Breaking News
Home / Breaking News / কিংবদন্তি পেলের চির বিদায় এবং তার অজনা আরও প্রতিভার উপাখ্যান

কিংবদন্তি পেলের চির বিদায় এবং তার অজনা আরও প্রতিভার উপাখ্যান

কলামিস্ট আব্দুল্লাহ আল মামুন রিটনহ
প্রথমেই বলতে হয়-
ফুটবল ইতিহাসের তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি একে একে তিনটি বিশ্বকাপ জয় করেছেন। তার বাকি অর্জনের গল্পগুলো আরও দুর্দান্ত। লিগে সর্বোচ্চ ১১ মৌসুমে গোলদাতাদের তালিকায় শীর্ষে থাকার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এছাড়া তিনি ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩২ টি অফিশিয়াল দলীয় শিরোপাও জয় করেছেন।

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি তাকে শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে ভূষিত করে। অন্যদিকে, টাইম ম্যাগাজিন তাকে বিংশ শতাব্দীর ১০০ গুরুত্বপূর্ণ বাক্তিবর্গের একজন হিসেবে সম্মাননা দেয়।

প্রতিভার দ্যুতিতে সবার চোখ ধাঁধিয়ে তিনি শুধু ফুটবলই খেলে যাননি, এর বাইরে এই মহাতারকা আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শেষ করার পর আলোও ছড়িয়েছেন সিনেমায়, গানে। তাঁর জীবনীকারদের ভাষ্য অনুযায়ী, পেলের লেখা গানের সংখ্যা একশর বেশি।

তাঁর গানের একটি অ্যালবামও বিক্রি হয়েছে এক লাখ কপির বেশি। যেসব সিনেমায় পেলেকে দেখা গেছে, তার মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র ‘ভিক্টরি’ একটি।

রুপালি পর্দার সঙ্গে পেলের যোগাযোগ বেশ পুরনো। পেলে বড় পর্দায় প্রথম আসেন ১৯৬২ সালে। কার্লোস হুগো ক্রিস্টেনসেন পরিচালিত ‘কিং পেলে’ সিনেমায় অভিনয় করেন পেলে। ওই বছরই তিনি দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। পেলের জন্মস্থান ত্রেস কোরাকোস শহরের বর্ণনা দিয়ে শুরু হয় সিনেমার গল্প। এরপর সাও পাওলোর বাউরু ও সান্তোস শহরে পেলের তারকা হওয়ার গল্প তুলে ধরা হয় সিনেমায়।

এরপর ভিক্টরি সিনেমার শুটিং যখন শুরু হয় তখন চলচ্চিত্রাঙ্গনে খ্যাতির তুঙ্গে বলিউড অভিনেতা সিলভেস্টার স্ট্যালোন। তার সঙ্গে এ সিনেমায় পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেন পেলে। এ সিনেমায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের নাত্‍সী ও বন্দিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি ফুটবল ম্যাচের গল্প তুলে ধরা হয়। এই সিনেমায় আরও ছিলেন ববি মুরের মত পেশাদার কয়েজন ফুটবলার। অনেক জায়গায় সিনেমাটি মুক্তি পায় ‘এসকেপ টু ভিক্টরি’ নামে।

এই সিনেমায় যুদ্ধবন্দির ভূমিকায় অভিনয় করার সময় তিনি দারুণ মজা পেয়েছিলেন। বাইসাইকেল কিকে গোল করার একটি দৃশ্য আছে সেখানে, মূল চিত্রনাট্যে সেখানে অভিনয় করার কথা ছিল স্ট্যালোনের। কিন্তু ওইভাবে গোল করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। সে কারণে পরে তাঁকে গোল কিপার বানিয়ে দিয়েছিলেন পরিচালক। ভিক্টরিতে অভিনয়ের জন্য নিজেকে কত নম্বর দেবেন? মজা করে পেলে বলেছিলেন, অভিনেতা হিসেবে নিজেকে তিনি দশে দশ দেবেন।

এরপর ‘বার্থ অব এ লেজেন্ড’ পর্দায় আসে ২০১৬ সালে। কীভাবে বস্তির দরিদ্র ঘরে জন্ম নিয়েও নানা সংগ্রাম পেরিয়ে পেলে হয়েছেন ফুটবল দুনিয়ার কিংবদন্তী, সেই চেনা গল্পটাই সিনেমার পর্দায় নতুন করে বলেছেন পরিচালক মাইকেল ও জেফ জিম্বালিস্ট। এত গল্প থাকতে হঠাত্‍ কেন পেলের জীবনটাকেই বেছে নেওয়া হল? পরিচালক জিম্বালিস্টের জবাব, “জিনিয়াসদের বোঝার চেষ্টা করাটা আমার কাছে সব সময়ই রোমাঞ্চকর মনে হয়। পেলে সেই গল্প। এই গল্প শুধু পেলের গল্প।” সিনেমায় সংগীত পরিচালনা করেছেনভারতের অস্কারজয়ী সুরকার ও সংগীত পরিচালক এ আর রহমান।

এছাড়াও পেলে অভিনয় করেছেন ‘আ মার্চা’ (১৯৭২), ‘আ মাইনরমিরাকল’ (১৯৮৫), ‘হটসহট'(১৯৮৬) ছাড়া আরও কিছু সিনেমায়। এছাড়া ১৯৬৯ সালে ব্রাজিলিয়ান টেলিভিশনের ধারাবাহিক ‘ওস এস্ত্রানহোতে’ তিনি অভিনয় করেন। এছাড়াও ‘উজিসস্ত্রোনস’ (১৯৬৯), ‘সালভাদর দ্য পাতরিয়া (১৯৮৯)’, ‘দ্য ক্লোন’ (২০০১) এবং ‘স্ফিডি’ (১৯৯৮) ধারাবাহিকেও পেলে অভিনয় করেছেন। ২০২১ সালে ফুটবল সস্রাটকে নিয়ে নির্মিত ‘পেলে’ নামের ডকুমেন্টারি তৈরি করে নেটফ্লিক্স।

Powered by themekiller.com