Breaking News
Home / Breaking News / লাজু চৌধুরীর কবিতা ” আমি শতাব্দীর একটি অংশ “

লাজু চৌধুরীর কবিতা ” আমি শতাব্দীর একটি অংশ “

আমি শতাব্দীর একটি অংশ –
———————————লাজু চৌধুরী
কত কাল নিজেকে ভালোবাসা হয়নি–
প্রতিদিনই তো নিজেকে আয়নায় নিজেকে দেখি।
সত্যি কি নিজেকে দেখার মত দেখি।
ফাকা রাস্তা মধ্য রাতে জানালার পাশে এসে দাঁড়াই
প্রকৃতি ও পরিশ্রান্ত ক্লান্ত বিভোর।
মধ্য রাতে শেষ পযন্ত যে যার জীবনের গল্প মনের অজান্তেই ফেলে যায় মধ্য রাতে রাস্তার মোড়ে।

কত দিন নিজের পরিচর্যা করা হয়নি
কখনো নিজেকে ভালোবাসি কিনা জানি না
নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন রাখি।
মাঝে মাঝে প্রিয়ো সময় গুলো কঁচের চুড়ির মত ভাঙ্গতে শুরু করে।

আজ হঠাৎ করেই অন্য দিনের মত নয় —–
মনকে স্থীর করে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম।
বুঝতে পারছি মনের ভিতর ভূমিকম্পন হচ্ছে।
আয়নার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি এক পলাতক ছায়া আমাকে উদেস্য করে বলছে ছেড়ে দিব ছেড়ে যাবো —
তোমার ভিতরের আয়নাটা ভেঙ্গে যায়নি বদলে ফেলে যায় না কিছু।

কিন্তু ভাঙ্গনের শব্দ শুনি কান পেতে
এ জীবন থেকে জলের মত গড়িয়ে পড়ছে অনেক গুলো সময়।
কাল সেতো কালই নতুন করে ফিরে আসে না।
সময়ের সাথে বদেছি কিন্তু কাল আমার সাথেই আছে।
আয়নায় নিজেকে প্রশ্ন করলাম কত বছর চলে গেলো এ জীবন থেকে। এ জীবন থেকে কিসের যেন হেজিটেশন
আয়নায় নিজেকে দেখলে মনে হয় ।
বুকের কাছে হাত রাখলাম কম্পন হচ্ছে কানে—-

আয়নার সামনে দাঁড়ালেই কষ্ট ছুঁয়ে মনে
পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর সম্পর্ক হলো তুমি আর আমি।
যদি পিছনে ঘুড়ে দাঁড়াই সেই 25 সে মার্চের রাত যার কাছে
ছিলো কিশোরী প্রজাপ্রতির মত উড়ে বেড়ানোর মত আমার
মন।

আর মন তাকে সাহস যোগাতো শ্লোগানে শ্লোগানে মুখোরিত
হতো রাজ পথ।
ভীষণ অভিমান করে বলেছিলাম আমার মন আমাকে দাও?
কেমন যেন শুন্য শুন্য মনে হয় এই দেহে মন নেই
অলস দুপুরে বিছানায় শুয়ে আছি আবারও মিছেলের ঢল
জানালার পর্দা সড়িয়ে দেখলাম উৎতাপ্ত দূপুর সারা শহর জুড়ে আন্দোলন।
দৌড়ে ব্যেলকণিতে এলাম ওখানে আমার মন —
ভীষণ রেগে গিয়েছিলাম একদম মিছেলের মুখোমুখি এসে
দাঁড়ালাম রোদে পুড়ে তামাটে হয়েছে গায়ের রং ঝলসানো
চোখ।
ভীষণ বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকালো —–
আমার একটাই কথা এ দেহে মন নেই।
মন চাই ফিরিয়ে দাও।
র্শাটের বাম পকেটে হাত রেখে বললো এই খানে মন আছে
এটা দেওেয়া যাবেনা আমার বেঁচে থাকার সংগ্রাম।
এই মন আমাকে সাহস দিচ্ছে।
খুব রেগে গিয়ে বললো তোমার তো সব আছে ঘর দরজা জানালা আর পরিবার আমার তো কিছুই নেই এই মন ছাড়া।

আপেক্ষায় থাকো এই মন তোমার দরজায় এসে কড়া নাড়বে।
মধ্য রাতে চিৎকারের শব্দ দৌড়ে ব্যালকোণিতে এলাম চাঁদের আলোর ঝলকানিতে রাজপথে চেনা মুখ গুলো দেখতে পাচ্ছি ওরা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে সবুজকে
ধরে নিয়ে গেছে।
আমি খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম কিশোরী বয়স ছটফট করছি খাচাঁয় বন্দী থাকা পাখির মত।

হঠাৎ গুলির শব্দ হলো ওরা সবুজ কে কোলে করে নিয়ে
আমার কাছাকাছি এলো বেলকোণিতে দাঁড়িয়ে আছি
সবুজের বুক থেকে তাজা রক্ত পড়ছে তখন বূঝতে বাকী রইলো না এ মনেরও মৃত্যু হয়েছে।
তারপর কি হয়েছে জানি না —-
শুধু চোখ মেলে দেখি পুরো পরিবার আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
বাবা বললেন কি হয়েছে তোর
আমি বাবার কাছে প্রশ্ন রাখলাম বাবা গতকাল রাত কি
25 শে মার্চ ছিলো?
বাবা বললেন হুম।

যার স্পর্শে মিথ্যার আশ্বাস নেই তাকে ভোলা যায় না।
অতঃপর প্রতিটি রাস্তায় মোড়ে অলিতে গলিতে ঝড়ে যাওয়া অনেক যূবকের তাজা রক্ত দিয়ে এঁকে দেই নীঃশপ্রানহীন বাড়ির দেওয়ালে এইখানে মন নেই।
তাই আমি আমার পুরনো বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাইনি
সবাই ডুবে গেছে নিজস্ব জীবনে।

তাই আয়নায় নিজেকে ভালো মত দেখা হয়না।
তাই আমি শতাব্দীর কৃষ্ণচূড়া গাছ হয়ে এই বাড়ির ব্যালকোনিতে আছি ইতিহাসের একটি পৃষ্ঠা
ডুবে আছি জনকোলাহল পূর্ণ পৃথিবীর ভিরে ——
আমি শতাব্দীর একটি অংশ।
লাজু চৌধুরী

Powered by themekiller.com