Breaking News
Home / Breaking News / দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

কাকের মননে বেঁচে থাকা
মাজহারুল ইসলাম
১১/০১/২০২৩

তোমাকে এক চিলতে মিথ্যে ভালোবাসার অপরাধে
কত দুপুর গিলে খেয়েছে সন্ধ্যার গোধূলি !
শব্দচাষী নই –
তবুও কত সে চেষ্টা
কত খাটাখাটি, কত ঘাটাঘাটি , কত ধার কর্জ ।
নিত্য নতুন কতশত কবি’র প্রেমে পড়া
কত কী যে হলো -একটা কবিতা হলো না, মনের মতো !

কৈশোর গেলো !
যৌবনের গোটাকয়েক সিঁড়ি মাড়িয়ে
অবশেষে জমানো অনুভূতি একে একে
ডুবে গেলো নৈঃশব্দের অতল গহ্বরে ।

রোজ তাই ক্লান্ত দুপুর, ঘুম ঘুম চোখ,
নিঃসঙ্গ দাঁড়কাকের মতো গুটিসুটি
গা লাগিয়ে বসে থাকি আরাম কেদারায় ।

কতটা ভালোবাসা বুকে পুষে মরন হলে
‘কাক আত্মা’ মেলে পর জনমে !
সেই ভাবনায় আয়ুষ্কাল ক্রমশ বেড়েই চলে ,
ধীরে ধীরে ‘কাক আত্মা’ নিকট থেকে নিকটতর হয়।
আমি ও মজে থাকি আধ্যাত্মিক কাক প্রেমে !
নতুন আত্মার উন্মাদনায় মানুষ নয়,
এ যেনো বেঁচে থাকা কাকের মননে !

(সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিত) রামপুরা, ঢাকা।

——————————————–

বইছে শৈত্যপ্রবাহ
বন্দনা বড়ুয়া
11/01/2023

হঠাৎ শৈত্যপ্রবাহ বইছে যেন অহরহ
অবিরাম অবিরল ধারায়
প্রকৃতি যেন আজ বিধ্বস্ত নিরীহ জীবন বিপর্যস্ত
ধরিত্রী আজ দৈবের নিকট অসহায়।

হাড়কাঁপানো প্রবল ঠাণ্ডায় ঠকঠক যেন সব কাঁপায়
চতুর্দিকে দৃঢ় কুয়াশার আস্তরণ
শীতল সুদীর্ঘ রাত্রি নির্দয় কখন হবে সূর্যোদয়
প্রতীক্ষায় থাকে সহস্র বিপন্ন প্রাণ।

ছিন্নমূল জীবন গ্রাম নগরীতে প্রাণী কূল অরণ্য পর্বতে
কাটায় বিনিদ্র রজনী দূর্বিসহ
মাথার উপর টুপটাপ দূর্বার গতিতে ঝুপঝাপ
হিমেল হাওয়া বড়ই ভয়াবহ।

দরিদ্রের প্রাণান্ত দিনাতিপাত বৈষম্যের কষাঘাত
ছিন্ন হয়েছে বাঁচার মোহ
মানে না ক্ষুধার প্রস্রবণ নেই স্থায়ী অন্নসংস্থান
সর্বত্র বিরাজমান সংকট ও বিদ্রোহ।

তীব্র ক্ষুধার অন্বেষণে দৃষ্টিতেও শূন্যতা আঘাত হানে
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস
কারো বা নাই আবাসস্থল কারো বা বাস বৃক্ষতল
বড়ই আতংকগ্রস্ত তাদের হৃদয়াকাশ।

তীব্র শীতের কবল হতে তারাও চায় পরিত্রাণ পেতে
খড়কুটো জ্বালিয়ে করে উত্তাপের প্রতিবিধান
প্রকৃতির রোষানল আগুনটাই কেবল সম্বল
এভাবেই খোঁজে তারা জীবনের সন্ধান।

প্রভাবশালীর সুদৃষ্টি বর্ষণে উদারতার আকর্ষণে
চির বঞ্চিত পায় প্রাণ স্পন্দন
এসো,এসো সবে এগিয়ে দাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে
রক্ষা পাক অমূল্য প্রাণ।

বন্দনা বড়ুয়া

——————————————–
মানুষ চেনা দায়

দীপঙ্কর দত্ত

রোজ অফিস ফেরতা পথে শিয়ালদা স্টেশনের কাছে ফ্লাইওভারের নিচে সবজীর বাজারটা সারি। তারপর ট্রেন ধরে সোদপুর। অভ‍্যাসটা অনেক বছরের। এই সবজি কিনতে গিয়েই হরেনের সাথে পরিচয়। ওর কাছেই বেশির ভাগ সবজি কিনি। পাশের চায়ের দোকানে এক ভাঁড় চা
খেয়ে সোজা স্টেশনে। ওর নাম হরেন মন্ডল। বয়স বছর পঁয়ত্রিশ হবে। গাট্টাগোট্টা চেহারা। আদি নিবাস সুন্দর বনের সামসেরগঞ্জে।
কালিন্দী নদীর ধারে। ওপাড়েই বাংলাদেশের সুন্দরবন। বাঘের উৎপাত এ অঞ্চলে খুব বেশি। এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকা নদী, খাড়ি তে মাছ আর কাঁকড়া ধরা। আর চাষবাস। প্রতি বছরই বাঘের পেটে যায় এই গ্রামের মানুষ।
হরেনের ও জীবন কাটতো ঐ ভাবেই। বাঘের সাথে সাক্ষাৎ ও হয়েছে বার দুয়েক। বছর চারেক আগে মীন ধরতে গিয়ে ওর এক সাথী বাঘের পেটে যায়। সে দলে হরেন ও ছিল। ভাগ‍্যের জোরে বেঁচে ফিরেছে। আর নদী মুখো হয় নি। জীবিকার সন্ধানে সেই বৌ ছেলে নিয়ে কলকাতা আসা। গাঁয়ের একজন তাকে
ফ্লাইওভারের নিচে একটা ঝুপরির ব‍্যবস্থা করে দেয়। তখন থেকেই সবজি নিয়ে বসা। চা খেতে খেতে হরেনের সাথে গল্পও হত। কেন জানিনা হরেন উপযাচক হয়ে তার অনেক কথাই বলতো।
এখানে বৌ আর ছোট্ট মেয়ে নিয়ে ওর সংসার। বিক্রিবাট্টা ভালই হয়। প্রথম প্রথম মানাতে কষ্ট হত। এখন ঝুপরি জীবন সয়ে গেছে। গাঁয়ের আরও দুটো পরিবার আছে এখানে। তাদের সাথেই
বেশি সময় কাটে। এখন শহুরে জীবন রপ্ত হয়ে গেছে। ভোরে উঠেই পাইকেরি বাজারে গিয়ে মাল কিনে আনে। তারপর সারাদিন ধরে চলে বেচা। ঝুপরির দোরেই মালপত্র সাজিয়ে বসে। ছুটির দিনগুলোতে বেচা কম হয়। ক্রেতা বেশিরভাগই আমার মত ডেইলি প‍্যাসেঞ্জার। শিয়ালদার এই বাজারটায় বেশ সস্তা দরে সবজি মেলে।
করোনার সময় ব‍্যবসাটা বেশ মার খেয়েছিল। এখন আবার ঠিক হয়েছে। বছরে একআধ বার দেশে যায়। কয়েকদিন কাটিয়ে আসে। দেশে ভাই চাষবাস করে। ভাগের চাল টা নিয়ে আসে।
বছর পাঁচেক হল রিটায়ার করেছি। কলকাতা খুব একটা যাওয়া হয় না। হরেনের কাছ থেকে সবজী কেনারও আর প্রশ্নই নেই। হরেন কে ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায়।
এবছর নভেম্বর মাসের গোড়ায় সপরিবারে সুন্দরবন ঘুরতে গিয়েছিলাম। যে ট্রাভেল কোম্পানির সাথে গিয়েছিলাম, তারা রাতে থাকার ব‍্যবস্থা করেছিল পাখিরালয়ের এক হোটেলে। দু রাত তিন দিনের ট‍্যুর। গদখালি থেকে লঞ্চে যাত্রা শুরু। প্রথম দিনে লঞ্চ যাত্রা শেষে পাখিরালয়ে হোটেলে উঠেছি। হাতে সময় আছে তাই বাজার ঘুরতে এসেছি। লোকে লোকারন‍্য। সবাই ট‍্যুরিস্ট। হরেকরকমের দোকান। চা পান করব বলে এক চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা আর বিস্কুটের অর্ডার দিয়েছি। দোকানের একটি ছেলে চা আর বিস্কুট দিয়ে বললে দামটা ঐ ধারে মালিক বসে আছে ওখানে দিন। চা খেয়ে দাম দিতে গিয়ে দেখি হরেন বসে আছে।
চিনতে কষ্ট হয়নি। এক লহমাতেই চিনেছি। পরিবর্তন ও তার খুব একটা হয়নি। চেহারা একই আছে। চুল দুএকটা সাদা হয়েছে। আমি বললাম হরেন তো। হরেন আমাকে দেখে যারপরনাই চমকিত। সোজা দোকানের টাট থেকে নেমে এসে বললে বাবু আপনি এখানে। বললাম তোমাদের সুন্দরবন বেড়াতে এসেছি। অন‍্য একজনকে ক‍্যাশ সামলাতে বলে সে আমাকে নিয়ে বসালে পাশের চেয়ারে। প্রথমেই বললাম কলকাতা ছেড়ে এখানে কবে এলে। উত্তরে বললে সব বলব। আগে কিছু খান। এই বলে পাশের দোকানের এক কর্মচারী কে বললে একটা চিকেন রোল বানাতে। আমি না না করে উঠলুম। এখনই তো হোটেলে গিয়ে ডিনার করতে হবে। সে কোন কথাই শুনলে না। হরেন আরম্ভ করলে তার কথা। কথাপ্রসঙ্গে জানলুম পাশের রোলের দোকানটিও তার।
বছর তিনেক হল কলকাতা ছেড়েছে। গাঁয়ের জমি বিক্রি করে আর ব‍্যবসা থেকে জমানো টাকায় এই দুটো দোকান কিনেছে এখানে। এখানেও তার ব‍্যবসা চলছে ভালো। মেয়েটাকে স্কুলে ভর্তি করেছে এখানেই। চায়ের দোকানের পিছনেই দুটো ঘরে তারা থাকে। কলকাতা ছাড়ার কারণ জিজ্ঞেস করাতে সে বললে বাবু বাঘের হাত থেকে বাঁচতে কলকাতা গিয়েছিলুম। কিন্তু বছর কয়েক কাটাতে বুঝলুম শহর টা নেকড়ে তে ভর্তি। একটুরাত হলেই নেকড়েরা ঝুপড়ির আশেপাশে ভীড় করতো। ওগুলো তো মানুষ নয় বাবু। ওরা মেয়েমানুষ খাওয়া নেকড়ে। বনের বাঘ বেটাছেলে, মেয়েছেলে বোঝে না। পেলেই খায়। আর কলকাতার নেকড়ে রা মেয়েমানুষ খায়। নেকড়েদের প্রথম চিনেছিল গিন্নিই। সে আর থাকতে চাইল না ওখানে। হাতে কিছু টাকা জমে ছিল আর গাঁয়ে আমার ভাগের জমিটা বেচে এইখানে দোকান করলুম। সেই সুন্দরবনেই ফিরে এলুম।
একটা কথা বাবু বলি বাঘ চেনা যায় কিন্তু মানুষ চেনা বড় দায়। কথা বলতে বলতে রাত নটা বেজে গেল। হরেন কে বললুম রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে। সবাই চিন্তা করবে। কালও রাতে এখানেই থাকব। তোমার সাথে কাল কথা হবে। হরেন পকেট থেকে মোবাইল টা বার করে আমার নম্বর টা চাইল। ও আমার নম্বর টা সেভ করে একটি মিস কল দিল। পরের দিনও হরেনের সাথে দেখা করে এলাম।
এখন মাঝেমধ্যে হরেনের সাথে ফোনে কথা হয়। হরেনের ঐ কথাটা আজও ভুলতে পারিনি। বাঘ চেনা যায় কিন্তু মানুষ চেনা দায়।
______
পোস্ট 11/01/ 2023
কলকাতা।

——————————————–

নিদারুণ শীতে
চৈতন্য কুমার বর্মণ
১১/০১/২০২৩
***************************************
তোমরা স্বপ্ন বুনে ঘুমিয়েছ লোমশ কম্বলের তলায়
নিদারুণ শীতের শিরশিরানি পেয়েছ কি টের
ভ্রমরের আল ফোটানোর চেয়ে বিশ্রী কামড়
দাঁতগুলো শব্দ করে ওঠে ট্রেনের চাকার মতো
অবশ হয়ে আসে সমগ্র গতর
কুকুরকুন্ডলীর মতো শুয়ে স্বপ্ন দেখতে ওরা ভুলে যায়
সারাদিনের অভুক্ত পেট ঘোঁত ঘোঁত করে
নিস্তেজ হয়ে আসে চোখের তারা
এতটুকূ রাত
ওদের কাছে মনে হয় দীর্ঘ মন্বন্তর—
হয়তো তোমরা ঘুম থেকে উঠে দেখতে পাবে
তোমাদের এই স্বপ্নবোনা মাঠে
ওরা নির্ঘাত মরে পড়ে আছে ।।

——————————————–
শিরোনাম :- ” ‘ কাবা ‘ – ‘ কাশি ‘ গঙ্গা – যমুনায় ”
কলমে:- সন্দীপ ঘোষাল
তারিখ :- ১১ /০১ /২০২৩
==========================
আকুল কান্না বাঁধবো মাটির পথে
ইচ্ছা মানত জনম থেকে তাই ।
মাঝ দুপুরে জ্বলন্ত চিতা সাথে
থৈ থৈ হরিবোল নিতাই ।
#
দরজা চোখের বন্ধ আজও কপাট
জমাট বাঁধা আঁধার হাঁটছে কাঁপন ।
জাপ্টে বুকের যৌবনটা ভরাট
গোপন রাখবে – আর সে কতক্ষন ।
#
রাষ্ট্র বিন্দু নিচুর থেকে নিচু
রক্ত মিশে বিন্দু মুছে যায় ।
আজ যে মাটি ; রাষ্ট্র থেকে উঁচু
‘ কাবা ‘ – ‘ কাশি ‘ গঙ্গা – যমুনায় ।।

——————————————–
চরিত্রহীন
শ্যামল ব্যানার্জী
১১/০১/২০২৩

হ্যাঁ আমি চরিত্রহীন..
পোষ্টারে পোষ্টারে দেওয়াল গুলো গেছে ছেয়ে,
দ্যাখোনি তা।
এক বেশ্যাকে ভালোবাসার কাহিনি।
এরপরও কি কোনো কথা থাকতে পারে?
আমি চরিত্রহীন সেতো অনেক দিন,
সহজ বাংলায় যাকে বলে, লম্পট দিশাহীন।
বহুদিন বোঝাবার চেষ্টা করেছি আমি,
বোঝোনি তোমরা.. সে দোষ আমার নয়,
তাইতো, আমি এক অর্বাচীন, মানিনি শর্ত যত দ্বিধা হীন।
আমি তো আমার মতন করে করেছি পৃথিবীর রচনা,
আসলে, ঘটনা মানতেই তোমরা পারোনা।
ঘটনাটা কি জানো, ওহোঃ বলবো কাকে?
তোমরা তো আসলে জড় পদার্থ এক অতি সাধারণ।
অন্ধের পিরিত যে না বোঝে তাকে বোঝাবো কেমন।
সঞ্চারী মেঘের আনাগোনা, বুকের পাঁজরে হাঁপর,
টালমাটাল এ মন,
কোথায় যাই?
অবশ্য, সে আছে একজন, যার কাছে,
শান্তির প্রলেপ খুঁজে পাই,
যদিও সে বেশ্যা এখন।
কি করবো বলো, আমি তো চরিত্রহীন
তোমারাই বলেছো বারবার,
চরিত্রহীন বলেই তো সেই বেশ্যা মেয়েকে দিয়েছি সিঁদুর, মর্যাদা
আর অঢেল ভালোবাসা।
এখন সে আমার ঘরের গৃহিনী।
এরপরও যদি কিছু কথা থাকে,
সে কথা থাক না বস্তা বন্দি.
দরকার কি মুখ পোড়ানোর,
আরও কিছু লোক তো আছে যারা ভালোবাসা.. মানে.. বোঝে।
আমি এক চরিত্রহীন.. মানুষকে ভালোবেসে,
এক বেশ্যাকে ঘরে এনেছি বলে যদি আপত্তির তোলপাড় হয়,
সে সমস্যা তোমাদের .,
আমার নয়।।
আমি শুধু জানি, ভালোবাসা মানে না কোনো কারণ,
শুধুই ভালোবাসে অকারণ।

Powered by themekiller.com