈতিক কারণে বিপর্যকর পরিস্থিতি ও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হাজারো মায়ের বুক খালি হয়েছে, হাজারো সন্তান এতিম হয়েছে, দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি কারা সৃষ্টি করেছে? সেক্যুলার দলগুলো নয় কি? এই রাজনৈতিক দলগুলো কী পরিমাণ তাণ্ডব চালিয়েছে দেশে, কত লোক হত্যা করেছে, দেশের কত লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি করেছে সে চিত্র সকলের সামনে রয়েছে। বিস্মৃতিপরায়ণ বাঙালি বারবার প্রতারিত হয়েছে ভুলে যাওয়ার দরুন। তাদের সামনে দুটো বিষের পেয়ালা। একটা লাল আরেকটা নীল। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাঁচ বছর অন্তর যে কোনো একটি বিষের পেয়ালা তারা পান করবে। বিষ খাবো না – এমন চিন্তাও তাদের মনে জাগ্রত হয় না। তাদেরকে দিনরাত গণমাধ্যগুলো শেখাচ্ছে গণতন্ত্রের চর্চা করো, শান্তি আসছে না- আরো বেশি চর্চা করো। গণতন্ত্র কোনো গন্তব্য নয়, গণতন্ত্র একটি পথ। আজীবন এই পথেই চলতে থাকো। গন্তব্য তো এক মরীচিকা। এই সিস্টেমকেই তারা জীবন মনে করছে যেন এর বাইরে কিছু হতে পারে না। এই অন্ধত্ব, এই মূর্খতা, এই চিন্তা না করার প্রবণতা বাঁচিয়ে রেখেছে গণতন্ত্রের পুরোহিত রাজনৈতিক দলগুলো এবং তাদের ‘প্রোপাগান্ডা মেশিন’ গণমাধ্যমগুলো।
একটু পেছনে ফিরে যাই। আমাদের অনেকের মধ্যেই একটি প্রবণতা আছে যে, আমরা সবাইকে কোনো না কোনো খোপে ফেলে চিন্তা করি। আমি যদি বিএনপি কর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ে বিরুদ্ধে বলি ধরে নেওয়া হবে আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক। একইভাবে যদি গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে কথা বলি ধরে নেওয়া হবে আমি একাত্তরের চেতনাবিরোধী। আমরা এই গতানুগতিক চিন্তাপদ্ধতির উপরে উঠে যদি বিগত কয়েক বছরের ‘গণতান্ত্রিক সন্ত্রাস’ আর ‘ধর্মীয় সন্ত্রাস’ এর মধ্যে তুলনা করি তাহলে দেখব ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা গো-হারা হেরে যাবে গণতান্ত্রিক সন্ত্রাসীদের কাছে। ৬৩ টি জেলায় সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ

Powered by themekiller.com